ঢাকা: যমজ বলে থাকা-খাওয়া একসঙ্গে হতে পারে। একসঙ্গে হতে পারে পড়াশোনা কিংবা ঘুমও।
এমনটিই ঘটছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের যমজ অ্যাম ও ব্যাকি গ্লাসের মধ্যে। ৪৬ বছর বয়সী এই দুই বোন গত ১৫ বছর ধরে কখনো আধা ঘণ্টার বেশি সময় আলাদা থাকতে পারেননি।
যমজ বোনের কাণ্ড-কীর্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, অ্যামি-ব্যাকি যমজ। আবার ঠিক যমজ বলতে যা বোঝায়, তা থেকে কিছুটা ভিন্ন এ দু’জন। নিউজার্সিতে জন্মগ্রহণের দুই মাস পর থেকেই এক দত্তক পরিবারে বড় হয়েছেন এই টুইন।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, বেডরুম, মোবাইলসহ অনেক কিছুই তাদের একটি করে, যেন সবক্ষেত্রেই দু’জনের সমান সমান ভাগ থাকে।
রঙ কিছুটা আলাদা হলেও প্রায় প্রতিদিনই একই পোশাক পড়েন তারা। আবার সেই পোশাক এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে দু’জন অদলবদল করে পরতে পারেন।
খাবারের প্রতিটা কামড়, গ্লাসের প্রতিটি চুমুক হিসেব করেন তারা। যেন কেউ কারও থেকে বেশি না খায়। গত ১৯ বছর ধরে তারা একই খাবার একই পরিমাণে খেয়ে যাচ্ছেন।
একবার ঘটলো মজার কাণ্ড। অ্যামি’র থেকে বেকির ওজন কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। দু’জনের কী চিন্তা। কিছুদিন পরিমাণ মতো খাবার খেয়ে আবার আগের ওজনে ফিরে আসেন ব্যাকি।
স্কুলে পড়ার সময় থেকে দত্তক মায়ের চেষ্টা থাকত দুজনকে আলাদা পোশাক পরানোর। মায়ের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে কিছুদিন বন্ধও রেখেছিলেন।
কিন্তু নিউজার্সির রুটজার্স ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় আবার আগের মতোই একই পোশাক পরা শুরু করেন তারা। শুধু পোশাক নয়, সবকিছুতেই চাই তাদের সমতা।
অ্যামি বলেন, প্রকৃতিগতভাবেই আমরা দুটি শরীরের একটি মন। তাই দু’জনের সাজসজ্জা থেকে শুরু করে কাপড়ের একটি সুতাও আলাদা হতো না। আলাদা হোক, এটা আমরা চাইও না।
যমজরা সব কাজ একসাথে করবে এটা হয়তো মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বয়ফেন্ডের ক্ষেত্রে কী করেন তারা? সেখানে নিশ্চয় দু’জনকে আলাদা হতে হয়!
কিন্তু না। সেখানেও অন্যদের সঙ্গে রয়েছে অ্যামি-বেকির ভিন্নতা। ১৯৯৩ সালে এক পার্টিতে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেল তাদের সাবেক বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে। তিন-তিনবার দু’জন একইসঙ্গে ডেট করলেন সাবেক এই বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে।
অ্যামি বলেন, “শুধু ডেট নয়, আমরা একসাথে সেক্স করতেও স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। তাছাড়া আমাদের দু’জনকে সেও ভালোভাবেই গ্রহণ করে। ”
এছাড়াও, বিয়ে বা সন্তানের ব্যাপারটিও প্রত্যাখান করেছেন এই যমজ। দু’জন দু’জনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই আলাদা কাউকে বিয়ে করে সংসার করতেও নারাজ অ্যামি ও বেকি।
একটা সময় দু’জন চিন্তা করলেন বাচ্চা নিয়ে একসঙ্গে বড় করবেন। কিছুদিন পর সেই চিন্তাও বাদ দিলেন তারা।
তারা অনুভব করেন যে, তাদের দু’জনের বিয়ে হয়েছে। তাহলে তাদের মধ্যে আলাদা কেউ আসা অবাঞ্ছনীয়।
বর্তমানে তারা লস অ্যাঞ্জেলেস জিটি ইভেন্ট নামের একটি মার্কেটিং কোম্পানি চালু করেছেন।
অবাক করার বিষয় হলো, যে কোনো ফোনকলেও তারা একসঙ্গে কনফারেন্স করে কথা বলেন। সবসময় একইসঙ্গে তাদের বাক্য শেষ করেন। অফিসে তাদের ডেস্কও মুখোমুখি রেখেছেন। যেন সবসময় দু’জন দু’জনকে দেখতে পারেন।
সবার কাছে এই বিষয়গুলো অদ্ভুত হলেও অ্যামি ও ব্যাকির কাছে স্বাভাবিক। যেখানে অ্যামি নেই সেখানে বেকিকে কল্পনাও করা যায় না।
৪৬ বছর বয়স পর্যন্ত একসঙ্গে কাটালেন তারা। পরের সময়গুলোও কি এভাবে কাটবে তাদের?
অ্যামি ও ব্যাকি চান মৃত্যু পর্যন্ত একসঙ্গে কাটাতে। এমনকি তারা বিশ্বাস করেন, জন্মের মতো মৃত্যুটাও যেন একসঙ্গে হয়।
অ্যামি বলেন, ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে, আমাদের দু’জনকে একসঙ্গে গ্রহণ করবেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৪