ঢাকা: আরব দেশগুলোর ছাপা সংবাদপত্র আগের চেয়ে অনেক বেশি অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
এ দেশগুলোর সংবাদপত্রের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে বলে সৌদিভিত্তিক আল আরাবিয়া নিউজ পোর্টাল সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে।
আল আরাবিয়া গবেষকদের বরাত দিয়ে জানায়, আরব দেশগুলোতে অনলাইনের ব্যবহার ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় সে দেশগুলোর ছাপা সংবাদপত্র আগের তুলনায় অনেক বেশি অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে।
এ দেশগুলোর নাগরিকেরা দ্রুত হারে সামাজিক সাইটগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।
২০১০ সালে প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রের মৃত্যুঘণ্টা’ বইয়ের লেখক রস ডসন বলেন, আরব দেশগুলোতে ছাপা সংবাদপত্রের আর কোনো তাৎপর্য নেই।
তিনি জানান, ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবং ২০৩৪ সালের পর সৌদি আরবে ছাপা সংবাদপত্রের বিলুপ্তি ঘটবে।
তিনি দুবাইতে ‘আরব মিডিয়া ফোরাম’কে বলেন, আমি যা অনুমান করেছিলাম, তারও আগে আরব দেশগুলোতে ছাপা সংবাদপত্রের মৃত্যুঘণ্টা বাজবে।
তিনি বলেন, আমি যে সময়সীমার কথা বলেছিলাম, ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমের দ্রুত বিস্তৃতির কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবে সে সময়সীমার আরো কয়েক বছর আগে ছাপা সংবাদপত্রের বিলুপ্তি ঘটতে পারে।
আরব দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার হয়ে থাকে। সৌদি আরবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সামাজিক সাইট ব্যবহৃত হয়। সেখানে ইউটিউব, টুইটার এবং ফেসবুক পারক্যাপিটা হিসেবে সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত হয়।
রস ডসন বলেন, আরব জাতিগুলো আর্থিক দিক দিয়ে উন্নত বিধায় সংবাদপত্রের বিকল্প সংবাদের জন্য তারা অনলাইনে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন।
তিনি চার বছর আগে উল্লেখ করেছিলেন, আরো আগে কাতারের সংবাদপত্রের মৃত্যুঘণ্টা বাজবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রের মৃত্যু ২০১৭ সাল কিংবা তারও আগে হতে পারে।
ডসনের মতে, ছাপা সংবাদপত্র আগের তুলনায় মাত্র ২.৫ ভাগ বিজ্ঞাপনদাতাদের আকৃষ্ট করতে পারছে।
তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে শুধুমাত্র অভিবাসী ও সরকারি অর্থে প্রকাশিত সংবাদমাধ্যম টিকে থাকতে পারে।
বিষয়টি উল্লখে করে ডসন বলেন, একটা সময় ছাপা সংবাদপত্র শুধুমাত্র অভিবাসী কমিউনিটি কিংবা সরকারি অর্থে সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে টিকে থাকতে পারে। তা ছাড়া নয়।
তিনি বলেন, সাময়িকী সংবাদপত্রের সাংবাদিকরা ইতোমধ্যে পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন এবং অনেক সাংবাদিকই ছাপা সংবাদপত্র থেকে পদত্যাগ করছেন।
এদিকে, সৌদি গেজেটের এডিটর-ইন-লার্জ খালেদ আলমীনা রস ডসনের ভবিষ্যত বাণীর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি দেখেছি, সৌদি আরব ও এর আশেপাশে সংবাদপত্রের বিক্রি সংখ্যা এক লাখ ৪০ হাজার থেকে কমে শুধুমাত্র ৪০ কিংবা ৪৫ হাজার কপিতে নেমে এসেছে।
এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি অনলাইনে ঝুঁকে পড়েছেন এবং সংবাদপত্র ছাপার খরচ আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে গেছে।
এদিকে, ডসনের মতে, অনলাইন সংবাদমাধ্যমের বিজ্ঞাপনের হার ছাপা সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের হারকে এখনো অতিক্রম করতে পারেনি। তবে দ্রুত তা বেড়ে চলেছে। এক সময় অনলাইন সংবাদ মাধ্যমেই হবে সংবাদের মূলধারা। সে কারণে বিজ্ঞাপনদাতারা অনলাইন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক সাইটগুলোকে আগের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৪