ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আলো দিয়ে পদার্থ তৈরি সম্ভব!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৪
আলো দিয়ে পদার্থ তৈরি সম্ভব!

ঢাকা: আলো দিয়ে পদার্থ (Matter) তৈরির উপায় খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কথাটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিজ্ঞানের যুগে একে বাস্তব করার উপায় ঠিকই খুঁজের বের করেছেন বিজ্ঞানীরা।



আলো থেকে বস্তু তৈরি করতে বিজ্ঞানীরা উচ্চা ক্ষমতাসম্পন্ন লেজারকে ব্যবহার করেছেন।

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলো থেকে বস্তু তৈরির ধারণা নতুন কোনো তত্ত্ব নয়। ৮০ বছর আগে দুই পদার্থবিদ এ বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন।

এ দুজন বিশ্বের প্রথম আণবিক বোমা তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। তারা হলেন- গ্রেগরি ব্রেইট এবং জন হুইলার।

১৯৩৪ সালের মার্কিন পদার্থবিদ গ্রেগরি ব্রেইট এবং জন হুইলার এক গবেষণার মাধ্যমে তত্ত্ব হাজির করেন আলোক কণা (ফোটন) আছে এবং তা ইলেকট্রন ও পজিট্রনের সমন্বয়ে গঠিত।

কিন্তু, তখন তারা তাদের এ তত্ত্বকে বাস্তবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। শুধু তাই-ই নয়, এ সময় তারা বিশ্বাস করতে শুরু করলেন যে, এ তত্ত্ব কখনোই বাস্তবে প্রমাণ করা সম্ভবপর নয়।

এদিকে, সোমবার ইম্পেরিয়াল কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিভ রোজ বলেন, আজ আমরা ৮০ বছর পর ওই দুই পদার্থবিদের ধারণা ও বিশ্বাসকে ভুল প্রমাণ করেছি।

তিনি বলেন, এই তত্ত্ব পদার্থবিদরা গ্রহণ করার পরেও ব্রেইট ও হুইলার মনে করেছিলেন, গবেষণাগারে এই তত্ত্ব প্রমাণ করা সম্ভবপর নয়।

আলো থেকে পদার্থ তৈরির সাফল্যে উচ্ছ্বসিত স্টিভ রোজ বলেন,  এটা কতখানি আশ্চর্যের বিষয় যে, আমরা আলো থেকে সরাসরি পদার্থ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। শুধু তাই-ই নয়, যে প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করেছি, তা যুক্তরাজ্যে ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পদার্থবিদরা একে অন্যকে বলাবলি করছি, কারা মাইল ফলক হিসেবে আলো থেকে সরাসরি বস্তু তৈরির গবেষণা করবেন।

স্টিভ রোজ ও অন্যান্য গবেষকরা যে যন্ত্র দিয়ে আলো থেকে সরাসরি বস্তু তৈরি করেন, তাকে বলা হচ্ছে- ফোটন-ফোটন কোলাইডার। তবে তাদের তৈরি পদার্থ খালি চোখে দেখা যাবে না।

গবেষক দলের প্রধান অলিভার পাইক বলেন, গবেষণাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এটি আইনস্টাইনের বিখ্যাত ফর্মূলাকেই প্রদর্শন করবে।

তিনি বলেন, আলো থেকে পদার্থ তৈরির ব্রেইট-হুইলারের পদ্ধতি খুবই সহজ একটি উপায় এবং এটি আইনস্টাইনের E=mc2 তত্ত্বের দুর্বলতম প্রদর্শনী।

আলো থেকে পদার্থ তৈরির প্রক্রিয়া:

গবেষণাগারে আলো থেকে পদার্থ তৈরির জন্য প্রথমে ইলেকট্রনের ওপর অতি শক্তিশালী লেজার রশ্মি দেওয়া হয়। এরপর ইলেকট্রন উত্তপ্ত হয়ে আলোর গতির সমগতি লাভ করে।

এরপর ইলেকট্রনকে সোনার ভেতরে আরো উত্তপ্ত করা হয়। এ সময় আলোক রশ্মি ফোটন সৃষ্টি করে। আমরা যে আলোককণা খালি চোখে দেখি তার যে তাপমাত্রা, এই তাপমাত্রা তার চেয়ে কোটি কোটি গুণ বেশি।

দ্বিতীয় স্তরেও অতি উচ্চমানের লেজার হলরাউম (hohlraum)-এর দিকে প্রবাহিত করা হয়। এ সময় যে উজ্জ্বলতার সৃষ্টি হয়, তা একটি নক্ষত্র থেকে বিচ্ছুরিত আলোর সমান। শেষে ফোটনের প্রথম স্রোত হলরাউমের দিকে প্রবাহিত করানো হয়। এরপর এখানে দুটি প্রবাহের সংঘর্ষ হয়। এর ফলে ইলেকট্রন ও পজিট্রনের সৃষ্টি হয়।

এই গবেষণাটি নেচার ফোটোনিকস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ১২ মাস সময় লাগবে। যদি তারা এ গবেষণায় সফল হন, তাহলে উপ-আণবিক কণার আচরণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা ধারণা লাভ করবেন।

পাইক বলেন, এ ফোটনের দুটি স্রোতের সংঘর্ষ পদার্থবিদ্যার মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রের একটি স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত হবে। তাহলো- বিশুদ্ধ আলোর অনুপ্রবেশ ও পদার্থের সৃষ্টি।

এই গবেষণা প্রক্রিয়াটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির প্রথম ১০০ সেকেন্ডের অবস্থা এবং গামা রশ্মির বিস্ফোরণ- যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণের ঘটনা ও পদার্থ বিদ্যার এখন পর্যন্ত সমাধানহীন রহস্যের অবস্থা ব্যাখ্যায় ভূমিকা রাখবে বলে গবেষকরা দাবি করেছেন।   

বাংলাদেশ সময়: ০৫৪০ ঘণ্টা, মে২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।