কাবুল: আফগানিস্তানের কাবুলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ঐতিহাসিক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন। মঙ্গলবার গ্রিনিচ সময় ৭.৩০ মিনিটে শুরু হওয়া এ সন্মেলন প্রায় ছয় ঘন্টা ধরে চলে।
মূলত আফগানিস্তানের বর্তমান নিরাপত্তা অবস্থা, আন্তর্জাতিক অর্থ সাহায্য, বিদেশী সেনা প্রত্যাহার সহ দেশটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়গুলি নিয়েই আলোচনা করেন বক্তারা। উপস্থিত নীতি নির্ধারকদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য ও গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে কাবুল সম্মেলনের একটি সার-সংক্ষেপ নিচে উপস্থাপন করা হলো:
- আগামী ২০১৪ সালের মধ্যে তাঁর সরকার দেশটির আভ্যন্তরীন নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণে সক্ষম বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “২০১৪ সালের মধ্যে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী দেশের সকল সেনা ও আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিবে, এ বিষয়টি নিয়ে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ” দরিদ্রপীড়িত দেশটিতে আগামী তিন বছরের জন্য আরও অর্থ সাহায্য চাওয়াসহ দাতাদের দেয়া তহবিলের উপর আরও নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, “আমরা সবাই এ বিষয়ে একমত যে আফগান নেতৃত্ব ও মালিকানার সুষম পরিবর্তনই স্থিতিশীলতার প্রধান শর্ত। ”
- সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন দেশটির শাসন ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া এবং জাতীয় পুর্ণগঠনে আফগান নেতৃত্বকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “আফগান জনগনকে সুশাসন ও উন্নয়নের জন্য আরো দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও দায়িত্বশীল হতে হবে। ”
- মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি কিনটন সম্মেলনে বলেন, “আফগান সরকার অনেকগুলি জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর অধিকাংশ পদক্ষেপই, বিশেষত শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে তাঁদের কাজ আমাদের উৎসাহিত করেছে। এ পদক্ষেপগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনেক কাজ এখনও বাকি। ” একইসঙ্গে দেশটির পুনর্গঠনে নারীদের ভূমিকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে এই দেশটির সফলতার জন্য আফগান নারী এবং সুশীল সমাজ দলগুলির গুরুত্ব অপরিহার্য। ”
- ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হগ বলেন, “আফগান সরকার তার নিজস্ব ও আমাদের দেওয়া আর্থিক সাহায্যের সর্বোচ্চ সদ্বব্যবহার করছে কিনা সেদিকে আমাদের সবসময়ই দৃষ্টি রাখা উচিত। এর অর্থ হলো আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও বাজেট বাস্তবায়ন সহ দুর্নীতি রোধে সবসময় সচেষ্ট থাকার পথে অটল থাকা। ”
- আফগানরা দেশটির নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার পরও মিত্র দেশগুলির সেনাদের আফগানিস্তানে থেকে যাওয়ার বিষয়টির উপর জোর দিয়ে ন্যাটো প্রধান এন্ডারস ফগ রাসমুসেন বলেন, “সেসময় বিদেশী সেনারা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ”
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী আফগানিস্তানের জাতীয় বাজেট ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলে কাবুল সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
একইসঙ্গে নয় বছর ধরে চলমান আফগান যুদ্ধের সমাপ্তি টানার জন্য জঙ্গিদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন বিষয়ে প্রেসিডেন্ট কারজাইয়ের পরিকল্পনা সমর্থনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় গুরুত্বপূর্ণ এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১০