ঢাকা: লেবাননে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের সন্তানদের বের করে দিচ্ছে সরকার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব শিশুদের মায়েদেরও বের করে দেওয়া হচ্ছে।
লেবাননে ক্রিয়াশীল নয়টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) এই অভিযোগ করেছে।
স্বল্প আয়ের এসব কর্মজীবী প্রবাসী নারীদের সন্তানরা লেবানিজদের ‘পারিবারিক জীবনে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে’ এই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি দেশটির সিকিউরিটি এজেন্সি তাদের সেদেশে থাকার অনুমতিপত্র নবায়ন বন্ধ করে দিয়েছে।
২০১৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশ, ঘানা, শ্রীলঙ্কা, মাদাগাসকার, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ সুদানের অন্তত এক ডজন অভিবাসী নারী শ্রমিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এর কাছে এই অভিযোগ করেছেন। এসব শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে লেবাননে বসবাস করছেন।
তবে লেবানন সিকিউরিটি এজেন্সি বলছে, তারা শুধু শ্রমিকদেরই থাকার অনুমতি দেবে, তাদের সন্তানদের নয়। লেবানন সরকার আর শ্রমিকদের সন্তানদের সেদেশে থাকার ভিসা দেবে না।
লেবাননে কর্মরত এসব স্বল্প আয়ের নারী শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তারা যখন এ বছর নিজেদের ও সন্তানদের লেবাননে থাকা ও কাজের অনুমতিপত্র নবায়ন করতে যান, তখন সিকিউরিটি কাউন্সিল তাদের জানিয়ে দেয় যে, তাদের সন্তানরা লেবাননে থাকার কোনো অনুমতি পাবে না। তাদেরকে খুবই স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়; কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিবাসী নারী শ্রমিকরা সন্তানদের দেশে পাঠানোর জন্য মাত্র ৪৮ ঘণ্টা সময় পান।
এইচআরডব্লিউ এর মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার ডেপুটি পরিচালক নাদিম হুরি বলেন, সন্তান থাকার কারণে লেবাননের নতুন এই আইন অভিবাসী কিছু শ্রমিক পরিবারের সদস্যকে বিচ্ছিন্ন ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের জীবিকাকে বিপন্ন করছে এবং এজন্য কোনো ‘উপযুক্ত’ কারণও কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারছে না।
৩ ও ৪ ক্যাটাগরির ভিসা নিয়ে লেবাননে যাওয়া এসব অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে কেউ কেউ দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সেদেশে অবস্থান করছেন। লেবাননের নিয়ম অনুযায়ী স্বল্প আয়ের অভিবাসী শ্রমিক, বিশেষ করে যারা গৃহকর্মে নিয়োজিত তারা তাদের স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানদের স্পন্সর করতে পারেন না।
তবে আগের নিয়ম অনুযায়ী লেবাননে জন্মগ্রহণকারী সন্তানরা চার বছর বয়স পর্যন্ত সেখানে বসবাসের অনুমতি পান এবং পরে তারা যদি স্কুলে ভর্তি হয় তাহলে প্রমাণসাপেক্ষে তাদের লেবাননে বসবাসের অনুমতিপত্র নবায়ন করা হয়।
এইচআরডব্লিউ এর কর্মীরা বলছেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই এ আইন চালু করা হয়। তবে মে মাস থেকে লেবানন কর্তৃপক্ষ আইনটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পথে যায়। যার ফলস্বরূপ, অনেক অভিবাসী শ্রমিক পরিবারের সদস্য তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ঘানার এক নারী আভিবাসী শ্রমিক এইচআরডব্লিউ-কে জানিয়েছেন, লেবাননের সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ তার দশ বছর বয়সের ছেলের সেদেশের থাকার অনুমতিপত্র নবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তিনি তার ছেলেকে একাই ঘানায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। কারণ, তিনি কোনোভাবেই লেবাননের অবস্থান ও চাকরি হারাতে রাজী নন।
একইভাবে লেবাননে জন্মগ্রহণকারী শ্রীলঙ্কার ১৩ বছরের এক শিক্ষার্থী ও তার মাকে গত জুন মাসে দেশ থেকে বের করে দেয় লেবানন কর্তৃপক্ষ। তবে তার বাবা এখনো লেবাননেই আছেন।
এরকম অনেক শিশুর কথাই এইচআরডব্লিউ জানতে পেরেছে, যারা লেবাননে জন্মগ্রহণ ও বসবাসের কারণে নিজ দেশের ভাষা জানে না। তারা এখন নিজ দেশে ফিরে যাওয়ায় শিক্ষাসহ নানা অসুবিধার মুখে পড়ছে।
এ সংখ্যাটি ঠিক কতো তা বলতে পারছে না এইচআরডব্লিউ। তবে লেবাননের কমিউনিটি নেতারা বলছেন, স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের অনেকেই নতুন এই আইনের শিকার হয়েছেন।
এইচআরডব্লিউ এর কর্মী ও সংস্থাটির আইনজীবীরা বলছেন, লেবাননের নতুন এই নীতি আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার রক্ষা, বর্ণবাদবিরোধী অনুস্বাক্ষরের সঙ্গে পরষ্পরবিরোধী। কারণ, আন্তর্জাতিক আইন নারী-পুরুষের পরিবার গঠন ও নিরাপত্তা এবং সন্তদানদের পরিবারের মধ্যে বেড়ে উঠার অধিকার দিয়েছে।
এইচআরডব্লিউ আশা করে, লেবানন তাদের এই নতুন নীতিটি পর্যালোচনা করবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৪