ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

২০ মাইল দীর্ঘ ‘সাপের দ্বীপ’

সোহেলুর রহমান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৪
২০ মাইল দীর্ঘ ‘সাপের দ্বীপ’

ঢাকা: এক মাইল কিংবা দুই মাইল নয়, দীর্ঘ ২০ মাইল দীর্ঘ এক দ্বীপ। পুরোটা জুড়ে কেবল সাপ আর সাপ।

একটি দুটি নয়, চার হাজার সাপের বিশাল এক দল এই দীপে নিজেদের রাজ্য গড়ে তুলেছে।

সেখানে মানুষ নেই, নেই বসতি। দ্বীপের একপাশ থেকে আরেক পাশ পর্যন্ত একই প্রজাতির ‍সাপের বিচরণ। তাই দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে সাপের দ্বীপ।

যদিও এই দ্বীপের কেতাবি নামও রয়েছে। ‘লা দ্য কুইমাদ‍া গ্রানাদে’ নামে এটি প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ।   দ্বীপটি অবস্থিত আমাজন সংলগ্ন ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশে ব্রাজিলের সাও পাওলো সমুদ্র উপকূলে।

সাও পাওলো উপকূলে সোনালী তীক্ষ্ম আকৃতির মাথা সদৃশ এই সাপের ‍বসবাস। বোথরোপস ইনসুলারিস নামের এই সাপ কেবল এ অঞ্চলেই বাস করে। সাধারণ বিষধর সাপের চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বিষধর এই সাপ পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ হিসেবেও স্বীকৃত।

এরা আকাশে উড়ন্ত পাখিকে ছো মেরে মুহূর্তে বিষের সাহায্যে নিস্তেজ করে উদরপূর্তি করে। এদের বিষ এতোই ভয়ানক যে মানুষের মাংসকে মুহূর্তে গলিয়ে ফেলতে পারে।

রূপকথার মতো শোনালেও বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও বিষধর এই সাপের অস্তিত্ত্ব রক্ষায় ব্রাজিল সরকার তাই
লা দ্য কুইমাদ‍া গ্রানাদে দ্বীপে মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যদিও অনেকেই এর আগেই বোকামি করে ওই এলাকায় গিয়েছেন।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন ফর নেচার কর্তৃক ভয়ানক বিপদজনক প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এই রাজ্যের বাসিন্দাদের।

বোথরোপস ইনসুলারিস দেখতে উজ্জ্বল হলুদাভ ও বাদামী বর্ণের। এরা গড়ে ২৮ ইঞ্চি এবং সর্বোচ্চ ৪৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। মাথা তীক্ষ্ম আকৃতির বিধায় একে লানচিহেড ভাইপার নামেও ডাকা হয়। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যুর কারণ এই সাপ।

জনমানবহীন নিজ রাজ্যে এরা সাধারণত পাখি খায়। তবে টিকিটিকিও এদের অন্যতম খাবার। এমনকি এরা অন্য ‍সাপও ভক্ষণ করে।

সাও পাওলোর সমুদ্র ঘেষা অপরূপ নৈসর্গিক এই দ্বীপের আকৃতি ৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন বর্গফুট। এটা পৃথিবীর একমাত্র জায়গা যেখানে এই প্রজাতির সাপ বাস করে। সাপের এই রাজ্যে জনমানবের বাস ন‍া থাকলেও প্রতিবছর সাপের ওপর গবেষণা করতে কিছু বিজ্ঞানীকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে ব্রাজিলের নৌবাহিনী উপলক্ষ্য অনুযায়ী এ এলাকায় আসে। এ সময় তারা ১৯০৯ সালের আগে তৈরি  বাতিঘরের কাছে তাবু গাড়ে।

তবে মনে করা হয় সাপের বিষময় রাজ্যেও নিয়মিত বণ্যপ্রাণী শিকারীদের আগমন ঘটে। তারা জানিয়েছে, লিচেনহেডের বিষ মহামূল্যবান। কালো বাজারে এর দাম প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার পাউন্ড। এদের অবলুপ্তির পেছনে এটাও একটা বড় ‍কারণ।

তবে এরা মূল ভূমিতে থাকা স্বগোত্রীয়দের চেয়ে খুব বেশি ভিন্নতর নয়। প্রচলিত রয়েছে, প্রায় ১১ হাজার বছর আগে সমুদ্র উচ্চতার কারণে ব্রাজিল থেকে এই দ্বীপ বিচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন এই সাপ এই দ্বীপে চলে আসে। এর বিষ অন্যান্য সাপের বিষের চেয়ে ৫ গুণ শক্তিশালী। এর কামড়ে একজন মানুশের সাত শতাংশ মৃত্যু সম্ভাবনা থাকে।

এই দ্বীপের ভয়বাহবতা নিয়েও গল্প-কথার কমতি নেই।   এর একটি হলো এক জেলের গল্প। সেই জেলে যার  নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দ্বীপে নৌকা ভিড়িয়েছিলেন। কিন্তু জেলেকে অভ্যর্থনা জানাতে ওৎ পেতে ছিল লিচেনহেডরা। পরে সর্প দংশনে নৌকায় তার লাশ পাওয়া যায়।
 
শেষ গল্পটা বাতিঘরের রক্ষীর। যিনি এই দ্বীপে পরিবার নিয়ে বাস করতেন। একদিন তারা বাসার জানালায় সাপ দেখে ভয়ে দৌড়াতে শুরু করেন তারা। পরে দ্বীপের পাশে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় তাদের লাশ পাওয়‍া যায়।

একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছন্ন সমুদ্র অন্তরীণ সাপের দ্বীপে গাছপালা ও তৃণ কমে যাওয়ায় এবং রোগের কারণে গত ১৫ বছরে এই দ্বীপের বাসিন্দাদের সংখ্যা অন্তত ১৫ ভাগ কমে গেছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন ফর নেচার এই প্রাণীকে বিপন্ন প্রাণী হিসেবে ‍তালিকাবদ্ধ করে রক্ষায় আগ্রহী।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।