ঢাকা: আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দিয়েও পিছু হটলো পাকিস্তানে আন্দোলনরত তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও আওয়ামী তেহরিক (পিএটি)। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা সংলাপে বসতে বুধবার বিকেলেও রাজি হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে সন্ধ্যা না গড়াতেই বিপরীত কথা শোনালেন পিটিআই’র সহ-সভাপতি শাহ মাহমুদ কোরেশী।
পিটিআই ও পিএটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, আগাম নির্বাচন ও দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবিসহ বিক্ষোভকারীদের ৬টি দাবির মধ্যে প্রথম দাবিই হলো প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার ভাই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পদত্যাগ।
কোরেশী সাফ জানিয়ে দিয়ে বলেন, নওয়াজের পদত্যাগের মধ্য দিয়েই কেবল সংলাপ শুরু হতে পারে।
যদিও কোরেশীর বক্তব্যের আগে জামায়াতে-ইসলামীর প্রধান তাবারুল হক জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের সবগুলো দাবিই মানতে রাজি হয়েছে সরকার।
কিন্তু জামায়াত প্রধানের এ বক্তব্যের কোনো সত্যতা নিশ্চিত করেনি সরকারপক্ষ।
রাজধানী ইসলামাবাদের রেড জোনে (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা) বিক্ষোভের মধ্যেই টুইটারে পিটিআই প্রধান ইমরান খান জানিয়েছেন, বুধবার রাতে ডি-চকে ‘আজাদি’ উদযাপন করবেন তারা।
সংবাদ মাধ্যমগুলো মনে করছে, ইমরান-ক্বাদরিদের এ বিক্ষোভের মাধ্যমে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অচলাবস্থা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান এবং বিতর্কিত আধ্যাত্মিক নেতা তাহির উল ক্বাদরির নেতৃত্বাধীন ‘আজাদি মার্চ’ বুধবার ভোরে রাজধানী ইসলামাবাদের রেড জোনে (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা) পৌঁছেছে এবং এখন পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছে।
সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও কার্যালয় এবং পশ্চিমা দেশগুলোর দূতাবাসের এই রেড জোনে অবস্থানরত অবস্থানরত বিক্ষোভ থেকে মুসলিম লিগের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ তার সরকারকে পদত্যাগের দাবি জানানো হচ্ছে।
দাবি আদায় না হলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ইমরান, আর এমপি-মন্ত্রীদের জিম্মি করার নির্দেশ দিয়েছেন ক্বাদরি।
সরকারের উদ্দেশে হুমকি দিয়ে ইমরান বলেন, পদত্যাগ না করলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গুড়িয়ে দেওয়া হবে। কেউ জনতাকে ঠেকাতে পারবে না।
আরও এক ধাপ সামনে এগিয়ে ক্বাদরি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কাউকে বের হতে (পার্লামেন্ট থেকে) দেওয়া হবে না, ঢুকতেও দেওয়া হবে না। এমনকি মসজিদ থেকেও না।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রেড জোন ও এর আশপাশে বুধবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার ইমরান ও ক্বাদরি সমর্থক অবস্থান করছিলেন।
ইমরান-ক্বাদরিকে আদালতে তলব
এদিকে, সংবিধানবহির্ভূতভাবে সরকারের পদত্যাগ দাবি ইমরান খান ও তাহির উল ক্বাদরিকে বৃহস্পতিবার আদালতে তলব করা হয়েছে।
মুলতান বার অ্যাসোসিয়েশনের দায়ের করা একটি পিটিশনের শুনানি শেষে তাদের ওপর এ সমন জারি করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৪ বিচারপতির বেঞ্চ।
এছাড়া, চলতি বিক্ষোভের ব্যাপারে আইন সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকেও জবাব দিতে নোটিশ জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট
ইমরান-ক্বাদরির ওপর অসন্তুষ্ট অন্য বিরোধী দলগুলো
গত নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে নওয়াজ শরিফ সরকারের পদত্যাগ দাবি করে নতুন নির্বাচন চেয়ে ইমরান-ক্বাদরিরা আন্দোলনে নামলেও তাদের এ দাবিতে সংহতি নেই অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের। এমনকি ইমরান-ক্বাদরিরা অন্য বিরোধী দলগুলোকে রাজপথে নামার আহ্বান জানালেও তারা উল্টো ইমরান-ক্বাদরিদেরই আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিরোধী দলগুলো চাইছে না, ইমরান-ক্বাদরির এ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে কোনো অসাংবিধানিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক।
সেনাবাহিনীর ভূমিকা অস্পষ্ট
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, পিএটি ও পিটিআই সমর্থকদের বিক্ষোভ ইসলামাবাদের রেড জোন অভিমুখে রওয়ানা দিলে ওই এলাকার সুরক্ষায় ৭শ’ সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়।
সেনাবাহিনীও বিক্ষোভকারীদের সংসদ, সরকারি ভবন ও রেড জোটে অস্থিরতা সৃষ্টির ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
কিন্তু এ সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালনকালেই ভোরে রেড জোনে প্রবেশ করে সংসদ ভবনের বাইরে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় বিক্ষোভকারীদের কোনো রকমের বাধা দিতে দেখা যায়নি সেনা সদস্যদের।
পাকিস্তানের ইতিহাসের দুই তৃতীয়াংশ সময়ই সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে গেছে বলে ইমরান-ক্বাদরিদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদজুড়ে অজানা শঙ্কা ডানা মেলছে। বিশেষ করে নওয়াজের পদত্যাগের ঘোষণা আসা না পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের অবস্থান, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হামলার ঘোষণায় এ শঙ্কা বেড়ে চলেছে দ্রুত।
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৪