ঢাকা: থাইল্যান্ডজুড়ে কারফিউ জারি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এ কারফিউ বলবৎ থাকবে।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর বৃহস্পতিবার বিকেলে এ খবর জানিয়েছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জনগণকে বাড়িতে থাকতে বলা হচ্ছে। রাতে ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে।
এর আগে, বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনগুলোয় দেওয়া ভাষণে সামরিক অভ্যুত্থান ঘোষণা করেন সেনাপ্রধান প্রায়ুথ চ্যান-ওচা।
তিনি ঘোষণা দেন, সেনাবাহিনী দেশটিতে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে এবং রাজনৈতিক সংস্কার করবে।
এছাড়া, এ অভ্যুত্থান থাইল্যান্ডের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না বলেও দাবি করেন সেনাপ্রধান প্রায়ুথ। একইসঙ্গে দেশটিতে অবস্থানরত ও সফররত বিদেশি নাগরিকদের সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মঙ্গলবার মার্শাল ল’ জারি করার পর বৃহস্পতিবার এ অভ্যুত্থান ঘটালো সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, মার্শাল ল’ জারির পর সমঝোতার লক্ষ্যে রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠকে বসালেও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো আশার বাণী শোনা যায়নি। এরই প্রেক্ষিতে ‘শান্তি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়’ অভ্যুত্থান ঘটালো সেনাবাহিনী।
দেশটির সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত ভাষণে সেনাপ্রধান প্রায়ুথ যখন অভ্যুত্থান ঘোষণা করছিলেন, তখন চলমান সংকট নিরসনে সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় ব্যাংককের আর্মি ক্লাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা সংলাপ চলছিল।
বার্তা সংস্থা বিবিসির প্রতিনিধি জোনাথন হেড জানান, অভ্যুত্থান ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আর্মি ক্লাবে তালা দেয় সেনাবাহিনী। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সংলাপ করছিলেন।
প্রতিনিধিরা আরও জানান, সংলাপরত রাজনৈতিক নেতাদের আর্মি ক্লাবের ভেতর থেকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, সেনাঅভ্যুত্থান ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ থাইল্যান্ডের রাস্তায় রাস্তায় সাঁজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী। লাল ও হলুদ শার্টধারী নেতাদের বাসভবন ও কার্যালয়ের সামনে যেকোনো সহিংসতা দমনে কড়া পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে রাস্তায় রাস্তায় সেনাটহল অব্যাহত রাখা হয়েছে।
অপরদিকে, আর্মি ক্লাব থেকে হলুদ শার্টধারী বিক্ষোভকারীদের নেতা সুথেপ থাউগসুবানকে সেনাবাহিনী আটক করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যমগুলো।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, আট বছরের মাথায় সাদা হাতির দেশটিতে দ্বিতীয়বারের মতো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটলো। ২০০৬ সালে সর্বশেষ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পেউ থাই পার্টির অর্থাৎ লাল শার্টধারীদের প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করে অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী।
এর আগে, ক্ষমতাসীন পেউ থাই পার্টিসহ রাজনৈতিক দলগুলো চলমান সংকট নিরসনে ব্যর্থ হওয়ায় গত মঙ্গলবার দেশটিতে মার্শাল ল’ (সামরিক আইন) জারি করে সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার ভোরে “শান্তি ও আইনের শাসন ধরে রাখতে মার্শাল ল’ জারি’ করার পর ১০ টিভি চ্যানেলকে সব ধরনের প্রচারণা বন্ধের নির্দেশ দেয় সেনাবাহিনী। এর মধ্যে অন্তর্বতী সরকার সমর্থিত ও বিরোধী চ্যানেলও ছিল।
গত ১৫ মে রাজধানী ব্যাংককে অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধীদের ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের হামলায় অন্তত তিনজন নিহত ও ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনার পর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ‘অভ্যুত্থানেরই’ ইঙ্গিত দেন সেনাপ্রধান।
তিনি বলেন, সহিংসতা অব্যাহত থাকলে ‘ফোর্স’ ব্যবহার করবে সশস্ত্র বাহিনী।
চ্যান-ওচা বলেন, যদি সহিংসতা অব্যাহত থাকে তবে শান্তি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনীর বাইরে আসা প্রয়োজন...।
অন্তর্বর্তী সরকারে ক্ষমতাসীন পেউ থাই পার্টির বিরুদ্ধে বিরোধীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে মূলত সাদা হাতির দেশটিতে অশান্তির বাতাস বইতে শুরু করে।
ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। ইংলাক তার ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিনকে দুর্নীতির দায় থেকে বাঁচাতে এবং তার পরামর্শে রাষ্ট্র চালাচ্ছেন অভিযোগ করে গত অক্টোবর থেকে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু করে প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেট পার্টির নেতা ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী সুথেপ থাউগসুবানের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন ইংলাক। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে প্রধান বিরোধী দল অভিজিৎ ভেজাজিভার নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেট পার্টিও নির্বাচন বর্জন করে।
নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণে গত ১৪ মে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে বৈঠকে বসার কথা থাকলেও নিরাপত্তার কারণে তা স্থগিত করা হয়।
তারপর থেকে ব্যাংককের রাস্তায় মুখোমুখি বিক্ষোভ শুরু করে লাল শার্ট ও হলুদ শার্টধারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৪