কিয়েভ: চেরনোবিল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশের ১৮ দশমিক ৫ মাইল এলাকা বিচ্ছিন্ন অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। সরকারিভাবেই এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে ৫০ মাইল দূরের এ দৃশ্য। আজ থেকে ২৫ বছর আগে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পরমাণু দুর্ঘটনাটি ঘটে। কয়েক হাজার মাইল দূরের জাপানের ফুকুশিমা অঞ্চলের পরমাণু কেন্দ্রের দুর্ঘটনাটি সেই চেরনোবিলের ভয়াবহতার কথা মনে করিয়ে দেয়। জাপানের জরুরি বিভাগের কর্মীরা চুল্লির রড আংশিক গলে যাওয়ার পর এখনো শীতল করার লড়াইয়ে নিয়োজিত রয়েছেন।
আর এদিকেও এখনো চেরনোবিল দুর্ঘটনা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে ইউক্রেনের কর্মীরা। সাদা পোশাক ও মুখোশ করে প্রতিদিনই তাদের কাজে নামতে হয়। পরমাণু চুল্লিটির এখনো গলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আরেকটি তেজষ্ক্রিয় মেঘ আকাশে ছড়াতে পারে।
চেরনোবিল অনেক শিক্ষা দেয়। এর তেজষ্ক্রিয়তা বহু হাজার বছর ধরে সক্রিয় থাকবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। পরমাণু দুর্ঘটনায় যে আইসোটোপ নিঃসৃত হয় তা হাজার হাজার বছর ধরে সক্রিয় থাকে। চেরনোবিল পরমাণু চুল্লির পরিচালক ইহর গ্রামোতকিনকে ওই অঞ্চলটি কবে বসবাসযোগ্য হবে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘অন্তত ২০ হাজার বছর পর। ’
গত ১৭ এপ্রিল কিয়েভে একটি সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ বলেন, ‘না ইউক্রেনের, না বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিৎ চেরনোবিল থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখা। দুর্ঘটনাটি আমাদের গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে, যা বহু বছর ধরে বয়ে বেড়াতে হবে। ’
২০৬৫ সাল নাগাদ ইউরোপে ১৬ হাজার লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে, যা চেরনোবিলের কারণে। কারণ তেজষ্ক্রিয়তা ইউরোপসহ উত্তর গোলার্ধের এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।
চেরনোবিল দুর্ঘনটনার পর উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া ইউরিয়ে দানিসভ বলেন, ‘আমরা নিজেদের হাতে ইউক্রেন ও অর্ধেক ইউরোপকে রক্ষা করেছি। এখন আমরা ভুগছি। ’
ইউরোপের চারপাশের তিন লাখ অধিবাসী তাদে বাসস্থান ছেড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আর ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর ৮০ হাজার লোককে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রবার্ট সোকোলোর কাছে তেজষ্ক্রিয়তা কী জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এটি হচ্ছে সেই আগুন, যা কখনো নেভে না। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১১