ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ডেভিড ক্যামেরন: মুসলমানদের ব্রিটিশ মূল্যবোধ মেনে চলতে হবে

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১১
ডেভিড ক্যামেরন: মুসলমানদের ব্রিটিশ মূল্যবোধ মেনে চলতে হবে

লন্ডন: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, মুসলমানদের ব্রিটিশ মূল্যবোধ মেনেই ব্রিটেনে বসবাস করতে হবে, অন্যথায় সরকারি সব পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে বাধ্য হবে ব্রিটিশ সরকার।

জার্মানিতে মিউনিখে সিকিউরিট কনফারেন্সে শনিবার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের এসব কথা বলেন।



তিনি বলেন, ব্রিটেনে ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’-এর দর্শন ব্যর্থ ও পরিত্যজ্য হয়ে গেছে। বহুসংস্কৃতির ব্রিটিশ সমাজে পরমত সহিষ্ণুতার সেই ঐতিহ্য আজ নির্বাসিত।

ক্যামেরন বলেন, বাক স্বাধীনতা ও ধর্ম পালনের নিশ্চয়তা এবং গণতন্ত্র, সমঅধিকার ও বর্ণবাদ বিরোধিতা রাষ্ট্রীয়ভাবে যেখানে ব্রিটিশ সমাজের বিশ্বাসের জায়গা ছিল, ধর্মীয় চরমপন্থা ও জঙ্গিবাদের ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে সেটি আজ নির্বাসনে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিটেনের আজ প্রয়োজন একটি শক্তিশালী জাতীয় পরিচিতি, যা চরমপন্থার দিকে ব্রিটিশ নাগরিকদের আকৃষ্ট হওয়া থেকে বিরত রাখবে। ডেভিড ক্যামেরন অভিযোগ করেন, কতিপয় সংগঠন ‘ইসলামিক চরমপন্থা’ কে ব্রিটিশ সমাজে পরিকল্পিতভাবে উপস্থাপন করছে। তিনি বলেন কতিপয় মুসলিম গ্রুপ ব্রিটিশ সমাজের নিরাপত্তার কথা বলে সরকারি অনুদান নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু চরমপন্থা মোকাবেলায় কার্যকর কিছুই করছে না।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেন, ‘বহুসংস্কৃতি’র দর্শন শ্বেতাঙ্গ কমিউনিটিতে এমন কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা গোষ্ঠি তৈরী করেছে, যারা মনে করে মাল্টিকালচার‌্যালিজম ব্রিটিশ সমাজের শ্বেতাঙ্গদের প্রতি অবিচার করছে। এই ধারণা থেকেই শ্বেতাঙ্গদেরও কেউ কেউ বর্ণবাদ ও পরমত সহিষ্ণুতার বিপরীতে হাঁটছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অবশ্য স্বীকার করেন, ইসলাম ও ইসলামি চরমপন্থা একই বিষয় নয়।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র, সমঅধিকার ও ব্রিটেনের সংহতির পে কমিউনিটি গ্রুপগুলোর ঠিকমত কাজ করছে কি না, ভবিষ্যতে তা কঠোরভাবে নজরদারির মধ্যে আনা হবে।

ক্যামেরন বলেন, কতিপয় উগ্র চরিমপন্থি সংগঠন বাদে সব ব্রিটিশ নাগরিকই ব্রিটিশ মূল্যবোধ, বাক স্বাধীনতা ও সমঅধিকারের মূল মন্ত্রে বিশ্বাসী এবং এটি উপস্থাপন করারও চেষ্টা করছে বলে আমার বিশ্বাস। আর এটি করতে হলে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে অভিবাসী কমিউনিটি ব্রিটেনের ইতিহাস ঐতিহ্য জানতে ঠিকমত ইংরেজী ভাষাজ্ঞান অর্জন করছে। এ বিষয়ে এখন ব্রিটেনের স্কুলগুলোতে একটি সার্বজনিন সংস্কৃতিকে মূলসূত্র ধরেই ছাত্রছাত্রীদের শিাদান কর্মসূচি শুরু করতে হবে।

সম্প্রতি লেস্টার ইউনিভার্সিটিতে একটি সেমিনারে বক্তব্য দেয়ার সময় ব্যারোনেস ওয়ারসী মন্তব্য করেছিলেন, ‘ব্রিেেটনে বাড়ছে মুসলিম বিদ্বেষ, ব্রিটিশ সমাজের কাছেও এটি গ্রহণযোগ্য হচ্ছে’। তিনি এর বিরুদ্ধে লড়ে যাবেন বলেও অঙ্গিকার করেছিলেন ওই সেমিনারে।

মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের এসিসটেন্ট সেক্রেটারি ড. ফয়সাল হানজরা রেডিও-৪ কে বলেন, ইসলামি গ্রুপগুলো সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে আমরা হতাশ হয়েছি।

বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য প্রমাণ করে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সন্ত্রাসী পরিকল্পনা ও  ইসলামি চরমপন্থিদের অপতৎপরতা থেকে শঙ্কিত হয়েই ব্রিটেন কঠোর অবস্থানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

ডেভিড ক্যামেরনের হুঁশিয়ারি সাধারণ বাংলাদেশী জনগণের মধ্যেও উদ্বেগ ছড়িয়ে দিয়েছে। কমিউনিটির সাধারণ মানুষরা মনে করছেন, বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে আগামীতে মুসলিম কমিউনিটি হিসেবে বাংলাদেশীদেরও আরও বেশি সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে। বিভিন্ন ধর্মীয় শিা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, মক্তব যেগুলো সরকারি অনুদানে এতদিন ধরে চলে আসছিল, সেগুলোও পড়বে কঠোর নজরদারিতে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।