লন্ডন: বাকিংহাম প্যালেসে হইচই পড়ে গেছে। একেবাবে হুলুস্থুল কা-।
এটি রাজরাজরাদের নিয়ে একটি কল্পকাহিনী মনে হতে পারে। তবে ঘটনা কিন্তু সত্য। এডোয়ার্ড জোনস নামের একটি ছেলে এ কাজটি করতো।
মানুষের বিভিন্ন রকম বাতিক থাকে। এর মধ্যে চুরিও একটি। কিন্তু রানী ভিক্টোরিয়ার অন্তর্বাস চুরির বাতিক যে তাকে কীভাবে পেয়ে বসল তা নিয়েই যতো রহস্য। এই ছেলে নাকি ভিক্টোরিয়ার অন্তর্বাস চুরি করে নিজে পরত।
এই মজাদার রহস্যাবৃত বালককে নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করে ফেলেছেন কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ড. জ্যান বনডেসোন। এই রহস্যের পেছনে তিনি তার জীবনের পাঁচটি বছর ব্যয় করেছেন। তৎকালীন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ করে তিনি ‘কুইন ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড দ্য স্ট্যাকার’ নামে একটি বই লিখেছেন।
নিউপোর্টে বসবাসকারী এ প্রভাষক বলেন, ‘এডোয়ার্ড জোনস খুবই জটিল একটি চরিত্র। সে একমাত্র রানী ভিক্টোরিয়া ছাড়া অন্য নারীর প্রতি আগ্রহী ছিলো না। সে বন্ধুহীন একজন মানুষ কিন্তু তাকে ভগ্নমনস্ক (সিজোফ্রেনিক) বা পাগল বলার কোনো কারণ নেই। তার চরিত্র এক কথায় অদ্ভুত বা অস্বাভাবিক। ’
বনডেসোন আরো বলেন, ‘জোনসের চেহারা খুই কুৎসিত ছিলো। বিশাল মুখ ও বিরল ভ্রু বিশিষ্ট জোনস কখনো গোসল করতো না। এ কারণে লোকে তাকে চিমনির ঝুলকালি পরিস্কারক বলে মনে করতো। ’
প্রভাষক বলছেন, ‘তবে এটা বলা মুশকিল যে রাণী ভিক্টোরিয়ার প্রতি তার এ বিশেষ দুর্বলতা কীভাবে সৃষ্টি হলো। ১৮৩৭ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত বিশাল ব্রিটেন রাজ্যের রাণী তিনি, তার মতো এমন বিশাল ব্যক্তিত্বের প্রাসাদে ঢুকে মাত্র ১৪ বছর বয়সী এক বালকের এ দুঃসাহসী কর্মকা- সত্যিই অবাক করে দেয়। ’
প্রাসাদের মূল ফটক অথবা জানালা খোলা থাকলে সেই সুযোগে জোনস নিচ তলার ঘরে ঢুকত। এখানে কোনো নিরাপত্তারক্ষী থাকত না। সময় সুযোগ বুঝে একসময় রানীর ঘর থেকে তার কাক্সিত অন্তর্বাস নিয়ে আবার সবার অলক্ষ্যে সটকে পড়তো জোনস।
তবে ধরা যে সে পরে ন তা কিন্তু নয়। তিনবার ধরা পড়েছে এবং চতুর্থবার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। তবে একাজ সে আরও অনেকবার করেছে বলে জানা যায়।
তবে চুরির ক্ষেত্রে তার বৈচিত্রও ছিলো। প্রথমবার রানীর অন্তর্বাস, তৃতীয়বার রান্নাঘর থেকে খাবার এবং রাণীর সিংহাসনে বসা অবস্থায় দুইবার ধরা পড়ে জোনস।
মজার ব্যাপার হলো রানীর অন্তর্বাসসহ যেদিন ধরা পড়ে সেদিন সে ট্রাউজারের নীচে ওই বিশেষ পোশাকটি পরেই ছিলো।
পরে প্রিভি কাউন্সিলে (ব্রিটেনের রাজকীয় উপদেষ্টা কমিটি) অত্যন্ত গোপনীতার সঙ্গে তার বিচার করা হয়। কিন্তু অপরাধ গুরুতর না হওয়ায় দীর্ঘকালীন কারাবাসের মতো শাস্তি দেওয়া হয়নি। একজন দুর্বৃত্ত এবং ভবঘুরে হিসেবে প্রাথমিকভাবে তাকে তিন মাসের কারাদ- দেওয়া হয়। কিন্তু এ শাস্তির পরেও তার চৌর্যবৃত্তি না থামায় শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার তাকে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসন দেয়।
তাকে ধরে ব্রাজিলগামী একটি জাহাজে তুলে দেওয়া হয় কিন্তু সে কোনো ভাবে আবার ফিরে আসতে সমর্থ হয়। এর পর আবার তাকে একটি বন্দিবহনকারী জাহাজে কারারুদ্ধ করা হয়। সে যাতে পালাতে না পারে এ জন্য জাহাজটি তীরে ভেড়ানোর অনুমতি ছিলো না। সাগরের বুকে এ জাহাজে সে ৬টি বছর কাটিয়েছে।
ড. বনডেসোন জানান, এডোয়ার্ড জোনস ‘বয় জোনস’ নামে পরিচিত ছিলো। কারামুক্তির পর সে পুরোদস্তুর মদ্যপায়ী এবং দক্ষ সিঁধেলচোর হয়ে উঠে। পরে আবার তাকে অস্ট্রেলিয়া পাঠনো হয়। সেখানে সে পাই বিক্রি করতো। কিন্তু মন না টেকায় আবারো ব্রিটেনে ফিরে আসে।
অবশেষে ভাইয়ের জোরাজুরিতে জোনস অস্ট্রেলিয়া গিয়ে পার্থ শহরে নকিবের (ঘোষক) কাজ নেয়।
এরপর থেকে সে সবসময় নিজের ‘রানীর অন্তর্বাস চোর’ পরিচয় নিয়ে খুবই বিরক্তিবোধ করতো। লোকজন এ নিয়ে রসিকতা করলে সে খুবই অপমানিত বোধ করতো। এক কথাই সেই উদ্ভট পাগলাটে বালকটি পরে আত্মসম্মানবোধ সম্পন্নœ স্বাভাবিক মানুষ হয়ে গিয়েছিলো আরকি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১১