ঢাকা: পুরো বিশ্বের নজর এখন সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের দিকে। মাসাধিকাল নির্বাচনী মহোৎসবের পর শুক্রবার দেশটির ১৬তম জাতীয় সংসদ (লোকসভা) নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচনের ফলাফলকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। যে কোনো ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও সহিংসতার আশঙ্কা করছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো।
এদিকে, বুথ ফেরত ভোটার জরিপের ফলাফলে উজ্জীবিত বিজেপিসহ বাম দল ও আঞ্চলিক দলগুলো ভোট কারচুপি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানিয়েছে বিরোধীরা।
বুথ ফেরত ভোটার জরিপে বিজেপির এগিয়ে থাকার কথা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হলেও দলীয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, জরিপের ফলাফলে উজ্জীবিত বিজেপির কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো এখন নেতাকর্মীতে ভরে গেছে।
এছাড়া, সম্ভাব্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রিসভাও ঠিক করা হয়ে গেছে বলে বেশ কিছু সূত্র নিশ্চিত করেছে।
যদিও এ ধরনের জরিপ আগে ভুল প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে আবারও সরকার গঠনের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে কংগ্রেস জোটের পক্ষ থেকে। তথাপি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অনুষ্ঠানে কংগ্রেস ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীর যোগ না দেওয়াটা জরিপের ফলাফলেরই প্রভাব বলে মনে করা হচ্ছে।
এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (আইএনসি) নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) জোট ও প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোট প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে।
ইউপিএ জোটে আইএনসি ছাড়াও রয়েছে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ও ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)।
যদিও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বিজেপির দিকে নিজেদের ঝোঁকের কথা ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে এনসিপি ও আরজেডি।
অপরদিকে, এনডিএ জোটে বিজেপির সঙ্গে রয়েছে লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি), তেলেগু ডেসাম পার্টি (টিডিপি), শিব সেনা, স্বাভীমানি পক্ষ ও রাষ্ট্রীয় সমাজ পক্ষসহ মোট ২২টি দল।
এছাড়া, নির্বাচনে অংশ নেয় নবগঠিত থার্ড ফ্রন্ট। ১৪টি বামপন্থি ও সমমনা দল এই জোটে থেকে নির্বাচন করেছে। থার্ড ফ্রন্টের উল্লেখযোগ্য দলগুলো হলো- কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া-মার্ক্সিস্ট (সিপিএম), কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া, রেভোলুশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টি ও সমাজবাদী পার্টি।
সম্প্রতি কংগ্রেস ও বিজেপিকে কাঁপিয়ে দিয়ে দিল্লির রাজ্য সরকার গঠন করা আম আদমি পার্টিও (এএপি) নির্বাচনে আলোচনায় আছে। আলোচনায় আছে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার এএআইডিএমকে’ও।
সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কংগ্রেস ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল থার্ড ফ্রন্টকে সমর্থনের সম্ভাবনা নাকচ করলেও ‘রাজনৈতিক সমঝোতায় বিশ্বাসী’ বিজেপি তাদের জোটে যে কোনো দলকেই স্বাগত জানাতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।
তবে ফলাফল ঘোষণার পরই দেখা যাবে সত্যিকারের চমক-সরকার গঠনে কোন জোট কোন দলকে বাগিয়ে নিলো।
দলীয় ও জোট সূত্রের অনেকটা নিশ্চিত তথ্য, নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ’র জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অবশ্য, রাজনীতির খেলা হিসেবে মোদীর বিকল্প কেউ বিজেপি জোটের প্রধানমন্ত্রী হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
অন্যদিকে, টানা দু’দফায় সরকার গঠন করা কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করলে কাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হবে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি দল বা জোটের পক্ষ থেকে।
কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীই টানা দুইবারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের উত্তরসূরী হচ্ছেন কিনা এমনটি সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলেও বরাবরই এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন ইউপিএ নেতৃবৃন্দ।
তবে, প্রধানমন্ত্রিত্ব যাকেই দেওয়া হোক, দেশের জনগণসহ পুরো বিশ্বের নজর এখন ভারতের দিকে। কারণ, শুক্রবার বিকেলেই (অথবা দুপুরেও) জানা যাবে-ক্রমেই বিশ্ব পরাশক্তি হয়ে ওঠা ভারতের পরবর্তী সরকার কারা গঠন করছে, তৃতীয় দফায় ইউপিএ-নাকি দীর্ঘ বিরতির পর অনেক অভিযোগের তীরে বিদ্ধ মোদী’র এনডিএ।
ফিরে দেখা ভোটগ্রহণ পর্ব
নির্বাচনে ভারতের ৮১ কোটি ৪০ লাখ প্রায় ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
নয় দফায় শেষ হওয়া ৫৪৩টি সংসদীয় আসনের মধ্যে রয়েছে-অন্ধ্র প্রদেশের ৪২টি, অরুণাচলের ২টি, আসামের ১৪টি, বিহারের ৪০টি, ছত্তিশগড়ের ১১টি, গোয়ার ২টি, গুজরাটের ২৬টি, হরিয়ানার ১০টি, হিমাচলের ৪টি, জম্মু-কাশ্মীরের ৬টি, ঝাড়খণ্ডের ১৪টি, কর্ণাটকের ২৮টি, কেরালার ২০টি, মধ্যপ্রদেশের ২৯টি, মহারাষ্ট্রের ৪৮টি, মনিপুরের ২টি, মেঘালয়ের ২টি, মিজোরামের ১টি, নাগাল্যান্ডের ১টি, উড়িষ্যার ১টি, পাঞ্জাবের ১৩টি, রাজস্থানের ২৫টি, সিকিমের ১টি, তামিলনাড়ুর ৩৯টি, ত্রিপুরার ২টি, উত্তর প্রদেশের ৮০টি, উত্তরাখণ্ডের ৫টি, পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি, আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের ১টি, চন্ডিগড়ের ১টি, দদ্র ও নগর হ্যাবেলির ১টি, দামান ও দিউ’র ১টি, লক্ষদ্বীপের ১টি, দিল্লির ৭টি এবং পুড়ুচেরির ১টি আসন।
নির্বাচন কমিশনের হিসেব মতে, প্রথম দফায় ৭ এপ্রিল আসাম রাজ্যের পাঁচটি আসন ও ত্রিপুরা রাজ্যের একটি আসনের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ৯ এপ্রিল ছয়টি রাজ্যের সাতটি আসনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
তৃতীয় দফায় ১০ এপ্রিল সম্পন্ন হয় ১৪টি রাজ্যের ৯২টি আসনের ভোটগ্রহণ। এরপর চতুর্থ দফায় ১২ এপ্রিল তিনটি রাজ্যের পাঁচটি আসনের ভোটগ্রহণ করা হয়।
১৭ এপ্রিল হয় সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনের ভোট। এদিন পঞ্চম দফায় ১৩টি রাজ্যের মোট ১২২টি আসনের ভোটগ্রহণ করা হয়। এরপর ষষ্ঠ দফায় ২৪ এপ্রিল ১২টি রাজ্যের ১১৭টি আসনের ভোট নেওয়া হয়।
নির্বাচনের সপ্তম দফায় ৩০ এপ্রিল নয়টি রাজ্যের ৮৯টি আসনের এবং অষ্টম দফায় ৭ মে সাতটি রাজ্যের ৬৪টি আসনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
সর্বশেষ ১২ মে তিনটি রাজ্যের ৪১টি আসনের ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে নির্বাচনী মহোৎসবের।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৪