ঢাকা: আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেডক্রসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপেক্ষা করে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের দমনে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো।
দু’পক্ষের লড়াইয়ে হতাহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় স্বেচ্ছাসেবকদের কাজের সুবিধার্থে শনিবার (০৪ এপ্রিল) যুদ্ধবিরতির এ প্রস্তাব দেয় রেড ক্রস।
ইয়েমেনের রাজধানী সানায় রেডক্রসের মুখপাত্র ম্যারি-ক্ল্যারি ফেগালি জানান, মেডিকেল সহায়তার জন্যই তার সংস্থা এই যুদ্ধবিরতি চেয়েছিল।
তিনি বলেন, হাসপাতালগুলো হতাহতের ভিড় লেগে গেছে, মানুষ ঠিকভাবে চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইয়েমেনে মানবিক পরিস্থিতি সত্যিই কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে।
এদিকে, উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর যৌথ বাহিনীর মুখপাত্র সৌদি আরবের ব্রিগডিয়ার জেনারেল আমমেদ আল-আসিরি বলেছেন, জনসাধারণের জন্য সুবিধাজনক সময়ই আমরা সহায়তা সংস্থাগুলোকে কাজ করার সুযোগ দিতে পারবো।
তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালামাল পরিবহন সেনা অভিযানে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। সেই সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকদেরকেও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এছাড়া, এই মুহূর্তে তাদের কাজে নামতে দিলে অপাত্রে সহায়তা পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
তিনি বলেন, মিলিশিয়ারা এই সহায়তা পাক, আমরা তা চাই না।
গত ২৫ মার্চ হুথি বিদ্রোহীদের দমনে ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো সামরিক অভিযান শুরু করে। জাতিসংঘ ও গালফ কাউন্সিলভুক্ত উপসাগরীয় ছয় দেশ- সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে হুথিদের দমনে ইয়েমেন সরকারের ‘হস্তক্ষেপ‘ কামনার প্রেক্ষিতে এ হামলা শুরু করা হয় বলে সে সময় সৌদি আরব জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আদেল আল-জুবেইর সেসময় সংবাদমাধ্যমকে জানান, ইয়েমেন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর হাদির বৈধ সরকার ও তার জনগণকে রক্ষায় সৌদি আরব সেখানে সেনা অভিযান শুরু করেছে।
এর আগে, ইরানি পৃষ্ঠপোষকতাপুষ্ট শিয়া হুথি বিদ্রোহীরা সম্প্রতি ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে দেশটির প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে সানা থেকে পালিয়ে বন্দর নগরী এডেনে চলে যেতে বাধ্য করে।
আনসার আল্লাহ বা হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনে একটি জায়দি সম্প্রদায়ভুক্ত শিয়া সংগঠন। জায়দি শিয়ারা হযরত হোসেনের (রা.) দৌহিত্র জায়দ ইবনে আলির অনুসারী। সংগঠনটির নামকরণ করা হয় হুসেইন বদরেদ্দিন আল-হুথির নামে। ২০০৪ সালে ইয়েমেনে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত হন তিনি। তাকেই নিজেদের আধ্যাত্মিক নেতা মনে করে হুথিরা।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, সৌদি নেতৃত্বে অভিযান শুরুর পর গত দুই সপ্তাহে পাঁচশ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে আহত হয়েছে আরও প্রায় দুই হাজার ইয়েমেনি। এছাড়া, বন্দর নগরী এডেনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে এই এলাকার দক্ষিণাংশের অধিবাসীরা পানি-বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিনযাপন করছেন।
রাজধানী সানার স্বেচ্ছাসেবক হিশাম আল-ওমেইসি জানান, বিমান হামলা শুরুর পর গত দশ দিনে শনিবারই (৪ এপ্রিল) সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এডেনে হুথি বিদ্রোহী ও প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর হাদির অনুগত সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এখনও চলছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, শনিবার (৪ এপ্রিল) ইয়েমেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে ‘বিমান হামলায় নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক বিরতি’র বিষয়ে একটি খসড়া উপস্থাপন করে রাশিয়া। কিন্তু তার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি জাতিসংঘ।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৫
আরএইচ/এইচএ/