ঢাকা: সন্তানের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধা, তার নিরাপত্তা এবং তার ছবি বা তথ্যের বিকৃতির ব্যাপারে উদ্বেগ বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের মা-বাবাদের। এ কারণে নিজের শিশু সন্তানের ছবি বা তার কোনো পরিচয়-তথ্য ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকছেন তারা।
এ রকমের সিদ্ধান্ত নেওয়া মা-বাবাদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর জনক দেশটিতে।
একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, যখন কিছু মা-বাবা, নানা-নানী বা দাদা-দাদী এবং অন্য স্বজন তাদের শিশুদের একেবারে অল্প বয়সের ছবি অনলাইনে প্রকাশ করতে অনেক বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছেন, তখনই এ ধরনের সচেতনতার মাত্রা বৃদ্ধির খবর আসছে।
নিজের এক বছর বয়সী শিশুসন্তানের কথা উল্লেখ করে গৃহিণী মা সোনিয়া রাও বলেন, আমার সন্তানের ছবি অন্য অপরিচিত কেউ ফেসবুকে দেখুক, বা এর মাধ্যমে তার ছবি ইন্টারনেট ছড়িয়ে পড়ুক-এটা আমার ভাল লাগে না। আমি জানি না, কেন এ নিয়ে আমি অস্বস্তিবোধ করি।
রাও বলেন, আপনি নতুন কারও আইডিতে ঢুকবেন, তখন দেখতে পাবেন তার ছবি, ভিডিও, অন্য তথ্যাদি; এমনকি তিনি কোথায় আছেন-যাচ্ছেন সেটাও। এ ব্যাপারটি আমার ভালো লাগে না।
রাওয়ের মতো অন্য মা-বাবারাও তাদের সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, সে দেখতে কেমন-এটা অনলাইনে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন না। সন্তানের ছবি বা তথ্য অনলাইনে প্রকাশের ব্যাপারে অনাগ্রহী মা-বাবাদের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে।
এক্ষেত্রে অবশ্য আরও কিছু কারণ আছে। যেমন- কিছু মা-বাবা তাদের শিশু সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন; কিছু মা-বাবা তাদের সন্তানদের ছবি ও তথ্যের নিরাপত্তা বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন; আবার কিছু মা-বাবা তাদের সন্তানের আত্মনির্ভরতাশীলতাকেই সম্মান করেন-যেন নিজেদের তথ্য ও ছবি অনলাইনে প্রকাশ হবে কিনা সেটার সিদ্ধান্ত সন্তানরাই বড় হয়ে নেবে।
সোনিয়া রাও বলেন, আমি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে অনেক বেশি সক্রিয়। আমার সন্তানের জন্মের আগে প্রিয় কুকুরটিসহ অনেক ছবি তুলতাম এবং সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় প্রকাশ করতাম। কিন্তু সন্তানের জন্মের পর তার সঙ্গে কুকুরের অনেক সুন্দর ছবি তুললেও সেটা অনলাইনে ছাড়িনি। কেবল টেক্সট মেসেজ ও ই-মেইলের মাধ্যমেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু-স্বজনদের সঙ্গে ওসব ছবি শেয়ার করেছি।
রাওয়ের মতোই সন্তানের ছবি ও তথ্য নিয়ে আপোস নেই সেন্ট লুইসের স্কট স্টেইনবার্গের।
তিনি বলেন, আমার সন্তান এখন কী করছে, ও রাস্তার কোন পাশ দিয়ে হাঁটে বা স্কুলের কোন কোণে আড্ডা দেয়-এটা যদি কাউকে না জানাতে চাই, তবে আমার উচিত হবে সেটা অনলাইনে না প্রকাশ করা। এতে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় আঘাতের পাশাপাশি নিরাপত্তার উদ্বেগও বাড়ে।
অবশ্য কোনো কোনো সামাজিক যোগাযোগ বিশ্লেষক মনে করেন, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকলে ফেসবুকের মতো অন্য সাইটগুলোর প্রাইভেসি অপশনের সহায়তা নিতে পারেন ব্যবহারকারীরা। যেমন- কোনো ছবি প্রকাশের আগে সেটিকে ‘ফ্রেন্ডস’, ‘পাবলিক’ কিংবা ‘অনলি মি’ বলে সেট করা, যার মাধ্যমে কারা কারা এ ছবি বা তথ্য দেখবে সেটা নির্ধারণ করে দেওয়া যায়। কিন্তু একান্তই সন্তানের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও আত্মনির্ভরতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে তার প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্তই মা-বাবাকে অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৪