আয়মান মুহাম্মদ রাবাই আল-জাওয়াহিরি। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে আল-কায়েদার ঘাঁটি গাড়ার ঘোষণা দিয়ে আবারও আলোচনায়।
কে এই জাওয়াহিরি? ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের চালানো অপারেশনে ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর থেকে ৬৩ বছর বয়সী চিকিৎসক শিক্ষক জাওয়াহিরি আল-কায়েদার প্রধান। এখন তার মস্তিষ্কপ্রসূত জঙ্গিবাদ দিয়েই চলে আল-কায়েদার কার্যক্রম। ধারণা করা হয়, কিংবা বলা হয় জাওয়াহিরি ছিলেন ওসামা বিন লাদেনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক।
মিশরীয় জাওয়াহিরির হাতেই গঠিত হয় ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ। দীর্ঘ সময় তিনি এই জিহাদী সংগঠনের নেতৃত্বও দেন। পরে আল-কায়েদার সঙ্গে মিশে যায় এই সংগঠন। আর ধীরে ধীরে ওসামা বিন লাদেনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত লেফটেন্যান্ট ও সন্ত্রাসী সংগঠনটির প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হন তিনি।
জীবনীতে, এছাড়াও বিভিন্ন প্রকাশনা ও ছবিতে ছেলেবেলায় এক শান্ত-লাজুক ছেলে হিসেবেই দেখানো হয় জাওয়াহিরিকে। এক অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেই তার বেড়ে ওঠা। মিশরের উচ্চ মধ্যবিত্ত এক শিক্ষিত পরিবারের সন্তান এই জাওয়াহিরি। তার বাবা ছিলেন কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলের ফার্মালোজির শিক্ষক। তার দাদা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পেশ ইমাম ছিলেন।
মিশরের সহিংস ইসলামী সংগ্রামের সঙ্গে জাওয়াহিরির যোগাযোগ ১৪ বছরের বালক বয়সে। তখন থেকেই মিশরীয় সরকারের পতনে জেহাদে নেমে পড়তে হবে সে বিশ্বাস তার প্রগাঢ়। মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেফতার হওয়া অনেকের মধ্যে জাওয়াহিরিও একজন। তিন বছর জেলে কাটানোর পর ছাড়া পেয়ে প্রথমে সৌদি আরবে পরে সেখান থেকে পাকিস্তান যান। পাকিস্তানে চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে নিয়ে চলতে থাকে তার জঙ্গি তৎপরতাও।
১৯৮০’র দশকে জাওয়াহিরির দেখা হয় ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে।
আল জাওয়াহিরির সাবেক আইনজীব মোনতাসের আল জায়াত একটি বই লিখেছেন- যার নাম ‘আল-জাওয়াহিরিকে যেমনটা জেনেছি’। এই বইয়ে জাওয়াহিরিকে একজন ঐদ্বত্য ও বদমেজাজি হিসেবেই তুলে ধরেছেন আল-জায়াত।
ওসামা বিন লাদেনের যে ক্যারিশমা ছিলো তা জাওয়াহিরির মধ্যে নেই, বরং তাকে একজন চতুর, উচ্চাভিলাষী ও হিংস্র বলেই অনেকে মনে করে। ধারণা করা হয় নাইন-ইলেভেনের সেই ভয়াবহ হামলাকে কতটা ভয়াবহ করে তোলা যায় তার পরিকল্পনা এই জাওয়াহিরির মস্তিষ্কপ্রসূত।
১৯৮৮ সালের ৭ আগস্ট তানজানিয়ার দারেস সালাম ও কেনিয়ার নাইরোবিতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে বোমা হামলা চালানোর ঘটনায় জাওয়াহিরিকে খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র। এর এক বছর পর মিশরের আদালত জাওয়াহিরিকে তার অনুপস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ড দেয়।
২০০৬ সালে একবার রটেও যায়, জাওয়াহিরি নিহত হয়েছেন। পরে অবশ্য জানা যায় পাকিস্তানের গ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। এর পর থেকে সন্ত্রাসের বিষবাষ্প ছড়িয়েই চলেছেন এই জাওয়াহিরি।
বাংলাদেশ সময় ১০৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৪