ঢাকা: ইরাকে সুন্নি বিদ্রোহীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে মার্কিন বিমান হামলার জবাবে জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক স্টেট (আইএস) মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফলির শিরশ্চ্ছেদ করেছে। জঙ্গি সংগঠনটি সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।
জেমস ফলি ২০১২ সালের ২২ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ফলির মতো আরো অন্তত ৩৯ জন গণমাধ্যমকর্মী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিখোঁজ হয়েছেন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে। এদের মধ্যে ২০ জনই যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে নিখোঁজ হন। সেখানে গত দুই বছর ধরে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহীরা। এতে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ বিরাজ করছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে কর্মরত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) ১৯৮২ সাল থেকে সারাবিশ্বে যেসব সাংবাদিক নিখোঁজ হয়েছেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। যাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সিপিজের তথ্য মতে, মেক্সিকোতে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক নিখোঁজ হয়েছেন, ১৩ জন। তারপরই রয়েছে রাশিয়া, সেখানেও ৮ জন সাংবাদিক নিখোঁজ হওয়ার পর আর ফিরে আসেননি।
২০১৩ সালে সারাবিশ্বে অনেক সাংবাদিককে সাজা ভোগ করতে হয়। তুরস্কে ৪০ জন সাংবাদিক সাজা ভোগ করছেন। তুরস্কের পিছনে রয়েছে ইরান, সেখানে ৩৫ জন সাংবাদিক কারাগারে আছেন।
সিপিজে চেয়ারম্যান সান্ড্রা রোয়ে বলেন, ২০১৩ সালে প্রায় দুই শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী জেলের ঘানি টেনেছেন। তবে তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালটি ছিলো ভয়ানক। তখন বিভিন্ন রাষ্ট্র ২৩২ জন সাংবাদিককে জেলে আটক রাখে।
এছাড়া ১৯৯২ সাল থেকে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে সারাবিশ্বে প্রায় এক হাজার ৭০ জন প্রতিবেদক ও গণমাধ্যমকর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। যদিও সিপিজে মনে করছে, প্রকৃত সংখ্যা আসলে এর থেকে অনেক বেশি।
কারণ ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল, এ সময়ে কর্মরত সাংবাদিকদের নিহতের ঘটনা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। এ তিন বছরের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছর অন্তত ৭৮ জন সাংবাদিক তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন।
২০১৪ সালে অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক সংঘাতপ্রবণ এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেদের জীবন বিসর্জন দেন।
১৯৯২ সালটি সাংবাদিকদের জন্য ইরাক ছিলো ‘নরকের’ মতো। এক বছরেই সেখানে ১৬৫ জন সাংবাদিক কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন। ওই সময়ে ইরাকের পরেই সাংবাদিকদের কাছে আতঙ্ক ছিলো ফিলিপাইন। ১৯৯২ সালে সেখানে ৭৬ জন সাংবাদিক প্রাণ হারান।
সিপিজে মনে করে, এখন সারাবিশ্বের মধ্যে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে খারাপ কর্মস্থল হচ্ছে সিরিয়া।
আইএস যখন মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফলির শিরশ্চ্ছেদের ভিডিওটি প্রকাশ করে তখন সেখানে নিখোঁজ আরেক মার্কিন সাংবাদিক স্টিফেন জোয়েলকে দেখা যায়। জোয়েলকে সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট অস্ত্রধারী আইএস জঙ্গিরা তুলে নিয়ে যায়।
আইএস জঙ্গিরা হুমকি দিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরাকে জঙ্গিদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা বন্ধ না করে তাহলে জোয়েলকেও হত্যা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৪