ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

লক্ষ্যবস্তু কি গাদ্দাফি?

পশ্চিমা সামরিক বাহিনী ও রাষ্ট্রনেতাদের বিভাজন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১১
পশ্চিমা সামরিক বাহিনী ও রাষ্ট্রনেতাদের বিভাজন

লন্ডন: লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি আন্তর্জাতিক জোট বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। কিন্তু একই ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যেরই প্রতিরক্ষা প্রধান (চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ) ডেভিড রিচার্ডস।

রিচার্ডস বলেন, ‘গাদ্দাফি কোনোভাবেই আমাদের মূল লক্ষ্য নয়। ’

আর এর মধ্য দিয়েই মূলত দেশটির রাজনৈতিক ও সেনা নেতৃত্বের মধ্যে বিদ্যমান ফাটলটি প্রকাশ হয়ে পড়েছে।  

যৌথ বাহিনীর উপুর্যপুরি বিমান হামলায় লিবিয়ার আজদাবিয়া থেকে পিছু হঁটতে বাধ্য হয়েছে গাদ্দাফির বাহিনী। আর মিত্র বাহিনী আকাশ থেকে হামলার সঙ্গে সঙ্গে অব্যাহতভাবে ভূমি থেকে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহীরা।

কিন্তু যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এ বিরোধের কারণে তৃতীয় দিনের বিমান হামলা গুরুত্ব অনেকটাই কমে গেছে।  

শুধু তাই নয়, অব্যাহত এ বোমা বর্ষণ গাদ্দাফির পক্ষে সমর্থনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। একইসঙ্গে এর মধ্য দিয়ে বেসামরিক জনগণকে রক্ষার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান উদ্দেশ্য বিঘিœত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কেননা লিবিয়ার উপকূলীয় শহরগুলোতে সক্রিয় গাদ্দাফির অনুগত বাহিনীর নেতৃত্ব কাঠামো দুর্বল করে দিতে রোববার রাতে তার আবাসিক এলাকায় ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।

সোমবার রাতেও রাজধানী ত্রিপোলিসহ দেশের বন্দর এবং নৌ স্থাপনায় আবারও বিমান বিধ্বংসী হামলার খবর পাওয়া যায়। এছাড়াও গাদ্দাফির বাব আল-আজিজিয়া আবাসিক এলাকার কাছে বিস্ফোরণের পর পুলিশ সড়ক অবরোধ করে। এ সময় কিছু নাগরিককে লিবিয়ার পতাকা হাতে দেখা যায়। মধ্যরাতের পর আবারও হামলা চালানো হয়।

লিবিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব টিভিতে অব্যাহত এ হামলাকে ‘বর্বরোচিত’ উল্লেখ করে জনগণকে এ এলাকা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এদিকে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার বিতর্কের পর ক্যামেরন এ হামলার সমর্থনে ৫৫৭টি ভোট পাওয়ার পরও মিশনের উদ্দেশ্য এবং এর সমাপ্তি নিয়ে বিতর্ক থেকেই যায়।

তবে বিতর্ক ও মতভেদ সত্ত্বেও বেসামরিক জনগণের জন্য ক্ষতিকর না হলে গাদ্দাফি স্বয়ং এ হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বলে ক্যামেরন এবং প্রতিরক্ষা সচিব লিয়াম ফক্স রোববার জানান।

কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা প্রধান ডেভিড রিচার্ডসকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘কখনই না। জাতিসংঘের প্রস্তাব তা সমর্থন করে না এবং এটা এমন একটি বিষয় যা নিয়ে আমি আর বিস্তারিত কিছু আলোচনা করতে আগ্রহী নই। ’

এদিকে, এ বিষয়ে তার সংসদ সদ্যসদের ক্যামেরন বলেন, ‘জাতিসংঘের আইনের সুযোগ সীমিত এবং এতে সেনা হামলার মধ্য দিয়ে গাদ্দাফিকে উৎখাতের বৈধতা দেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং লিবিয়ার সরকারের ভাগ্য দেশের জনগণের হাতে ছেড়ে দেওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। তবে এক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো কর্নেল গাদ্দাফি ক্ষমতায় থাকলে লিবিয়ার কার্যত কোনো ভবিষ্যৎ নেই। ’

তবে গাদ্দাফি যদি বেসামরিক জনগণের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেয় তাহলে তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা বৈধ বলে পরবর্তীতে ক্যামেরনের মুখপাত্র জানান। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য জনগণকে রক্ষা করা বলেও তিনি যুক্তি তুলে ধরেন।

এদিকে, গাদ্দাফিকে হামলা করা তাদের মিশনের অংশ নয় বলে যুক্তরাষ্ট্র-আফ্রিকা কমান্ডের প্রধান জেনারেল কার্টার এফ হাম জানান।   এমনকি গাদ্দাফির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য সত্ত্বেও তিনি মূল লক্ষ্য নন বলে ফ্রান্সের এক মুখপাত্র জানান। তবে মিত্র বাহিনীর এ হামলার কারণেই গাদ্দাফির পতন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেঁ দুপে।  

কিন্তু বেসামিরক জনগণকে রক্ষার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের লক্ষ্য পূরণ করা মূল কাজ হলেও গাদ্দাফির অপসারণে হোয়াইট হাউস ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে বলে দক্ষিণ আমেরিকা সফরে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানান। এর মধ্য দিয়ে তিনি যেন লন্ডনের বিরোধই পুনর্ব্যক্ত করলেন।

কেননা গাদ্দাফির অপসারণ প্রধান লক্ষ্য নয় বলে পেন্টাগণ থেকে দাবি করা হলেও এটাই মূল লক্ষ্য বলে উল্লেখ করে হোয়াইট হাউস। পেন্টাগনের চিফ অব স্টাফ এ বিষয়ে ওবামা বলেন, ‘গাদ্দাফিকে উৎখাত করা মার্কিন নীতির একটি অংশ এবং তা বাস্তবায়নের সামর্থ আমাদের আছে। একজন নেতা যখন তার বৈধতা হারায় এবং সেনাবাহিনীকে নিরপরাধ জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয় তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চুপ করে থাকতে পারে না। ’

এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি কূটনীতিক চাপের মধ্যে আছেন বলেও ওবামা উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।