ঢাকা: তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) নেতা রজব তায়্যেব এরদোগান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
রোববার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে এ জয়ের মাধ্যমে দু’দফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা একেপি নেতা এরদোগানের রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়লো।
প্রথম পর্যায়ের ভোটে এরদোগান ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও তার আর দরকার পড়ছে না, সে হিসেবে এরদোগানকে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুলের উত্তরসূরী বলা যাচ্ছে।
তাছাড়া, নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করেছেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সাবেক মহাসচিব একমেলুদ্দিন এহসানোগলু। এই প্রভাবশালী কূটনীতিক কট্টর বামপন্থি রিপাবলিকান পিপল’স পার্টি (সিএইচপি) ও কট্টর ডান পন্থি ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) সমর্থনে লড়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, ৭ কোটি ৬০ লাখ জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে ৫ কোটি ৩০ লাখ ভোটারের মধ্যে ৯৯ শতাংশ ভোটারই তাদের অধিকার প্রয়োগ করেছেন। এ ভোটারদের মধ্যে এরদোগান ৫২ শতাংশের সমর্থন পেলেও এহসানোগলু পেয়েছেন ৩৮ শতাংশের ভোট। আর এ দু’জনের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সেলাহাত্তিন দেমিরতাস পেয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ ভোট।
রাজধানী আঙ্কারায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশটির সর্বোচ্চ নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান সাদি গুবেন বলেন, নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে এরদোগান সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছেন। আমরা ৯৯ শতাংশ ভোটগ্রহণ করেছি। পূর্ণাঙ্গ ফলাফল আগামীকাল (সোমবার সকালে) ঘোষণা করা হবে।
এ ফলাফল ঘোষণার পর আঙ্কারায় দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে আনন্দ সমাবেশে সমর্থকদের উদ্দেশে উচ্ছ্বসিত এরদোগান বলেন, আজ জাতি ও গণতন্ত্র আবারও জয়লাভ করেছে...আজ, বৃহত্তর তুরস্ক আবারও জয়লাভ করেছে। এই জনপ্রিয় ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করায় কানকায়া (প্রেসিডেন্টের বাসভবন) ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব দূর হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ, জীবনাচার, বিশ্বাস ও জাতিগোষ্ঠীর ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু আমরা সবাই এ দেশের সন্তান এবং আমরাই এ রাষ্ট্রের মালিক।
তুরস্কের রাজনীতিতে রোববারের নির্বাচনকে মাইলস্টোন হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কারণ দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দায়িত্ব জনগণকে দেওয়া হয়, যে প্রেসিডেন্ট এবার থেকে নির্বাহী ক্ষমতা রাখবেন বেশি। বলে রাখা যেতে পারে, এরদোগানের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা বাড়ানোর (অনেকটা রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মতো) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধান বিরোধী প্রার্থী এহসানোগলু পরাজয় স্বীকার করে বলেন, আমি মিস্টার প্রধানমন্ত্রীকে (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এরদোগান) অভিনন্দন জানাই এবং তার সাফল্য কামনা করি।
বিরোধীদের অভিযোগ, এরদোগান ধর্মনিরপেক্ষতাকে খাটো করে তুরস্ককে স্বৈরতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে, এরদোগানের সমর্থকরা মনে করেন, ২০০০ সাল উত্তর তুরস্কের উত্তাল রাজনীতি সামাল দিয়ে দেশকে জাদুকরের মতো সাফল্যের দিকে টেনে নিয়েছেন ‘ক্যারিশম্যাটিক লিডার’ এরদোগান।
দেশটির একজন রাজনীতি বিশ্লেষক বলেন, এই প্রথম তুরস্কের কোনো প্রভাবশালী রাজনীতিক জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্টের আসনে বসলেন। এরদোগান যে পরিবর্তন চেয়েছেন, জনগণও তার ইচ্ছায় সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রকে সংসদীয় প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল প্রক্রিয়ায় নিতে সমর্থন দিয়েছে।
অবশ্য, অপর এক বিশ্লেষক ও ইস্তাবুলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোরে কালিস্কান বলেন, তুরস্ক এখন থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মতো কার্যক্ষমতাসম্পন্ন একজন প্রেসিডেন্ট দেখতে পাবে, যিনি নিজেই কোনো বিধান জারি, গণভোট আহ্বান, নতুন সংসদীয় নির্বাচন আহ্বান, নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ, অন্য মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ আমলা নিয়োগের ক্ষমতা রাখবেন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশীয় রাজনীতিতে নতুন নতুন ইতিহাস গড়তে যাওয়া এরদোগান এখন বিশ্বরাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বও। সংঘাতপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ইউরোপের মধ্যবর্তী দেশ হিসেবে দেশটির নীতি-সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেও।
২০০২ সাল থেকে দু’দফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা এরদোগান আগামী ৫ বছর তুরস্কের হয়ে কী করেন এখন সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৬ ঘণ্টা, ১১ আগস্ট ২০১৪/আপডেট ০৯৫০ ঘণ্টা