ঢাকা: বিতর্কিত ‘আধ্যাত্মিক’ নেতা তাহির উল-ক্বাদরি ও ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খানের বিক্ষোভের ডাকে অস্বস্তিতে পড়েছে পাকিস্তান সরকার। সরকার পতনে এ দু’পক্ষের আন্দোলন কর্মসূচির ক’দিন আগ থেকেই জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় ‘নিরাপত্তা জোরদারে’ রাজধানীজুড়ে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বিতর্কিত ভূমিকার জন্য পরিচিতি তাহির উল-ক্বাদরি আগামী ১০ আগস্ট দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। সমর্থকদের নিয়ে রাজধানী ইসলামাবাদে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতাসীনদের জেলে নিক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
অপর দিকে, সরকারের পতন ও নতুন নির্বাচন দাবিতে ১৪ আগস্ট রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার ও অন্যতম বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরান দাবি করেন, স্বাধীনতা দিবসে পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে তার দল।
ক্বাদরি ও ইমরান খানদের এ বিক্ষোভের ডাকে বেকায়দায় পড়ে গেছে নওয়াজ শরিফের মুসলিম লিগের নেতৃত্বাধীন সরকার। যদিও বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় ক’দিন থেকে রাজধানীজুড়ে মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী। তথাপি এ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে অনেক গুঞ্জনও ডালপালা মেলছে পাকিস্তানজুড়ে।
প্রখ্যাত কলাম লেখক ইজাজ হায়দার বলেন, সেনাবাহিনী কারও দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে কিনা তা বলা যাচ্ছে না, তবে তারা (সেনাবাহিনী) বেসামরিক সরকারের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নানা কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচিত ক্বাদরি ও ইমরানদের এ ধরনের আবির্ভাবকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন পাকিস্তানিরা। কেউ কেউ ধন্দে পড়ে গেছেন, নওয়াজ শরিফের সরকারকে চাপে রাখার জন্য সেনাবাহিনী কাউকে (ক্বাদরি অথবা ইমরান) ব্যবহার করছে, নাকি সেনাবাহিনীকে কেউ (দেশীয় বা আন্তর্জাতিক পক্ষ) ব্যবহার করছে।
দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে পাকিস্তানজুড়ে নন্দিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের প্রসঙ্গটি সামনে উঠে আসছে, অর্থাৎ জঙ্গি দমনে সরকার ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে যথেষ্ট সাফল্য দেখানোয় দু’পক্ষের মধ্যে সন্তোষজনক বোঝাপড়া চলছে। সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্বে বিদেশিরা নানামুখি ‘সুবিধা’ নিয়ে থাকে, কিন্তু এ বোঝাপড়া তাদের (বিদেশি) স্বাভাবিকভাবেই ভালো লাগছে না, দ্বন্দ্বটা রেখে দিতেই নতুন কূটচালের শঙ্কা জাগছে পাকিস্তানিদের মনে।
যদিও ক্বাদরি-ইমরানরা তাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন, রাজনীতিতে নাক গলানোর কোনো ইচ্ছে নেই বলে ভাব প্রকাশ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনীও।
কিন্তু পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রায় অর্ধেক সময়ই সেনাবাহিনী শাসন করেছে বলে এখনই এ ধরনের গুঞ্জনের ‘শেষ’ দেখছেন না বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৪