ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মোদীর স্টাফ ৬৪, দেব গৌড়ার ছিলো ২ জন!

রাইসুল ইসলাম, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৪
মোদীর স্টাফ ৬৪, দেব গৌড়ার ছিলো ২ জন! নরেন্দ্র মোদী ও এইচ ডি দেবগৌড়া

ঢাকা: মে মাসে দায়িত্ব গ্রহণের সময় মন্ত্রিসভার কলেবর কমানোর ব্যাপারে নিজের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী।

পূর্বাপর সরকারগুলোর আমলের মাথাভারী মন্ত্রিসভার ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে এসে ছোটো কিন্তু পরিচ্ছন্ন এবং গতিশীল মন্ত্রিপরিষদ উপহার দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন মোদী।

সরকার গঠনের পর তিনি সে কথা রেখেছিলেনও। সে সময় বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একীভূত করা হয়। এছাড়া একেকেজন মন্ত্রীর ঘাড়ে চাপানো হয় হয় বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

সবই ঠিকঠাক চলছিলো, কিন্তু পিএমও অফিস হিসেবে অভিহিত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের তথ্য যখন প্রকাশ হয়ে পড়লো তখন অনেকের চোখই চড়ক গাছ। মোদীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বহর দেখে সমালোচকদের গলার আওয়াজও চড়লো এক প্রস্থ।

১৯৯৬-৯৭ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এইচ ডি দেবগৌড়া। বাংলাদেশের তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পানিচুক্তি করে দেশবাসীর মনে স্থায়ী আসন গেড়ে নিয়েছিলেন তিনি।

তো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেবগৌড়ার ব্যক্তিগত স্টাফ ছিলেন কয়জন? উত্তর হলো মাত্র দুই জন। একজন পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং একজন পিয়ন।

এছাড়া বিজেপির বিগত মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর ব্যক্তিগত স্টাফ বলতে ছিলো মাত্র একজন সেক্রেটারি, একজন প্রাইভেট সেক্রেটারি, একজন লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক এবং একজন পিয়ন।

এমনকি মাথাভারী প্রশাসনের জন্য সমালোচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ব্যক্তিগত কর্মচারীদের তালিকাও ছিলো সংক্ষিপ্ত। একজন সচিব, একজন ওএসডি অফিসার (অফিসার্স অন স্পেশাল ডিউটি), একজন অ্যাডিশনাল প্রাইভেট সেক্রেটারি, একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রাইভেট সেক্রেটারি, একজন পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, একজন ডিসপাচ রাইডার এবং একজন পিয়ন।

কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদীর অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা কত? উত্তরটা হলো মাত্র ৩৫৬ জন। যার মধ্যে ৬৪ জনই মোদীর ব্যক্তিগত স্টাফ।

তথ্য অধিকার আইনের আওতায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশ হয় এসব তথ্য। সংবিধান অনুযায়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা রয়েছে পরিস্থিতি ও সময় অনুযায়ী যতজন ইচ্ছা ব্যক্তিগত স্টাফ বেছে নেয়ার ক্ষমতা। তবে ভারতের এর আগের কোনো প্রধানমন্ত্রীই সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্বেচ্ছাচারীর মত নিজের পার্সোনাল স্টাফের সংখ্যা বাড়াননি। কারণ প্রধানমন্ত্রীর পার্সোনাল স্টাফ হলেও তাদের বেতন কিন্তু ‍যায় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকেই। সেক্ষেত্রে মোদীর ৬৪ জন পার্সোনাল স্টাফের বেতন যায় জনগণের পকেট থেকেই।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী অফিসে কর্মরত পার্সোনাল স্টাফদের দাফতরিক কাজ করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কারো কাছে জবাবদিহি করারও বালাই নেই তাদের। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছেই জবাবদিহি করতে বাধ্য তারা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মোদীর রয়েছেন দুইজন ব্যক্তিগত সচিব, একজন পাবলিক রিলেশন অফিসার, চারজন ওএসডি কর্মকর্তা,(গবেষণা ও নীতি প্রণয়ন, তথ্য প্রযুক্তি, নিয়োগ, ভ্রমণ, জ্ঞান এবং উদ্ভাবন), একজন তথ্য কর্মকর্তা, তিনজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল প্রাইভেট সেক্রেটারি, একজন প্রিন্সিপাল প্রাইভেট সেক্রেটারি, একজন আন্ডার সেক্রেটারি, চারজন এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্স, দুইজন সেকশন অফিসার, সাতজন প্রাইভেট সেক্রেটারি, তিন জন অ্যাসিস্ট্যান্ট, নয়জন পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, একজন সিনিয়র হিন্দি অনুবাদক, চারজন স্টাফ গাড়ি চালক, তিনজন লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক, একজন দফতরি, ১৬ জন পিয়ন এবং একজন হেলপার।

মোদীর ব্যক্তিগত কর্মীবহরে রয়েছেন সাউথ ব্লকের ৩৪ জন কর্মকর্তা। অবশ্য তাদের মধ্যে মাত্র মাত্র দুই জন ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিসট্রেটিভ সার্ভিসের (আইএএস) গুজরাট ক্যাডারের। তারা হলেন, জয়েন্ট সেক্রেটারি এ কে শর্মা, এবং প্রাইভেট সেক্রেটারি টু দ্য পিএম রাজিভ তপনো।

এছাড়া গুজরাট ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার পিকে মিশ্র বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডিশনাল প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি টু দি পিএম হিসেবে।

প্রধানমন্ত্রীর অফিসের অন্যান্য স্টাফদের মধ্যে যাদের গুজরাট কানেকশন আছে তারা হলেন, চার ওএসডি কর্মকর্তা হিরেন যোশী, প্রতীক দোশী, হেমাঙ্গ জানি এবং সঞ্জয় আর ভাভসার। নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখনও তারা কাজ করেছিলেন মোদীর সঙ্গে।
 
ইদানীং সাফাই সুতরোর প্রতি বেশ মনোযোগী নরেন্দ্র মোদী ভারত জুড়ে সাফাই ক্যাম্পেইন চালালেও, তার বিশাল কার্যালয়ে রয়েছেন মাত্র ৫ জন সাফাই কর্মচারী। পুরো প্রধানমন্ত্রীর অফিসের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি দেখভাল করেন মূলত এই ৫ জনই।

প্রধানমন্ত্রী অফিসে অবশ্য নারী পুরুষের অানুপাতিক হার অত্যন্ত বৈষম্যমূলক, ৩৪ জন কর্মকর্তার মধ্যে নারী রয়েছেন মাত্র তিনজন। তারা হলেন জয়েন্ট সেক্রেটারি অনু গার্গ, ডিরেক্টর শর্মিলা মেরি জোসেফ এবং আন্ডার সেক্রেটারি আর মাইথিলি।

তবে ভারতের আইএএস ক্যাডারদের মধ্যে অভিজাত হিসেবে পরিচিত ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসের খুব কম সদস্যই ঠাঁই পেয়েছেন মোদীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের তালিকায়। মোদীর টিমে ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন জয়েন্ট সেক্রেটারি জাবেদ আশরাফ, পিএস সঞ্জীব কুমার সিংলা এবং তিন ডিরেক্টর যথাক্রমে মুনু মহাবীর, দিপক মিত্তাল এবং গৌরাঙ্গলাল দাস।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।