ঢাকা: দিল্লির রাজ্য সরকার গঠন করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেওয়া আম আদমি পার্টিতে (এএপি) ভাঙনের সুর উঠেছে। দলটির প্রধান নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল যখন মানহানি মামলায় কারাভোগ করছেন তখন খবর এলো, দলের শীর্ষ দুই নেতা সাজিয়া ইলমি ও জিআর গোপিনাথ দলত্যাগ করেছেন।
শনিবার এ দুই প্রভাবশালী নেতার সংবাদ সম্মেলনের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম পিটিআই জানায়, পদত্যাগী দুই নেতা ‘জেল রাজনীতি’ করার জন্য দলের প্রধান কেজরিওয়ালের কড়া সমালোচনা করেছেন।
শনিবার দিল্লিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সাজিয়া ইলমি দাবি করেন, দলের মধ্যে গণতন্ত্র নেই এবং কেজরিওয়াল কেবল ক’জন ঘনিষ্ঠকে নিয়ে দল পরিচালনা করতে চান। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র চর্চার জন্যই তিনি এএপি ত্যাগ করছেন।
গত জানুয়ারিতেই এএপিতে যোগ দেওয়া ধনকুবের জিআর গোপীনাথ বলেন, একজন দলীয় প্রধান হম্বিতম্বি রাজনীতি করে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে পারেন না।
বিজেপি নেতা নিতিন গড়করির দায়ের করা একটি মানহানি মামলায় বর্তমানে কারাভোগ করছেন কেজরিওয়াল। মুচলেকার বিনিময়ে জামিন পাওয়ার সুযোগ থাকলেও তা প্রত্যাখ্যান করায় তাকে গত ২১ মে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আগামী ৬ জুন পর্যন্ত কারাগারেই থাকছেন দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী।
কারাগারে যাওয়ার আগে দিল্লির রাজ্য সরকার গঠন করেও মাত্র ৪৯ দিনের মধ্যেই পদত্যাগ করায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন কেজরিওয়াল।
তিনি বলেন, আজকে, আমি রাজধানী দিল্লির প্রতিটি মানুষের কাছে তথা ভারতের প্রতিটি মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলছি, এভাবে হুটহাট করে ক্ষমতায় আসার ৪৯ দিনের মাথায় আমাদের পদত্যাগ করাটা ঠিক ছিল না। আমরা ভুল করেছিলাম। এই ভুলের জন্য আমরা মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি।
তিনি বলেন, যখন আমরা দিল্লির সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলাম তখন আমাদের সেই পদত্যাগের পিছনে একটি একটি নৈতিক ভিত্তি ছিল। আমরা ভেবেছিলাম, আম আদমি পার্টি তার নৈতিক অবস্থানের সঙ্গে আপস করতে পারে না।
কেজরিওয়াল বলেন, আমাদের মাথায় ছিল না যে, দিল্লির মানুষ বা দেশবাসী সেই পদত্যাগের ঘটনাকে ভিন্নভাবে দেখবেন ও ভুল ব্যাখা করবেন। ফলে, সেই পদত্যাগের ঘটনার জন্য আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
তবে কেজরিওয়াল ক্ষমা চাইলেও রাজ্য সরকার থেকে এ অব্যাহতিই এএপির জন্য কাল হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির সমালোচকরা।
বিশ্লেষকদের মতে, হুট করে এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিণতি লোকসভা নির্বাচনে স্পষ্টতই ভোগ করতে হয়েছে এএপিকে। বারানসি আসনে হেরে গেছেন খোদ কেজরিওয়ালই।
ফলাফল ঘোষণার পর মূলত কেজরিওয়ালের দিল্লির রাজ্য সরকারের পদত্যাগের সিদ্ধান্তেরই কড়া সমালোচনা হতে থাকে। ক্ষোভ ছড়াতে থাকে দলের অভ্যন্তরেও।
সবশেষে নিতিন গড়করির দায়ের করা মামলায় কেজরিওয়াল কারাগারে প্রবেশের পর এ ক্ষোভ আরও বেশি প্রকাশ্য হতে থাকে।
দলটির সমালোচকরা বলছেন, সাজিয়া-গোপীনাথ প্রাথমিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। আম-আদমিতে যে ভাঙনের সুর উঠেছে সেটা জোরালো না হলেই দেশের গণতান্ত্রিক দলটির জন্য ভালো খবর।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৪