ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আমিরাতে প্রাণ দিয়ে ৪ শিশুকে বাঁচালেন বাংলাদেশি নারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৪
আমিরাতে প্রাণ দিয়ে ৪ শিশুকে বাঁচালেন বাংলাদেশি নারী ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: সহস্র স্বপ্ন নিয়েই হাজারো মাইল দূরের সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। চার বছর ধরে স্বপ্ন বাস্তবায়নও হচ্ছিল একটু একটু করে।

দু’মাসের মধ্যে মেয়ে বিয়ে দিয়ে চূড়ান্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নেরও পথে এগোচ্ছিলেন তিনি।

কিন্তু না, আর এগোতে পারলেন না তিনি। সময় তাকে ‘শেষ গন্তব্যে’ থামিয়ে দিল। তবে তার এই থেমে যাওয়ার পেছনের গল্প অবর্ণনীয় বীরত্বের। এ বীরত্বের কোনো বিশেষণ দেওয়া যায় না, সম্মাননা দেওয়া যায় না। এই বীরত্ব যিনি দেখাতে পারেন, তিনিই যেন প্রকৃতপক্ষে ‘জীবনের সার্থকতা লাভ’ করেন।

সমুদ্রের অথৈ পানিতে প্রায় তলিয়ে যাওয়া চার শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে ‘জীবনের সার্থকতা লাভ’ করলেন তিনি। ‘মানুষ মানুষের জন্য-জীবন জীবনের জন্য’ মন্ত্র প্রায় ভুলতে যাওয়া মনুষ্য সমাজকে তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি।  

এই বীরত্বগাঁথা রচিত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির একটি সমুদ্র সৈকতে। আর রচনা করেছেন সাফিয়া নামে এক বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী।

আরব আমিরাতেরই একটি সংবাদ মাধ্যম বৃহস্পতিবার সাফিয়ার এ বীরত্বগাঁথা প্রকাশ করেছে।

সংবাদ মাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিভাবকদের অসতর্কতার ফাঁক গলে আবুধাবির দাবিয়া সমুদ্র সৈকতের অথৈ পানিতে নেমে যাচ্ছিল ৬-১০ বছর বয়সী চার শিশু। এসময় পাশেই ছিলেন সাফিয়া। চার অবুঝ শিশুর কাণ্ড দেখে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন তিনি। কিন্তু তবু তাদের থামানো যাচ্ছিল না। আশপাশে কাউকে না পেয়ে সাফিয়ে নিজেই চার শিশুকে ফেরাতে সৈকতে নেমে পড়েন। কিন্তু সমুদ্রের পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় এবং শিশুরাও দৌঁড়ে পানিতে নেমে যাওয়ায় পাথুরে সৈকতে বিপদ মারাত্মক আকার নেয়। সাফিয়া ও চার শিশুর চিৎকারে আশপাশের লোকজনের টনক নড়ে। অভিভাবকরাও ‍আসেন ঘটনাস্থলে। সাফিয়া একে একে চার শিশুকেই প্রায় অক্ষত অবস্থায় মা-বাবার হাতে তুলে দেন।

কিন্তু নিজে ফিরে আসতে গেলেই তুমুল স্রোত সাফিয়াকে তলিয়ে নিয়ে যায়। সাফিয়া সাঁতার কেটে আবার তীরে আসতে চান, আবার সর্বনাশা ঢেউ তার গায়ে আঁছড়ে পড়ে নিয়ে যায়। পাথরখণ্ডের সঙ্গে আঘাতে গুরুতর জখম হতে থাকেন। তবু সুবজ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে চাইছিলেন না বলে স্রোত ও ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না।

উদ্ধার হওয়া চার শিশুর মধ্যে একজনের বাবা আবু আবদুল্লাহ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সাফিয়া যখন প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন তখন আমরা তাকে টেনে তুলি। কিন্তু গুরুতর জখমের কারণে অ্যাম্বুলেন্স আসার ‍আগেই তিনি প্রিয় মানুষদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে পরপারে পাড়ি জমান।

আবু আবদুল্লাহ বলেন, এই নারী আমার সন্তান ও তার তিন বন্ধুকে বাঁচিয়ে বীরত্ব দেখিয়েছেন...আমরা তার কাছে চিরঋণী এবং তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।

আবু আবদুল্লাহ জানান, সাফিয়া গত প্রায় চার বছর ধরে তার ঘরের কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও সাজিয়েছিলেন। কিন্তু নিজে উপস্থিত থেকে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলো না তার।

তিনি বলেন, এই সাহসী নারী নিঃসংকোচে আমাদের সন্তানদের প্রাণ বাঁচাতে আত্মোৎসর্গ করেছেন। তার বীরত্বের বিশেষণ হয় না।

সাফিয়ার মরদেহ বাংলাদেশে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য এবং তার জন্য উদ্ধার হওয়া শিশুদের পরিবারের কাছ থেকে সহায়তা সংগ্রহের কাজ করছেন বলেও জানান আবু আবদুল্লাহ।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।