ঢাকা: ভারত রাষ্ট্রকে উন্নত করতে গ্রাম উন্নত করার ওপর জোর দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শুক্রবার বিশ্বের অন্যতম উদীয়মান পরাশক্তি দেশটির ৬৮তম স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির লাল কেল্লা ময়দানে দেওয়া ভাষণে তিনি এ জোর দেন।
মোদী বলেন, আমরা যদি ভারতকে উন্নত করতে চাই, তবে আমাদের গ্রামগুলোকে উন্নত করতে হবে। ২০১৬ সালের মধ্যে প্রত্যেক এমপিকে (লোকসভা সদস্য) কমপক্ষে একটি করে আদর্শ ও উন্নত গ্রাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠানের বুলেটপ্রুপ মঞ্চে উপস্থিত হন ছোট হাতার কুর্তা, লাল পাগড়ি ও সাদা পাজামা পরিহিত মোদী।
ঐতিহাসিকভাবে এই অনুষ্ঠান খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি) জন্য বরাদ্দ থাকলেও এবারই মোদীর ভাষণ শুনতে লাল কেল্লা ময়দানে আসন নেওয়ার সুযোগ পান ১০ হাজার সাধারণ মানুষ।
ভাষণের শুরুতেই নিজেকে ‘প্রধান সেবক’ হিসেবে উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘আমি আপনাদের কথা দিতে পারি, আপনারা যদি ১২ ঘণ্টা কাজ করেন, আমি করবো ১৩ ঘণ্টা, আপনারা যদি ১৪ ঘণ্টা কাজ করেন, আমি করবো ১৫ ঘণ্টা! কেন? কারণ আমি প্রধানমন্ত্রী নই, প্রধান সেবক। ’
তিনি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (সার্ক) দেশগুলোকে (বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) নিয়ে কাজ করে দারিদ্র্য দূরীকরণের স্বপ্নের কথা জানিয়ে বলেন, আমরা একসঙ্গে কাজ করে বিশ্বপরাশক্তি হয়ে উঠতে পারি। সার্কভুক্ত দেশগুলো দারিদ্র দূরীকরণে একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
নিজের শপথ অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সরকার প্রধান বা তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার বিষয়টি আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিরই ইতিবাচক লক্ষণ বলে উল্লেখ করেন মোদী।
তিন মাস বয়সী তার সরকার শাসন নয়, দেশ ও জনগণের সেবা করবে বলে প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে মোদী দেশকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। একইসঙ্গে ভারতকে সমৃদ্ধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সে দেশে বিনিয়োগের আহ্বানও জানান তিনি।
মোদী বলেন, যখন আমরা কেনো ধর্ষণের খবর শুনতে পাই, আমাদের মাথা লজ্জায় অবনত হয়ে যায়। যারা ধর্ষণ করে তারা নিশ্চয় কারও না কারও সন্তান। নষ্ট পথে যাওয়ার আগে অবশ্যই ছেলেদের থামানো উচিত।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন কোনো মেয়ে ১২ বছর বয়সেও বাইরে যেতে চায়, তখন তাকে জেরা করে জানতে চাওয়া হয় ‘তুমি কোথায় যাচ্ছো?’ কিন্তু যে মা-বাবা তার মেয়েকে এ প্রশ্ন করেন তারা কি তাদের ছেলেকেও এই প্রশ্ন করেন?
মোদী বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কিন্তু সামাজিক জীব হিসেবে আমাদের মা-বাবারই দায়িত্ব রয়েছে সন্তানকে সঠিক-ভুলের পার্থক্য বোঝানোর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন একুশ শতকে বাস করছি। কিন্তু এখনও কোনো নারীর প্রতি আমাদের সম্মান নেই এটা ভাবা যায় না। প্রাকৃতিক কাজে সাড়া দিতে হলে তাদের অন্ধকার হওয়ার (রাত) জন্য অপেক্ষা করতে হয়, ভাবা যায়, এজন্য তাদের কতো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়?
মোদী বলেন, লাল কেল্লা ময়দানে শৌচাগার নিয়ে কথা বলায় অনেকে হয়তো আমার সমালোচনা করবেন। কিন্তু আমি অনেক দরিদ্র পরবার থেকে এসেছি। আমি খুব কাছ থেকে দারিদ্র্য দেখেছি। দরিদ্রদের মর্যাদা দিতে এই শৌচাগার সমস্যা সমাধান থেকেই শুরু করতে হবে আমাদের।
কন্যাসন্তানকে অবজ্ঞার চোখে না দেখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মোদী বলেন, ‘আমি চিকিত্সকদের প্রতি আহ্বান জানাবো, নিজেদের পকেট ভারী করতে গর্ভেই কোনো কন্যাকে হত্যা করবেন না। কমনওয়েলথ গেমসে ২৯ জন মেয়ে পদক জিতেছে।
এক কন্যা সন্তান পাঁচ পুত্র সন্তানের চেয়েও বেশি উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘আমি এমনও পরিবার দেখেছি যেখানে পাঁচ ছেলের চেয়ে এক মেয়েই মা-বাবার সেবাযত্ন করেছে বেশি, মা-বাবাকে বেশি সন্তুষ্ট রেখেছে। ’
বিজেপি দলীয় প্রধানমন্ত্রী তার ৬৫ মিনিটের দীর্ঘ ভাষণে বলেন, ভারতের উচিত আগামী চার বছরের মধ্যে প্রত্যেক বাড়িতে শৌচাগার স্থাপন নিশ্চিত করা এবং প্রত্যেক স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা শৌচাগার নির্মাণ করা।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো দেওয়া স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মোদী বলেন, ‘আসুন, নতুন ভারত বিনির্মাণ করি। বিক্রি যেখানেই করুন, এখানেই (ভারত) তৈরি করুন। (কাম, মেক ইন ইন্ডিয়া, সেল এনিহোয়ার, বাট ম্যানুফ্যাকচার হেয়ার (ইন্ডিয়া)। ’
এছাড়া, দেশজ পণ্য রফতানির মাধ্যমে বিশ্বের আনাচে কানাচে ভারতকে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৪