ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ব্রিটিশ রাজ পরিবারের তিন আলোচিত বিয়ে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১১
ব্রিটিশ রাজ পরিবারের তিন আলোচিত বিয়ে

ঢাকা: বিয়ে একটি সাধারণ ঘটনা হলেও কারো কারো ক্ষেত্রে তা হয়ে যায় অসাধারণ। কোনো বিয়ে আবার বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

তবে সেই সৌভাগ্য সবার হয় না। এমনকি সব যুবরাজের ক্ষেত্রেও ঘটে না। তবে এক্ষেত্রে ব্রিটিশ রাজপরিবার সব সময়ই এগিয়ে। এ পরিবারের সব বিয়েই কমবেশি আলোচনায় এসেছে। তবে বিভিন্ন কারণে কোনো কোনো বিয়ে একটু বেশিই আলোচিত হয়েছে। রানী ভিক্টোরিয়া থেকে প্রিন্সেস ডায়ানা পর্যন্ত ঘটনাগুলো নানা কারনে আলোচিত। সেই হিসেবে বলতে গেলে উইলিয়াম-কেটের বিয়েটিতে আলোচনার উপাদান খুব কমই রয়েছে বলা যায়।

রানী ভিক্টোরিয়া: বহুদিনের ঐতিহ্য ভাঙলেন

প্রাচীনকাল থেকেই সব দেশের রাজ-রাজরাদের একটি নির্দিষ্ট পারিবারিক প্রথা রয়েছে। যুগ যুগ ধরে তা কড়কড়িভাবে  মেনে চলা হয়। ব্রিটিশ রক্ষণশীল রাজপরিবারের এমনি ঐতিহ্যের ব্যত্যয় ঘটিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হন ভিক্টোরিয়া।

তিনিই প্রথম প্রথা ভেঙে বিয়েতে সাদা গাউন পরেন। পরবর্তীতে অবশ্য এটিই খ্রিস্টান জগতে বিয়ের আদর্শ পোশাক হিসেবে গৃহিত হয়। ১৮৪০ সালে প্রিন্স অ্যালবার্টের সঙ্গে তার বিয়ের আগে ব্রিটেনে কনের পোশাক ছিল রঙিন। এমনটি কালো পোশাকও পরতেন অনেকে।

আলোচনার আরো কারণ আছে। রাজপরিবারের সন্তানদের বিয়ের সম্বন্ধ হয় সাধারণত সাম্রাজ্যের কৌশলগত মিত্রের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রেও প্রথা ভেঙেছেন ভিক্টোরিয়া।

১৮৩৬ সালে যখন তার বয়স মাত্র ১৭ বছর তখন কাকার বড় ছেলে প্রিন্স অ্যালবার্টের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাত হয়। প্রথম দেখাতেই ভিক্টোরিয়া মনস্থির করেন অ্যালবার্টের সঙ্গেই বাকিটা জীবন তিনি অতিবাহিত করবেন। অল্প বয়সের এই প্রণয় থেকেই পরিণয়।

অবশ্য ১৮৩৮ সালের ১০ জুন রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের মৃত্যুতে বাধ্য হয়ে বিশাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসতে হয় তাকে। এ কারণে বিয়েটা তাদের একটু দীর্ঘায়িত হয়। তবে দুই বছর পর ১৮৪০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তারা গাঁটছড়া বাঁধেন।

বিয়েতে বাকি অন্যসব প্রথা মানা হলেও নিজের পোশাক-আশাকে নিজস্ব পছন্দের প্রতিফলন ঘটান তিনি। ঐতিহ্যবাহী ঢিলেঢালা পোশাক তিনি পরলেন না। এমনকি হীরকখচিত মুকুট না পরে পরলেন উর্বরতার প্রতীক কমলালেবু ফুলের মালা। ভিক্টোরিয়া অবশ্য এর যথার্থতা প্রমাণ করেছেন। অ্যালবার্টের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের দাম্পত্য জীবনে তিনি ৯টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

এলিজাবেথ: অবাধ্য রাজকন্যা

ব্রিটিশ রাজপরিবারের আরেকটি আলোচিত বিয়ে রাজকন্যা এলিজাবেথ পরে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও লেফটেনান্ট ফিলিপ মাউন্টব্যাটেনের বিয়ে। বিয়ের আগে ফিলিপ অবশ্য ডিউক অব এডিনবার্গ নামে পরিচিত ছিলেন।

তাদের বিয়ে হয় ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর। এটিও প্রেমের বিয়ে। দূর সম্পর্কের ভাই ফিলিপের সঙ্গে এলিজাবেথের প্রথম দেখা হয় ১৯৩৪ সালে যখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। এরপর থেকেই তারা চুটিয়ে প্রেম করেছেন। তাদের বাগদান হয় ১৯৪৬ সালে তবে পরিবারের আপত্তিতে তা গোপন রাখা হয়।

ফিলিপ-এলিজাবেথের সম্পর্ক নিয়ে রাজপরিবারের আপত্তির কারণ ছিল অনেক। এর মধ্যে অন্যতম হলো ফিলিপ গ্রিক অর্থোডক্স। ব্রিটিশ রাজপরিবার রোমান ক্যাথলিক। সম্ভবত এলিজাবেথের মা ফিলিপকে অনুমোদন দেননি। হবু জামাইকে তিনি বর্বর ‘হুন’ বলে ডাকতেন বলে কথিত আছে।

