ঢাকা: মাত্রই দিল্লি জয় চূড়ান্ত করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী বিজেপি নেতা নরেন্দ্রভাই দমোদরদাস মোদী। ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে সেই ‘মোদী-ঝড়’ এতাটাই প্রবল ছিল যে, হতেগোনা দু-তিনটা বাদে প্রায় সব জাতীয় ও আঞ্চলিক দলের ‘ভূমিসজ্জা’ নিতে হয়েছে।
ফলে কার্যত শক্তিশালী বিরোধী দলবিহীন ভারতের রাজনীতিতে সামনের দিনে কী কী করবেন তার একটা রূপরেখাও নিজের হাতে রেখেছেন ১৩ বছর ধরে গুজরাট শাসন করা মোদী।
কিন্তু সেই জয়োৎসবের মধ্যেই কী শুরু হয়ে গেল ‘বিজেপি-প্রতিরোধ’! আর সেটি কি বিহার দিয়েই শুরু হলো! প্রশ্ন তুলছেন ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই।
গত ১৬ মে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর দায় কাঁধে নিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডিইউ) এর প্রধান নিতীশ কুমার।
বিহারের ৪০টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতে নেয় ৩১টি আসন। আর লালুপ্রসাদ যাদবের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় জনতা দল-আরজেডি পায় মাত্র ৪টি এবং জেডিইউ ও কংগ্রেস ২টি করে আসন পায়। ফলে নিতীশের পদত্যাগে স্বাভাবিকভাবেই উজ্জ্বীবিত ছিল সেখানে বিজেপি।
বিহার বিধান সভায় মোট আসন সংখ্যা ২৩৭। এরমধ্যে বিজেপির সদস্য সংখ্যা ৮৯। অপরদিকে জেডিইউ এর ১১৭, আরজেডির ২১ ও কংগ্রেসের ৪। অ-বিজেপি দলগুলোর মোট আসন সংখ্যা ১৪২।
অ-বিজেপি দলের নেতাদের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের বলা হচ্ছিল, বিজেপি অন্য দলগুলোর বিধান সভার সদস্যদের ‘ভাগিয়ে’ নিয়ে জেডিইউ সরকারকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
পদত্যাগের পর নিতীশ তার উত্তরসূরী হিসাবে নির্বাচন করেন দলের মহাদলিত নেতা জিতনরাম মাঁঝিকে, যিনি রাজ্যের প্রথম মহাদলিত মুখ্যমন্ত্রীও বটে। শুক্রবার ছিল জিতনরামের নেতৃত্বাধীন সরকারের আস্থা ভোট। সেই আস্থাভোটকে কেন্দ্র করেই বিহারে সবগুলো অ-বিজেপি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একজোট বাঁধে এবং আস্থা ভোটে জয় হয় জেডিইউ সরকারের।
লালুপ্রসাদ যাদব আর নিতীশ কুমারের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ প্রায় ২০ বছরের। কেউ কারো মুখও দেখতেন না। যদিও একসময় দুজন একই পার্টির নেতা ছিলেন। এখন ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে সুস্পষ্ট বার্তা দিতেই দুই নেতা বৃহত্তর স্বার্থে এক হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলের নেতারা।
এই ঘটনাকে শুধু বিহারের প্রেক্ষাপটেই দেখতে রাজী নন অনেক রাজনেতিক বিশ্লেষক। তারা মনে করছেন, বিহারের এই ঘটনা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে একটি বার্তা দেবে।
বিজেপি, ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ-আরএসএস এর রাজনৈতিক শাখা হিসাবে পরিচিত। মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েই সেখানে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার মতো ঘটনা ঘটে। এবারের নির্বাচনি প্রচারণার সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মোদীকে ‘দাঙ্গার মুখ’ বলে কটাক্ষও করেন।
বিধান সভার আরজেডি নেতা আব্দুল বারি সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, বিজেপি ও আরএসএস রাজ্য সরকারকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। তা হবে না। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে আমরা জেডিইউকে সমর্থন দিয়েছি। বৃহত্তর রাজনীতির স্বার্থেই এই সমর্থন দেয়া হয়েছে।
এদিকে বিহারে আগামী বছরই অনুষ্ঠিত হবে বিধানসভা নির্বাচন। সেখানেও কী একইভাবে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলো জোটবদ্ধ থাকবে? আরজেডি প্রধান ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের জবাব, দেখা যাক। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতই বলবে।
বিহারের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি পেয়েছে ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট। অপরদিকে সেখানকার অ-বিজেপি আরজেডি, জেডিইউ ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট তারচেয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
বিহারের মতো ভারতের অনেক রাজ্যেই ভোটের এই সমীকরণ রয়েছে, যা বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি কাজে লাগাতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৪