পুত্তাপার্থি: আমজনতাই গুরু সত্য সাঁই বাবাকে ইতিহাসের মহান আসনে বসিয়েছে। তার ওপর যদি ভারতের রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত তার ভক্তের তালিকায় থাকেন তাহলে বিশ্বাসের জায়গাটা আরও পোক্ত হয়ই বটে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতে সবক্ষেত্রেই অনেক গুণী মানুষ ছিলেন, আছেন। কিন্তু তাদের কেউই খ্যাতি এবং জনপ্রিয়তায় সাঁই বাবাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি।
তার ভক্ত হতে কোনো বাঁধা ছিল না, যে কেউই তার ভক্ত হতে পারত। তাই তো সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ভারতের একাধিক প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মুখ্যমন্ত্রী, প্রাদেশিক মন্ত্রী, গভর্নর, চলচ্চিত্র তারকা, শিল্পপতি, খেলোয়াড় ছিলেন তার ভক্তের তালিকায়। এমনকি তার লাখ লাখ ভক্ত দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরেও রয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পুত্তাপার্থিতে জন্ম সত্য সাঁই বাবার। ছেলেবেলার নাম ছিল সত্যনারায়ণ রাজু। পরবর্তীতে তিনিই হয়ে ওঠেন সত্য সাঁই বাবা। সময়টা ১৯২৬ সালের ২৩ নভেম্বর।
কিন্তু পুত্তাপার্থি এখন আর অপরিচিত গ্রাম নয়। এখানে ‘প্রশান্তি নিলায়ম’ নামে একটি আশ্রম রয়েছে। ভক্তদের কল্যাণে এটি এখন ঠাঁই করে নিয়েছে বিশ্ব মানচিত্রে। এখানে রয়েছে সুসজ্জিত বিমানবন্দর। আর এই বিমানবন্দরে সারা পৃথিবী থেকে বাবার ভক্তদের নিয়ে নিয়মিতই অবতরণ করে কোনো না কোনো বিমান।
সত্য সাঁই বাবা ছোট বেলা থেকেই ছিলেন অসম্ভব বুদ্ধিমান, দানশীল। নাটক, সংগীত, নাচ এবং লেখালেখিতে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন ছোটবেলাতেই । কবিতা এবং নাটক লেখাতেও তার সমান আগ্রহ ছিল। একজন গায়ক হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। তার গাওয়া ভজনের একাধিক সিডি প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৪০ সালের ২০ অক্টোবর তিনি নিজেকে সির্দ্ধির সাঁই বাবার নতুন দেহ নিয়ে জন্ম নিয়েছেন বলে দাবি করেন। সির্দ্ধির সাঁই বাবার পুনর্জন্ম হয়েছে, আর তিনিই সেই বাবা।
একাধিক সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। পুত্তাপর্থিতে যে ছোট জেনারেল হাসপাতাল তিনি গড়ে তোলেন একদিন, এখন সেটা সত্য সাঁই বাবা ইনস্টিটিউট অব হায়ার মেডিকেল সাইয়েন্সেস। এখানে আছে ২২০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল।
ব্যাঙ্গালুরুর অদূরে ৩৩৩ শয্যা বিশিষ্ট আরও একটি আধুনিক হাসপাতালও তিনি গড়ে তোলেন। এটার নাম তিনি রেখেছেন ‘বৃন্দাবন’। এছাড়া সত্য সাঁই বাবা কেন্দ্রীয় ট্রাস্টি বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় পুত্তাপার্থিতে সত্য সাঁই বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো চলে সত্য সাঁই সেন্ট্রাল ট্রাস্টের অধীনে।
এছাড়া এই ট্রাস্ট সহায়তায় ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অনেক বিদ্যালয় এবং ওষুধের দোকান (দাতব্য) পরিচালিত হয়। এছাড়া সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়– ও মহারাষ্ট্রে বৃহৎ পানি সরবরাহ প্রকল্প শেষ করেছে। ভারতসহ বিশ্বের ১১৪টি দেশে সত্য সাঁইয়ের অফিস কার্যক্রম চালাচ্ছে।
কিন্তু বদনামও পিছু ছাড়েনি তার। ১৯৯৩ সালের ৬ জুন প্রশান্তি নিলায়ম আশ্রমের বাবার শয়নকক্ষে ছয়জনের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এদের সবাই বাবার ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১১