ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগ ও আগাম নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় সংসদ (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) থেকে পদত্যাগের পত্র জমা দিয়েছেন পাকিস্তানের আন্দোলনরত তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সদস্যরা।
সংসদের স্পিকার আইয়াজ সাদিকের অনুপস্থিতিতে শুক্রবার সংসদ সচিবের কাছে পিটিআইয়ের সদস্যরা এ পদত্যাগপত্র জমা দেন।
পিটিআই’র ৩৪ সদস্যের সংসদ থেকে পদত্যাগের পত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দলটির সহ-সভাপতি শাহ মাহমুদ কোরেশী বলেন, আমরা সংবিধানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। আমরা স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পথে এগোনোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে, শুক্রবার পর্যন্তও ইসলামাবাদের রেড জোনে (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা) অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিল পিটিআই ও আওয়ামী তেহরিক (পিএটি)।
এ অবস্থান কর্মসূচির প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, পাকিস্তানে সংবিধানবহির্ভূত রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের জন্য যে চাপ দেওয়া হচ্ছে তার বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র।
পিটিআই প্রধান ও সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান এবং পিএটি প্রধান ও বিতর্কিত ‘আধ্যাত্মিক’ নেতা তাহির উল ক্বাদরির নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনের সপ্তাহান্তে দেওয়া আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামাবাদের চলমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেখিয়ে সহিংসতা থেকে বিরত থেকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে ওয়াশিংটন সকলপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে ইসলামাবাদের নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে কোনো গ্রহণযোগ্য পথ নয়। রাজনৈতিক পরিবর্তনে কোনো ধরনের সংবিধানবহির্ভূত চেষ্টার জোরালো বিরোধিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর শুক্রবারও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, কোনো সংবিধানবহির্ভূত পরিবর্তনেও বিশ্বাসী নয় ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানে ক্ষোভ প্রকাশ করে পিটিআই প্রধান ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিবৃতির মাধ্যমে সবকিছুতে তাদের নাক গলানোর ব্যাপারটিই স্পষ্ট হলো।
কূটনীতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখারও আহ্বান জানান ইমরান।
অপরদিকে, পিটিআই ও পিএটির সঙ্গে সরকারপক্ষের সংলাপ শুক্রবার পর্যন্তও স্থগিত রয়েছে। রাজধানী ইসলামাবাদের পুলিশের মহাপরিচালক আফতাব চিমাকে সরকারি নির্দেশে পদচ্যুত করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে পিটিআই সরকারের সঙ্গে সংলাপ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও পিটিআই’র সঙ্গে আন্দোলনরত আওয়ামী তেহরিকের (পিটিআই) প্রধান ও বিতর্কিত আধ্যাত্মিক নেতা তাহির উল ক্বাদরি অচলাবস্থা নিরসনে আলোচনার টেবিল উন্মুক্ত থাকার কথা জানিয়েছেন।
ইসলামাবাদের রেড জোনে (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা) পিটিআই ও পিএটি কর্মীদের অবস্থান সরিয়ে নিতে অভিযান চালানোর নির্দেশ পালনে অপারগতা প্রকাশ করায় আফতাবকে ইসলামাবাদ পুলিশ প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে পিটিআই এবং এ কারণেই তারা সংলাপ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকালে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে পিটিআই‘র সহ-সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশীর নেতৃত্বে সরকারের সঙ্গে ইসলামাবাদের একটি হোটেলে প্রথম দফা সংলাপে বসে ইমরানের দল। ওইদিন বিকেলে দ্বিতীয় দফায় সংলাপে বসার কথা ছিল পিটিআই ও সরকারপক্ষের। কিন্তু ইসলামাবাদ পুলিশ প্রধান আফতাবের পদচ্যুতির খবর জানার পরই সবরকমের আলোচনা-সংলাপ স্থগিত করে আন্দোলনরত দলটি।
আগাম নির্বাচন ও দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবিসহ বিক্ষোভকারীদের ৬টি দাবির মধ্যে প্রথম দাবিই হলো প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার ভাই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পদত্যাগ।
নওয়াজের পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান সংসদের উভয়কক্ষে
পিটিআই ও পিএটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের পদত্যাগ দাবি করা হলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান সংসদের নিম্নকক্ষ (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) ও উচ্চকক্ষ (সিনেট)।
প্রথমে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত আলোচনার পর ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস হয় এবং সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর শুক্রবারও এ সংক্রান্ত আলোচনার পর সিনেটে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস হয় এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
ইমরান-ক্বাদরির ওপর অসন্তুষ্ট অন্য বিরোধী দলগুলো
গত নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে নওয়াজ শরিফ সরকারের পদত্যাগ দাবি করে নতুন নির্বাচন চেয়ে ইমরান-ক্বাদরিরা আন্দোলনে নামলেও তাদের এ দাবিতে সংহতি নেই অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের। এমনকি ইমরান-ক্বাদরিরা অন্য বিরোধী দলগুলোকে রাজপথে নামার আহ্বান জানালেও তারা উল্টো ইমরান-ক্বাদরিদেরই আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিরোধী দলগুলো চাইছে না, ইমরান-ক্বাদরির এ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে কোনো অসাংবিধানিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক।
সেনাবাহিনীর ভূমিকা অস্পষ্ট
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, পিএটি ও পিটিআই সমর্থকদের বিক্ষোভ ইসলামাবাদের রেড জোন অভিমুখে রওয়ানা দিলে ওই এলাকার সুরক্ষায় ৭শ’ সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়।
সেনাবাহিনীও বিক্ষোভকারীদের সংসদ, সরকারি ভবন ও রেড জোটে অস্থিরতা সৃষ্টির ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
কিন্তু এ সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালনকালেই বুধবার ভোরে রেড জোনে প্রবেশ করে সংসদ ভবনের বাইরে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় বিক্ষোভকারীদের কোনো রকমের বাধা দিতে দেখা যায়নি সেনা সদস্যদের।
পাকিস্তানের ইতিহাসের দুই তৃতীয়াংশ সময়ই সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে গেছে বলে ইমরান-ক্বাদরিদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদজুড়ে অজানা শঙ্কা ডানা মেলছে। বিশেষ করে নওয়াজের পদত্যাগের ঘোষণা আসা না পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের অবস্থান, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হামলার ঘোষণায় এ শঙ্কা বেড়ে চলেছে দ্রুত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৪