তার ওপর সে সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে কম্পিত ইংল্যান্ড। আর ফিলিপের সঙ্গে ছিল অক্ষশক্তি জার্মানির আত্মীয়তার সম্পর্ক। তিনি তার ছেলেবেলার কিছু সময় সেখানে কাটিয়েছেন। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে দুই জার্মান অভিজাতের সঙ্গে যাদের নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করা হতো।

তবে মায়ের শত আপত্তি সত্ত্বেও এলিজাবেথ ১৯৪৭ এর ৯ জুলাইয়ে তার বাগদানের খবর জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেন। ২০ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। সঙ্গত কারণে ফিলিপের জার্মান আত্মীয়রা বিয়েতে নিমন্ত্রণ পাননি।

বিয়ের পোশাক নিয়েও ছিল বিপত্তি। কনের পোশাক তৈরির দায়িত্ব পান নরম্যান হারটের নামে এক ডিজাইনার। লন্ডনের সব আর্ট গ্যালারি তন্ন তন্ন করে খুঁজে অবশেষে বোত্তিচেল্লির একটি শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণায় দীর্ঘ তিনমাসের পরিশ্রমে তিনি জাঁকজমকপূর্ণ গাউনটি তৈরি করেন।

গাউনের রেশম নিয়েও বেঁধেছিল গ-গোল। নরম্যানের শত্রুরা গুজব ছড়ায় ওই রেশমের মথ আনা হয়েছে শত্রুদেশ জাপান থেকে। পরে অবশ্য প্রমাণিত হয় রেশম মথগুলো চীনা।

ডায়ান ও চার্লস: শুভপরিণয় দুঃখজনক পরিণতি

প্রিন্স চার্লস ও ডায়ানা স্পেনসারের বিয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সবচেয়ে আলোচিত-বিতর্কিত। ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত এ বিয়েটি শতাব্দির কিংবদন্তীতুল্য একটি ঘটনা। বিয়ের দিনে সাধরণ ছুটি ঘোষণা, ডায়ানার পরিবহন শোভাযাত্রার পেছনের দুই লক্ষাধিক মানুষের সারিবদ্ধ অনুসরণ, কনের বিশেষ ধরনের গাউন এসব কিছুতে বৈশিষ্ট্যম-িত হয়ে আছে অনুষ্ঠিানটি।

ব্যতিক্রমের মধ্যে রয়েছে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ব্রিটিশ রাজের ইতিহাসে ৩০০ বছরের মধ্যে ডায়ানাই প্রথম কোনো ইংরেজ নারী যিনি প্রেমের সূত্র ধরে রাজপরিবারের সদস্য হন।

তিনি জন্ম নেন সাধারণ ব্রিটিশ পরিবারে। বেড়ে উঠেছেন অতি সাধারণভাবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো নাচের শিক্ষক ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষিকার মতো পেশায় জড়িত ছিলেন তিনি।

মজার ব্যাপার হলো প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে প্রথম যখন তার দেখা হয় তখন বয়স মাত্র ১৯ আর চার্লস তখন মধ্য তিরিশে। চার্লস কিন্তু তখন ডায়ানার বড় বোনের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছিলেন। কিন্তু চার্লসের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাবে হঠাৎ করেই তিনি বিয়েতে রাজি হন। ডায়ানার এ রোমান্টিক দৃষ্টিভঙ্গির কোনো হদিস এখানো জানা যায়নি।

অসম বয়সের এ জুটির বিয়েটি খুব ধুমধামের সাথে হলেও পরিণতিটা কিন্তু খুবই বেদনাদায়ক। পারস্পরিক অবিশ্বাস এক সময় এতোটাই চরমপর্যায়ে পৌঁছে যে ১৯৯২ সালের ৯ ডিসেম্বর তারা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান।

এজন্য ডায়ানা সব সময় প্রিন্স চার্লসকেই দোষারোপ করেছেন। বর্তমান স্ত্রী ক্যামিলা পারকার বোলসের সঙ্গে অবৈধ মেলামেশার কারণেই এমনটি করতে তিনি বাধ্য হয়েছেন বলে জানান। তবে নিজেও যে বিশ্বাস ভেঙেছেন সে কথাও ডায়ানা স্বীকার করেছেন।

চার্লস-ডায়ানার বিয়েটি আরো দুটি কারণে আলেচিত। বিয়েতে অঙ্গীকারের সময় ডায়ানা স্বামীর আজ্ঞাবহ হওয়ার শপথ করেননি। নিয়ম অনুযায়ী তিনি ‘ওবে’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। আরেকটি হলো- বিয়েতে সম্মতি দিতে চার্লসের নাম চার্লস ফিলিপ না বলে তিনি ‘ভুল করে’ ফিলিপ চার্লস। এ ঘটনা দুটি অনেককে অবাক করেছে।

ডায়ানাপুত্র উইলিয়ামের বিয়েতেও কেট শাশুড়ির পদাঙ্ক অনুসরণ করে ‘ওবে’ উচ্চারণ করেননি। এখন দেখার অপেক্ষা এ নবদম্পতির দাম্পত্য জীবন কতোটা দীর্ঘ হয়।

বাংলাদেশ সময় ১৮০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।