ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মধ্যবর্তী নির্বাচন

ডেমোক্রাট বিপর্যয়ের কারণ ওবামার প্রতি অনাস্থা

রাইসুল ইসলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৪
ডেমোক্রাট বিপর্যয়ের কারণ ওবামার প্রতি অনাস্থা বারাক ওবামা

ঢাকা: মিডটার্ম হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে আশাতীত ফল পেয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। অপরদিকে নির্বাচনে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির অর্জন গিয়ে ঠেকেছে প্রত্যাশার একেবারে তলানিতে।



২০০৬ সালের পর এই প্রথমবারের মত যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষ সিনেট ও হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে রিপাবলিকান পার্টি।

সিনেটের ১শ’ আসনের মধ্যে তাদের দখলে এখন ৫২টি। অপরদিকে ডেমোক্রাটদের হাতে মাত্র ৪৫টি। এছাড়া নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদেও এ মুহূর্তে রিপাবলিকানদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা।

যুক্তরাষ্ট্রে এখন চলছে এই ‘অপ্রত্যাশিত’ ফলাফলের কারণ অনুসন্ধানে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ফলাফলকে অপ্রত্যাশিত বলা হচ্ছে কারণ যে নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির অর্জন তাদের প্রত্যাশার থেকে অনেক বেশি। অপরদিকে ফলাফল এতটা খারাপ হবে তা ভাবতেও পারেননি ডেমোক্রাট নীতি নির্ধারকরা। এই ফলাফল তাই তাদের জন্য অনেকটাই অপ্রত্যাশিত।

এ প্রসঙ্গে নানা মত উঠে আসলেও এটা পরিষ্কার যে সাধারণ মার্কিনীদের আস্থা হারাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে জনগণ অসন্তুষ্ট। মূলত প্রেসিডেন্টের প্রতি অসন্তুষ্টি থেকেই প্রতিনিধি নির্বাচনে মার্কিনীরা ঝুঁকে পড়ে রিপাবলিকান প্রার্থীদের দিকে।

বিষয়টি বুঝতে পেরে তাই প্রচারণার পুরোটা সময় ওবামার নীতির প্রতি ভোটারদের অসন্তুষ্টিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে গেছেন রিপাবলিকানরা।

মার্কিন ভোটাররা আসলে বিরক্তি হয়েছেন বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়নে ওবামা প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রিতার ওপর। তার ওপর আইন সভায় রিপাবলিকান-ডেমোক্রাট রশি টানাটানিতেও তারা অনেকটাই ক্লান্ত। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো রিপাবলিকানদের তীব্র আক্রমণের মুখে দেশবাসীকে আশান্বিত হওয়ার মত কোনো রাস্তা দেখাতে পারেননি ওবামা। তাছাড়া অর্থনৈতিক দুর্দশা লাঘব ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রেও চোখে পড়ার মত কোনো অগ্রগতি অর্জন হয়নি ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদে। এবারের ভোটে লক্ষ্যণীয়ভাবে ভোটার উপস্থিতি ছিলো কম। বিশেষ করে হতাশা থেকে অনেক তরুণ ভোটার এবার ভোট দিতে যাননি, যারা মূলত ভোট দিয়ে থাকেন ডেমোক্রাটদের প্রার্থীদেরই।
 
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে প্রেসিডেন্ট ওবামার জন্য স্বস্তিকর নয় তা পরিস্কার। প্রেসিডেন্ট ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়ন ও বিল পাসের ক্ষেত্রে আইনসভার উভয় কক্ষেই রিপাবলিকানদের ব্যাপক বাধার মুখে পড়েন ওবামা। তাদের এই দ্বন্দ্বে অনেকটাই স্থবির হড়ে পড়ে কংগ্রেস। ফলে ওবামাকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক বেগ পেতে হয়।

এ পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সিনেট ও হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভস উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ হারানো ওবামার জন্য হয়েছে বোঝার ওপর শাকের আঁটি দশা। এখন প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাসের জন্য রিপাবলিকানদের দিকে চেয়ে থাকতে হবে। আর রিপাবলিকানরাও যে ছেড়ে কথা বলবে না তা বলাইবাহুল্য। সব মিলিয়ে এই ‘মিডটার্ম’ নির্বাচন অনেকটা প্রেসিডেন্ট ওবামার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়াদের অবশিষ্ট দুই বছর তাই অনেকটা অস্বস্তিতেই কাটবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই মানুষটির।

বুধবার নিউইয়র্ক পোস্টের একটি কার্টুনেই যেন বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। এই কার্টুনে দেখা যায় মাথায় মুকুট থাকলেও ওবামার গায়ে কোনো কাপড় নেই। লজ্জা সম্বরণ করছেন গলায় ঝোলানো একটি কাঠের পিপে দিয়ে।   

সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী, সিনেটে রিপাবলিকানদের আসন এখন ৫২টি। দুই জন স্বতন্ত্র সদস্যের সমর্থন নিয়ে ডেমোক্রাটদের আসন এখন ৪৫টি।

২৪৩টি আসনে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও এখন রিপাবলিকানদের। এখানে ডেমোক্রাটদের আসন ১৭৪টি। এছাড়া ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ৩০টির গভর্নরই রিপাবলিকান। মাত্র পনেরোটি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ আছে ডেমোক্রাটদের হাতে।

সর্বশেষ প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী আরকানসাস, কলোরাডো, আইওয়া, মন্টানা, নর্থ ক্যারোলিনা, সাউথ ড্যাকোটা ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় সিনেটের আসনগুলোতে জয়লাভ করেছে রিপাবলিকান পার্টি। এছাড়া অন্যান্য বেশ কয়েকটি আসনেও এগিয়ে রয়েছে তারা।

একশ‘ আসনের সিনেটে এবার নির্বাচন হয় ৩৬টি আসনে। হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভস এ নির্বাচন হয় ৪৩৬টি আসনে। এছাড়া ৩৬টি রাজ্যের গভর্নর পদের পাশাপাশি রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিনিধি নির্বাচন।

সিনেটের কর্তৃত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর সিনেটে রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, এই ফলাফলের মাধ্যমে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে যে তারা আর তাদের বিশ্বাস করে না।

তবে রিপাবলিকানদের অভিনন্দন জানিয়েছেন সিনেটে ডেমোক্রাট দলের নেতা হ্যারি রিড। তিনি বলেন, ভোটারদের বক্তব্য পরিস্কার তারা আমাদের একত্রে কাজ করতে দেখতে চায়। পাশাপাশি মিচ ক্যাককনেলকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।