ঢাকা: বিগত ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) স্লোগান ছিল ‘আবকি বার, মোদী সরকার’। কিন্তু কংগ্রেস নেতা অভিষেক মুন্নু সিংভি এই তো সেদিন অরুণ জেটলিকে সংসদের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে পেয়ে অনেকটা খোঁচা দিয়েই বললেন, বাস্তবতা হচ্ছে- ‘আবকি বার, জেটলি সরকার’।
শুধু কংগ্রেস নেতা সিংভি না, ভারতীয় গণমাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পর জেটলিকে বলা হচ্ছে দিল্লির ক্ষমতাকেন্দ্রের দ্বিতীয় ব্যক্তি।
মোদী অবশ্য নির্বাচনে জয়ের আগেই অরুণ জেটলিকে নিজের প্রধান সিপাহসালার হিসাবে ‘নিযুক্ত’ করে রেখেছিলেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি হাজির হয়েছিলেন জেটলির নির্বাচনী আসন পাঞ্জাবের অমৃতসরে।
সেখানে মোদী বিশাল নির্বাচনী জনসভায় জেটলিকে জনতার সামনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ‘অমূল্য হীরা’ বলে। আর কানে কানে বলে এসেছিলেন, আমি তোমাকে হারতে দেব না।
কিন্তু ৬২ বছরের জেটলিকে জীবনের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে নেমেই সেদিন হারতে হয়েছিলো। যদিও হারার পরেও পাঞ্জাবে এনডিএ শরিক আকালি দলের প্রধান প্রকাশ সিংহ বাদল তখন জেটলির নাম মোদী সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রস্তাব করেন। স্বচ্ছ আর অমায়িক ব্যবহারের জন্য খ্যাত জেটলি অবশ্য সেদিন কিছুটা বিব্রত হয়েছিলেন।
কিন্তু বাদলের মন্তব্য একেবারে অমূলক ছিলো না। মোদী তার ‘অমূল্য হীরা’র হাতেই তুলে দিলেন, অর্থ আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। দিল্লির যে চারটি মন্ত্রণালয়কে একত্রে ‘বিগ-ফোর’ বলা হয় তারমধ্যে জেটলি একাই সামলাচ্ছেন দুটি- ‘উত্তরের’ (নর্থ ব্লক) অর্থ আর ‘দক্ষিণের’ (সাউথ ব্লক) প্রতিরক্ষা।
অবশ্য দিল্লির রাজনীতিতে ‘তুখোড়’ পাঞ্জাবি-জেটলি এর আগেও অটল বিহারি বাজপেয়ি সরকারে তথ্য সম্প্রচার, আইন, বাণিজ্য ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে নেতৃত্ব দেন।
তবে ‘বিগ ফোরে’ জেটলি এই প্রথম। তাও আবার দু-দুটি মন্ত্রণালয়। ফলে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা যে এই পাঞ্জাবি-ব্রাহ্মণকে ‘মোদীর চাণক্য’ বলেন, তা নেহায়েত অমূলক না। কারণ, গুজরাট থেকে আসা নরেন্দ্র মোদীর দিল্লির সব ইস্যুতে ‘মুসকিল আসান’ হচ্ছেন এই জেটলি।
আর এ কারণেই কি মোদীর রাজনীতি আর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে জেটলির এতো প্রভাব?
তবে ‘চাণক্য’ প্রত্যক্ষভাবে ‘বিগ ফোর’ এর দুটি ‘বিগ’ সামলালেও তার অন্য দায়িত্ব হচ্ছে রাইসিনা হিলের সঙ্গে।
ভারতের পরিবেশ ও তথ্য সম্প্রচার বিষয়ক মন্ত্রী প্রকাশ জাভাদেকর অরুণ জেটলিকে মোদীর ‘দক্ষ সেনাপতি’ উল্লেখ করে বলেন, রাইসনা হিলের (রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে কিভাবে সমানতালে কাজ করতে হবে, সরকারের কেউ যদি খুব ভালভাবে জানে, সেটা অরুণ জেটলি। মোদী এখনো বহিরাগত।
এটার একটা ইতিহাসও আছে। বাজপেয়ির জামানায় অরুণ জেটলি যখন বাণিজ্যমন্ত্রী, প্রণব তখন সংসদের বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক। প্রণব কিন্তু তার আগেই নরসীমা রাওয়ের জামানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সামলে এসেছেন। ফলে অরুণ কখনোই প্রণবের কাছ থেকে শলা নিতে কার্পণ্য করেননি। আর সেই থেকেই দুজনের মধ্যে সহজ-মধুর সম্পর্ক।
উল্লেখ্য, ভারতীয় মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ চাণক্য। বলা হয়ে থাকে, চাণক্যের কাছ থেকেই শিক্ষা নিয়ে চন্দ্রগুপ্তের উত্থান শুরু।
চাণক্যকে অনেকে কৌটিল্যও বলে থাকেন। তার নামেই নামকরণ করা হয় বিখ্যাত ‘কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের’।
তাহলে গুরু চাণক্যের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েই কি ‘গুজরাটের চন্দ্রগুপ্তের’ দিল্লি উত্থান শুরু হয়েছিলো? রেডিফডটকম অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৪