ঢাকা: বিশ্বে বর্তমানে স্থূলতা বেড়ে চলেছে ব্যাপকহারে। অনেকেই নেশার দ্রব্যের মতো অতিমাত্রায় খাবার খেয়ে থাকেন।
এমনই একটি সত্য ঘটনা জানা যাক। কয়েক বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় রিকি নাপুতি ও চেরিল নামের এক অতি স্থূলকায় লোক বাস করতেন। তার ওজন ছিলো ৪০০ কেজি (৯০০ পাউন্ড)। তিনি অনেক চেষ্টা করেও অতিমাত্রায় খাবার খাওয়া বাদ দিতে পারেন নি।
তার স্ত্রী চেরিল তাকে পুরো বাচ্চার মতো লালন-পালন করতেন। রিকি সবসময় ভুগতেন ডিপ্রেশনে।
তারা দুজন থাকতেন অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের দ্বীপ গুয়ামে। এখানে প্রতি ১০ জন লোকের মধ্যে ৬ জনই অত্রিমাত্রায় স্থূলকায়।
চেরিল ছিলেন রিকির প্রাথমিক কেয়ারটেকার। চেরিল জানান, আমি যখন তাকে বিয়ে করি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম কি করছি আমি।
এরপর তারা রিকির ওজন কমানোর কঠিন কাজ হাতে নেন। ডাক্তারও বলে দিয়েছিলেন বেঁচে থাকার জন্যই ওজন কমাতে হবে তাকে। তবে এসব রিকির জন্য খুবই কষ্টসাধ্য ছিলো। রিকি শতচেষ্টা করেও খাবার ছাড়তে পারেন নি।
ধীরে ধীরে রিকি পুরো শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। এ সময় চেরিল রিকির সব কাজ করে দিতেন। রিকির জন্য রান্না করা, এতো বড় শরীরের প্রতিটি কোণা পরিষ্কার করা এবং টয়লেটের কাজেও সাহায্য করতেন চেরিল।
রিকি অল্প অল্প কথা বলতে পারতেন। এছাড়া নিজ থেকে উঠে দাঁড়ানো, বিছানায় নড়াচড়া করতে পারতেন। তবে প্রায়ই তার শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন মেশিনের সহায়তা লাগতো।
তারপরও চেরিল ও রিকি স্বপ্ন দেখতেন তাদের ছোট্ট একটি পরিবার হবে, যেখানে তাদের বাচ্চা থাকবে।
রিকির জন্য যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও গুয়ামের ডাক্তাররা চেষ্টা করেছিলেন। তারা বলেছিলেন অপারেশনের মাধ্যমে রিকির দেহের ৮০ শতাংশ মেদ দূর করা প্রয়োজন। তবে অপারেশনের জন্য আগে তার ৪০ কেজি ওজন কমাতে হবে।
তখন স্থূলতা বিশেষজ্ঞ ডা. ডক ভং জানান, রিকিকে তার নিজের গতিধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্তত চেরিলের কথা ভেবেও তাকে নিজ থেকে ওজন কমাতে হবে।
রিকির খাবার যোগাতে চেরিলকে বেশ বেগ পেতে হতো। চেরিল বলেন, যখন রিকির জন্য খাবার আনা হয়, রিকি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ওই সময় তিনি খুব কঠোর হয়ে পড়েন। আমি পারি না তাকে খাবারের কাছ থেকে দূরে রাখতে।
ডা. ভংয়ের মতো ডা. জন স্টিলও রিকিকে একই উপদেশ দিয়েছিলেন। যদি রিকি নিজ থেকে তার ওজন না কমান তাহলে তিনি তাকে কোনো সাহায্য করতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন।
তিনি তখন বলেছিলেন, ওই অবস্থায় রিকির অপারেশন করা কখনোই সম্ভব নয়। রিকির এ অবস্থা চলতে থাকলে ডাক্তারের পক্ষে অপারেশন করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।
তবে রিকির অপারেশনের জন্য অস্ট্রেলিয়ার হিউস্টনে যাওয়া সম্ভব ছিলো না। তাই স্থূলতা সার্জন জর্জ হোপকিংস নিজে গুনামে এসে রিকিকে দেখে যান। তিনি আশা প্রকাশ করেন অপারেশন এখানেই সম্ভব। তবে অনান্য ডাক্তারের মতো তিনিও একই শর্ত দেন।
তবে রিকি বরাবরই বলে গিয়েছিলেন, তার পক্ষে বিছানা ছাড়া অসম্ভব। তিনি কোথাও যেতে পারবেন না। খাবারও বাদ দিতে পারবেন না।
এক পর্যায়ে চেরিল এবং রিকির সম্পর্ক ভেঙে যায়। ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর মাত্র ৩৯ বছর বয়সে রিকি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
মূলত স্থূলকায় সব ব্যক্তির পরিণতি যেন এমন না হয়!
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৪