ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলি নৃশংসতা

রক্ষা পায়নি চিড়িয়াখানার অবোধ পশুরাও

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৪
রক্ষা পায়নি চিড়িয়াখানার অবোধ পশুরাও ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: গাজায় প্রায় এক মাস ধরে চালানো ইসরায়েলি নৃশংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় দুই হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন আরও দশ হাজার মানুষ।

গাজা রূপ নিয়েছে বিধ্বস্ত জনপদে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ১৬ হাজার ৮শ’ বসতবাড়ি।

ইসরায়েলের এই তাণ্ডব এত ভয়াবহ ছিলো যে, তাদের নিষ্ঠুরতা থেকে রক্ষা পায়নি চিড়িয়াখানার অবোধ পশুরাও।

ইসরায়েলি জঙ্গি বিমানগুলো বোমা ফেলে গাজার চিড়িয়াখানায়। ইসরায়েলি তাণ্ডবে প্রাণ হারায় ছোট্ট চিড়িয়াখানাটির অর্ধেকরই বেশি প্রাণী। নিজের খাঁচাতেই মরে পড়ে থাকে এগুলো।

তবে হামলার মুখে জীবন বাঁচাতে ব্যস্থ হয়ে পড়লেও চিড়িয়াখানার অবোধ পশুদের জন্য খাবার ও পানি নিয়ে পাশে দাঁড়ান গাজার কয়েকজন বাসিন্দা। তাদেরই একজন চিড়িয়াখানা সংলগ্ন পার্কের কর্মী ওয়াসেফ হামাদ।

বোমা হামলার মধ্যে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের জন্য খাবার ও পানি জুগিয়ে গেছেন তিনি সহ আরও কয়েকজন।

গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত লাহিয়ায় অবস্থিত উপত্যকার একমাত্র চিড়িয়াখানা বিসান জু। ইসরায়েল সীমান্তবর্তী ৬০ একরের একটি পার্কের এক কোনে আড়াই একর জমির ওপর অবস্থিত চিড়িয়াখানাটি।

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয় চিড়িয়াখানার পানির উৎস একটি কুয়া। ফলে হামাদ ও তার সহযোগীদের জন্য চিড়িয়াখানার পশুদের জন্য পানি যোগানোও কঠিন হয়ে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া প্রাণীদের মৃতদেহের গন্ধ এখনও ভেসে বেড়াচ্ছে চিড়িয়াখানার বাতাসে।

একটি খাঁচায় দেখা যায়, ধূসর রংয়ের পুরুষ বেবুন বসে আছে তার খাঁচায়। পাশে পড়ে আছে একটি নারী বেবুন এবং এই দম্পতির দু’টি বাচ্চা বেবুনের মৃতদেহ।

হামাদ জানান, নিজের খাঁচায় কাউকে ঢুকতে দিতে বাধা দিচ্ছে বেবুনটি। এমনকি তার একজন সহকর্মী ভেতরে ঢুকতে গেলে তার ওপর হামলা চালায় বেবুনটি। আরেক খাঁচায় পড়ে আছে ময়ুরের প্রাণহীন দেহ।

হামলার মধ্যেও যে প্রাণীগুলো বেঁচে গেছে ইসরায়েলি নৃশংসতায় তারাও যেন স্তব্ধ। আগন্তুক দেখলে খাঁচায় ভয়ে কুকড়ে যাচ্ছে প্রাণীগুলো। দেখলে মনে হয় কোনো কারণে আতঙ্কিত। হামলায় বেঁচে যাওয়া তিনটি সিংহও স্বভাবসুলভ হিংস্রতা পরিত্যাগ করে জবুথুবু হয়ে বসে আছে নিজেদের খাঁচায়।

হামাদ জানান, ইসরায়েলি হামলায় চিড়িয়াখানার সাতটি বানর, দু’টি উটপাখি, একটি হরিণ, দু’টি সারস, দু’টি শজারু, আটটি ঈগল সহ আরও বেশ কিছু প্রাণী মারা যায়। এছাড়া চিড়িয়াখানায় থাকা কয়েক ডজন পাখিও মারা যায় ইসরায়েলি বোমায়।

তবে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের রক্ষায় এগিয়ে আসে নিকটবর্তী বসতির বাসিন্দা ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো। তাদের একজন ১৫ বছর বয়সী ইবরাহী নিদেক। চিড়িয়াখানা থেকে তার বাড়ির দূরত্ব দেড়শ’ মিটার।
 
ইবরাহী বলেন, হামলার মধ্যে আমি বাড়িতেই ছিলাম। মাঝে মাঝেই চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের দেখতে আসতাম আমি।

বালতিতে করে পানি এনে তৃষ্ণার্ত  প্রাণীগুলোকে নিয়মিত ভিজিয়ে দিয়ে গেছেন ইবরাহী। তিনি বলেন, হামলার মধ্যেই আমি এক বালতি পানি নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু তা যথেষ্ট ছিলো না। তবে পরের দিন আমার সঙ্গে কয়েকজন বন্ধু যোগ দেয়। আমরা খাঁচার ভেতরে থাকা উটপাখিগুলোকে ভিজিয়ে দেই। পাশাপাশি সিংহের খাঁচাতেও রশি দিয়ে পানি নামিয়ে দিতাম।

গাজার ওপর অবরোধ থাকায়, এই চিড়িয়াখানার অধিকাংশ প্রাণীকেই সুরঙ্গপথে মিশর থেকে গাজায় নিয়ে আসা হয়। তবে মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসির ক্ষমতাচ্যুতির পর মিশরের নতুন শাসকরা গাজার সঙ্গে মিশরের সব সুরঙ্গ ধ্বংস করে দেয়।

এ পরিস্থিতিতে মৃত প্রাণীগুলোর স্থলে নতুন প্রাণী নিয়ে আসা খুবই কঠিন হবে বলে মনে করেন হামাদ। তিনি বলেন, সিংহগুলো অসুস্থ, তাদের ওষুধ প্রয়োজন কিন্তু আমরা মিশর থেকে আনতে পারছি না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।