ঢাকা: ক্ষমতাসীন পেউ থাই পার্টিসহ রাজনৈতিক দলগুলো চলমান সংকট নিরসনে ব্যর্থ হওয়ায় থাইল্যান্ডে মার্শাল ল’ (সামরিক আইন) জারি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে এ পদক্ষেপ ‘কোনো ধরনের অভ্যুত্থান নয়’ দাবি করে বলা হয়েছে, ‘শান্তি ধরে রাখতে এবং আইনের শাসন অব্যাহত’ রাখতে এ আইন জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ভোরে সেনাবাহিনী পরিচালিত টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে সেনাপ্রধান প্রায়ুথ চ্যান-ওচা বলেন, “শান্তি ও আইনের শাসন ধরে রাখতে মার্শাল ল’ জারি করা হলো, তবে এটা কোনো ধরনের ‘অভ্যুত্থান নয়’। ”
এদিকে, নির্দেশনার অংশ হিসেবে ১০ টিভি চ্যানেলকে সব ধরনের প্রচারণা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সেনাবাহিনী। এর মধ্যে অন্তর্বতী সরকার সমর্থিত ও বিরোধী চ্যানেল রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।
এছাড়া, মার্শাল ল’ জারির পাশাপাশি যে কোনো সিদ্ধান্তগ্রহণ ও ক্ষমতা ব্যবহারে সেনাবাহিনী নিজেদের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব অনুমোদন করেছে বলেও জানান তিনি।
সেনাপ্রধানের ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নাল জানায়, তদন্তের জন্য যে কোনো কর্মকর্তা বা ব্যক্তিকে তলব করার অধিকার রাখবে সেনাবাহিনী।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে চ্যানেল নিউজ এশিয়া জানায়, থাই সেনারা মার্শাল ল’ জারি করার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেনি।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার সমর্থক লাল শার্টধারী বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছে, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা না ফেরা পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন।
সংবাদ মাধ্যম এএফপি জানিয়েছে, সরকারসমর্থক (লালশার্টধারী) বিক্ষোভকারীদের প্রধান নেতার বাসভবন ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী। তবে ওই নেতার পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
রয়টার্স জানিয়েছে, থাই বিচারমন্ত্রী বলেছেন, সরকার এখনও ক্ষমতায়, তবে সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছে, এটা নিশ্চয় ভালো খবর।
এসবিএস নিউজ জানায়, মার্শাল ল’ জারির প্রেক্ষিতে থাইল্যান্ডে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিজ দেশের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
গত ১৫ মে রাজধানী ব্যাংককে অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধীদের ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের হামলায় অন্তত তিনজন নিহত ও ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনার পর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে এ ধরনেরই ইঙ্গিত দেন সেনাপ্রধান প্রায়ুথ চ্যান-ওচা।
তিনি বলেন, সহিংসতা অব্যাহত থাকলে ‘ফোর্স’ ব্যবহার করবে সশস্ত্র বাহিনী।
চ্যান-ওচা বলেন, যদি সহিংসতা অব্যাহত থাকে তবে শান্তি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনীর বাইরে আসা প্রয়োজন...।
তবে সেনা অভ্যুত্থান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমাধান করবে না বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এমনটি দাবি করা হলেও মঙ্গলবার সে দাবির সত্যতা রইলো না।
অন্তর্বর্তী সরকারে ক্ষমতাসীন পেউ থাই পার্টির বিরুদ্ধে বিরোধীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে মূলত সাদা হাতির দেশটিতে অশান্তির বাতাস বইছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি জনপরিষদ দেশ পরিচালনায় নিয়োগ করতে সংসদকে চাপ দিচ্ছে বিক্ষোভকারীরা।
সম্প্রতি ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে আদালতের নির্দেশে ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। ইংলাক তার ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিনকে দুর্নীতির দায় থেকে বাঁচাতে এবং তার পরামর্শে রাষ্ট্র চালাচ্ছেন অভিযোগ করে গত অক্টোবর থেকে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু করে সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী সুথেপ থাউগসুবানের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন ইংলাক। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে প্রধান বিরোধী দল অভিজিৎ ভেজাজিভার নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেট পার্টিও নির্বাচন বর্জন করে।
নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণে গত ১৪ মে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে বৈঠকে বসার কথা থাকলেও নিরাপত্তার কারণে তা স্থগিত করা হয়। স্পষ্টতই তাই থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক সঙ্কট গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৩ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৪/আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা/আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা