ঢাকা: ১১৬ জন আরোহী নিয়ে পশ্চিম মধ্য আফ্রিকার দেশ বুর্কিনাফাসোর রাজধানী ওয়াগাদৌগৌ থেকে উড্ডয়নের ৫০ মিনিট পর থেকে নিখোঁজ থাকা আলজেরিয়ার এয়ার আলজেরির উড়োজাহাজটি মালির উত্তরাঞ্চলে ‘বিধ্বস্ত’ হয়েছে।
আলজেরিয়ার একজন বেসামরিক বিমান পরিবহন পরিবহন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে এ দাবি করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।
তবে, বিবিসি, এপি, এএফপি, সিএনএন’র মতো প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমগুলো এখনও উড়োজাহাজটি নিখোঁজ রয়েছে বলেই জানিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, উড়োজাহাজটি ওয়াগাদৌগৌ থেকে দুর্গম সাহারা মরুভূমি অতিক্রম করে আলজেরিয়ার ভূ-মধ্যসাগর তীরবর্তী রাজধানী আলজিয়ার্স যাচ্ছিল।
আলজেরিয়ান ওই বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে। ’ তবে কোথায় এবং কী কারণে এটি বিধ্বস্ত হয়েছে এ ব্যাপারে কিছু জানাননি তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বৃহস্পতিবার দুপুরে জানায়, এএইচ৫০১৭ নং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটটি উড্ডয়নের পৌনে এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর থেকে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ হারায়।
এয়ার আলজেরির উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আলজেরি প্রেস সার্ভিস (এপিএস) জানায়, বৃহস্পতিবার ওয়াগাদৌগৌ থেকে আলজিয়ার্সগামী উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের ৫০ মিনিট পর থেকে বিমান পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এটির সবরকমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
উড়োজাহাজটির সঙ্গে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সময় বুধবার দিনগত রাত ০১টা ৫৫ মিনিটে সর্বশেষ যোগাযোগ করা হয় এবং আন্তর্জাতিক সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটে এটির অবতরণ করার কথা ছিল।
এয়ার আলজেরি প্রতি সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করে চার ঘণ্টা দূরত্বের ওয়াগাদৌগৌ-আলজিয়ার্স রুটে। এএইচ৫০১৭ নিখোঁজ হওয়ার পর এর ভাগ্য অনুসন্ধানে জরুরি কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
উড়োজাহাজটির মালিক স্প্যানিশ এয়ারলাইন সুইফটএয়ার নিশ্চিত করে, পর্তুগিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা ডিসি-৯ উড়োজাহাজটিতে ১১০ যাত্রী ও ৬ জন ক্রু ছিলেন।
এয়ার আলজেরি জানায়, স্থানীয় সময় বুধবার দিনগত রাত ০১টা ১৭ মিনিটে এএইচ৫০১৭ উড্ডয়ন করে এবং স্থানীয় সময় ভোর ০৫টা ১০ মিনিটে অবতরণ করার কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, আলজিয়ার্স-বামাকো রুটে চলাচলকারী বিপরীত দিক থেকে আসা একটি উড়োজাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি এড়াতে এএইচ৫০১৭ এর পাইলটকে নির্দেশনা দেওয়ার সময় উড়োজাহাজটির গন্তব্য আলজেরিয়া সীমান্তের খুব বেশি দূরে ছিল না। অর্থাৎ রুট পরিবর্তন করার পরই উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হয়ে যায়।
অবশ্য আলজেরিয়ার বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী দাবি করেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণেই উড়োজাহাজটির পাইলটকে কন্ট্রোল রুম থেকে রুট পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছিল।
এর আগে, আলজেরীয় সংবাদ মাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে বিকেল ৫টার দিকে এনডিটিভির খবরে দাবি করা হয়, উড়োজাহাজটি নাইজারে বিধ্বস্ত হয়েছে।
অবশ্য, মিনিট বিশেক পরই এ ধরনের খবর পরিবর্তন করে নিখোঁজ থাকার খবরই প্রচার করতে থাকে এনডিটিভি। সন্ধ্যার পর ফের রয়টার্সের বরাতে উত্তর মালিতে বিধ্বস্ত হওয়ার খবর জানিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমটি।
তবে, এখন পর্যন্ত উড়োজাহাজটির সঙ্গে কন্ট্রোল রুমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলেই জানিয়ে যাচ্ছে বিবিসি, রয়টার্স, এপি, এএফপি, সিএনএন’র মতো প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমগুলো।
নিখোঁজ উড়োজাহাজটিতে ১১০ যাত্রী ও ৬ ক্রু মিলিয়ে মোট ১১৬ জন আরোহী ছিলেন। এদের মধ্যে ফ্রান্সের নাগরিকই ছিলেন ৫১ জন। এছাড়া, বুর্কিনফাসোর নাগরিক ছিলেন ২৭ জন, লেবানিজ ৮ জন, আলজেরিয়ান ৬ জন, কানাডিয়ান ৫ জন, জার্মান ৪ জন, লুক্সেমবার্গের দুই জন এবং একজন করে ছিলেন সুইস, বেলজিয়ান, মিশরীয়, ইউক্রেনিয়ান, নাইজেরিয়ান, ক্যামেরুনিয়ান ও মালিয়ান। আর ছয় ক্রু’ই ছিলেন স্প্যানিশ নাগরিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৪/আপডেট ২০০৪ ঘণ্টা
** আট দিনে তিনটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা!
** আলজেরীয় প্লেনটিকেও ভূপাতিত করা হয়েছে!
** ১১৬ যাত্রীবাহী আলজেরিয়ান উড়োজাহাজ ‘নিখোঁজ’
** প্লেনযাত্রীদের পরিচয় মিলেছে, ৫১ জনই ফরাসি