ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

তিউনিসিয়া ও মিশর সীমান্তে চরম দুর্ভোগে ১৩,০০০ বাংলাদেশি

সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১১
তিউনিসিয়া ও মিশর সীমান্তে চরম দুর্ভোগে ১৩,০০০ বাংলাদেশি

ঢাকা: লিবিয়ার চলমান সহিংসতা থেকে বাঁচতে তিউনিসিয়া ও মিশর সীমান্তে অবস্থান নেওয়া প্রায় ১৩ হাজার বাংলাদেশি চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন।

তারা প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও মরুভূমি এলাকায় খোলা আকাশের নীচে দিনের পর দিন অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন।

অসুখ-বিসুখে বা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অনেকের জীবনই বিপন্নপ্রায়। এরমধ্যে মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থার আওতায় বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংস্থা পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছেন আটকে পড়া লোকজন। ‘িতউনিসিয়া সীমান্তে জড়ো হওয়া প্রায় আট হাজার বাংলাদেশি গত ১০/১২ দিন ধরে অপেক্ষায় থাকলেও তাদের কাছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল কেউ যোগাযোগ করেননি।

অন্যদিকে, মিশর সীমান্তে অবস্থান নেওয়া পাঁচ সহস্রাধিক বাংলাদেশি মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেও নতুন নতুন হামলা ও বিপর্যয়ের মুখে পড়ছেন। একইসঙ্গে আইওএমের নির্মিত তাঁবুতে হানা দিয়ে অন্য দেশের নাগরিকরা খাদ্যদ্রব্য ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এমন ঘটনায় অনেক বাংলাদেশি ছুরিকাঘাতের শিকার পর্যন্ত হয়েছেন।

গত কয়েকদিন ধরে ওই দুই সীমান্তে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করে এসব খবর জানা গেছে। ইমেল বার্তায় তারা বেশ কয়েকটি ছবিও বাংলানিউজকে পাঠিয়েছেন। এদেশে অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ স্বজনরাও জানিয়েছেন, তাদের দুর্বিষহ জীবনের নানা করুণ কাহিনি। তাছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে কোম্পানির সহায়তায় ফিরে আসা বাংলাদেশিদের অনেকেই সীমান্তে আটক থাকা অবস্থায় তাদের ওপর চলা সীমাহীন কষ্ট-যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন।

সাল্লুম সীমান্ত পয়েন্ট
মিশরের কায়রো থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দূরে মিশর-লিবিয়ার সাল্লুম সীমান্ত পয়েন্টের অবস্থান। সিমান্তেই রয়েছে অভিবাসন অফিস। মরুভূমির মাঝে কয়েকটি অফিস ভবন ছাড়া আর কোনো বাড়িঘর, বসতির চিহ্ন নেই। বিভিন্ন দেশের উদ্বাস্তুদের তত্ত্বাবধায়নের জন্য সেখানেই আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা সীমিত আকারে হলেও কার্যক্রম চালাচ্ছে। একটি অফিস ভবনের লম্বা হলরুমে ৭০০/৮০০ বাংলাদেশি গাদাগাদি ঠাসাঠাসি করে অবস্থান নিতে পারলেও আরও চার হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি রয়েছে খোলা আকাশের নিচে।

সেখানে ঠাঁই নেওয়া আবদুল হালিম চৌধুরী, জোনায়েদ রহমান, সামসুদ্দিন, কবীর হোসেনসহ অনেক বাংলাদেশি জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা সাল্লুম পয়েন্টে আছেন। গত ৭ মার্চ থেকে তাদের রুটি জাতীয় কিছু খাবার দেওয়া হচ্ছে। আগের দুই সপ্তাহ অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
সালাহউদ্দিন নামে এক বাংলাদেশি বাংলানিউজকে মুঠোফোনে জানান, আইওএম তাৎক্ষণিকভাবে ওই সীমান্ত পয়েন্টে অঘোষিত উদ্বাস্তু শিবিরের কার্যক্রম শুরু করলেও, জীবন ধারণের জন্য জরুরি উপকরণগুলো এখনও যোগান দেওয়া হয়নি।

সেখানে তীব্র পানি সংকটে হাত-মুখ ধোয়া, গোসলসহ বিভিন্ন জরুরি কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরের পাশে একটি মাত্র টয়লেট থাকায় হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তি পৌঁছেছে।

বারবার আবেদন নিবেদন সত্ত্বেও বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তা সেখানে যাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তারা। হাসান মাহমুদ, রকিবুল আনোয়ার, সাজেদুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, প্রথম ১৫/১৬ দিনেও দূতাবাস কর্মকর্তারা খোঁজ নেয়নি।

তিউনিসিয়া সীমান্ত
একইভাবে তিউনিসিয়ার সীমান্ত পয়েন্টে অবস্থান নেওয়া বাংলাদেশিরা রয়েছেন আরও ভয়াবহতার মধ্যে। সেখানে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করা বাংলাদেশি তরুণ আল হাসান ফারুক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সেখানকার পরিস্থিতি বলে বোঝানো যাবে না।

মরুভূমির বুকে হাজার হাজার তাবু টানিয়ে তার ভেতরে ৪/৫ হাজার লোকের ঠাঁই মিলেছে। বাকি সবাই রয়েছেন সরাসরি খোলা আকাশের নিচে। সেখানে বর্তমানে মৌসুমী মরু ঝড় আর শীতের প্রকোপ চলছে একসঙ্গে।

বাংলাদেশ সময় : ১৫৪২ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।