ঢাকা: দিন দশেক পরই সাম্বার দেশ ব্রাজিলে শুরু হচ্ছে ফুটবলের শ্রেষ্ঠ আসর বিশ্বকাপ। সেরা হওয়ার এ লড়াইয়ে কে জিতবে এ নিয়ে দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যেও রীতিমত লড়াই শুরু হয়ে গেছে।
কিন্তু, এটা তো হলো ওপরের পৃষ্ঠার গল্প! অপর পৃষ্ঠায় কী হচ্ছে? সেটা পড়া যাচ্ছে ব্রাজিলের আয়োজক-অনায়োজক শহরগুলোর সড়কে, ঘাটে এমনকি মাঠের দেওয়ালেও।
প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স ও এএফপির চিত্রগ্রাহকদের ক্যামেরায় বন্দি হওয়া ছবিগুলোয় অপর পৃষ্ঠার বর্ণনা যেভাবে চিত্রাকারে দেওয়া হয়েছে সেটা যে কাউকে একবার হলেও ভাবতে বাধ্য করবে।
এবারের বিশ্বকাপের আয়োজনে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার সহযোগিতায় এগারো শ’ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করছে ব্রাজিল। মাঠ সংস্কার, শহর সাজানো-গোছানো, পর্যটন স্পট সংস্কার ও অতিথি আপ্যায়নসহ বিভিন্ন খাতে এসব অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।
এতো বিশাল অংকের অর্থ ব্যয়কেই ‘অপচয় ও বৈষম্য’ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে নেমেছেন ব্রাজিলের বিপ্লবী আঁকিয়েরা। সড়কে সড়কে, দেওয়ালে দেওয়ালে, পথে-মাঠে-ঘাটে সব জায়গায় তারা রঙতুলির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে চলেছেন ব্রাজিলের অভুক্ত জনগোষ্ঠীসহ ক্ষুধার্ত বিশ্বকে পাশ কাটিয়ে এতো ‘অর্থ জলে ঢালার’।
ব্রাসিলিয়া, রিওডি জেনেরিও, সাও পাওলোসহ আয়োজক শহরগুলোর সড়কে-দেওয়ালে এখন শোভা পাচ্ছে, ‘ফুটবল চাই না, খাবার দাও’ শীর্ষক দেওয়াল লিখন ও চিত্র।
২৩ মে তোলা একটি ছবিতে দেখা যায়, পাওলো ইতো শহরের একটি সরকারি স্কুলের দেওয়ালে আঁকা ছবিতে খাবার টেবিলে চামচ হাতে একটি শীর্ণকায় শিশু চিৎকার করে কাঁদছে। তার সামনে প্লেটে থাকলেও সেখানে খাবার নেই, আছে ফুটবল।
এসব চিত্রে চিত্রকররা বোঝাতে চেয়েছেন, ফুটবলের এ মহাআয়োজন এমন অর্থ অপচয় করা হলেও মানুষের প্রধান মৌলিক অধিকার খাবার যোগাতে ব্যর্থ হচ্ছেন ব্রাজিলসহ পুরো বিশ্বের কর্তাব্যক্তিরা।
অর্থ অপচয়ের প্রতিবাদের পাশাপাশি চিত্রকররা তাদের চিত্রে দাবি তুলেছেন, বিশ্বকাপের জন্য বরাদ্দ অর্থ ব্রাজিলসহ বিশ্বের বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার তথা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ চাহিদা পূরণে ব্যয় করা হোক।
গত বছর থেকে ব্রাজিলে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১০ লাখ লোক ফুটবল বিশ্বকাপ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে। সময় যতো ঘনিয়ে আসছে এ বিক্ষোভের মাত্রা ততোই তীব্রতর হচ্ছে বলে সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে ইতোমধ্যে জানা গেছে।
বিক্ষোভের পাশাপাশি সড়কে-দেওয়ালে আঁকা বিভিন্ন চিত্রে দেখা যায়, আসন্ন বিশ্বকাপের মাস্কট ট্যাটাবোলা বা ফুলেকো ও সংশ্লিষ্ট একজন কর্তা ব্যক্তিকে এক টেবিলে সাহেবি স্যুটে বসিয়ে চরমভাবে ব্যঙ্গ করা হয়েছে।
কোনো কোনো চিত্রে ফুটবলকে কেন্দ্র করে শিশুদের অপরাধ প্রবণ করে গড়ে তোলার চিত্র তুলে ধরা হয়, সেই চিত্রের পাশে বসে একটি শিশু খাবার খাচ্ছে।
রিওডি জেনেরিও’র একটি দেওয়াল লিখনে বলা হয়, ‘ফিফা’ ঘরে ফিরে যাও!
কোথাও আবার বিশ্বকাপের বিরুদ্ধে রিওডি জেনেরিও’র আন্দোলনকারী সংগঠন ব্ল্যাক ব্লক ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার নেইমারের মুখে কালো মুখোশ দিয়ে ঢেকে দিয়েছে, চিত্রটিতে নেইমারের জার্সিতে লেখা ‘নেইমার’ ও ‘নাইক’ লোগোর ওপর ‘ক্রস’ চিহ্ন দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রিওডি জেনেরিও শহরেরই এক ব্যস্ত সড়কে আঁকা অপর একটি ছবিতে দেখা যায়, একটি অভুক্ত শীর্ণকায় শিশু দাঁড়িয়ে আছে, তার হাতে খাবারের প্লেটের মতো করে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ফুটবল।
সাও পাওলো’র একজন দেওয়াল আঁকিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, বঞ্চিত বিশ্বের অধিকারের পক্ষে সচেতনদের প্রতিবাদী করে তুলতে এটাই উপযুক্ত সময়। আমরা অভুক্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করছি।
তিনি বলেন, প্রশাসন যদিও এগুলো প্রকাশ করতে চাইছে না, তথাপি বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করলে সংশ্লিষ্টরা এতে লজ্জা পাবে, তাতে অন্তত কিছু সমস্যা দূরীকরণে হলেও কাজ করবে, আর এটাই আমাদের লক্ষ্য।
ওই চিত্রকর বলেন, আমরা বোঝাতে চেয়েছি, ‘আমাদের খাবার দরকার, ফুটবল নয় (নিড ফুড, নট ফুটবল)।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, জুন ২, ২০১৪