লন্ডন: বিখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী ও পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং ব্রিটেনের দৈনিক গার্ডিয়ানকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এতে তিনি মানুষের মৃত্যু-পরবর্তী জীবন বা পরকাল, মানুষের উদ্দেশ্য, এম-তত্ত্ব ও পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকার সম্ভাবনা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেছেন।
সাক্ষাৎকারে স্বর্গ ও পরকালের ব্যাপারে মানুষের বিশ্বাসকে তিনি রূপকথার গল্প বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ব্রিটেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বিজ্ঞানী বলেন, মানুষের মস্তিষ্ক শেষবারের মতো মিট মিট করে সাড়া দেওয়ার পর আর কিছুই থাকে না।
মাত্র ২১ বছর বয়সে মোটর নিউরন ডিজিজে আক্রান্ত হকিং সোমবার গার্ডিয়ানকে বলেছেন, অনারোগ্য অসুস্থতার কারণে তিনি অল্প বয়সেই মারা যাবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে তিনি দিব্যি বেঁচে আছেন। গবেষণাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
মৃত্যু নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘অল্প বয়সেই মারা যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে আমি গত ৪৯ বছর বেঁচে আছি। মৃত্যু নিয়ে আমি ভীত নই। তবে আমি তাড়াতাড়ি মরতে চাই না। সবার আগেই করতে চাই এমন অনেক কাজ রয়েছে আমার। ’
হকিং বলেন, ‘আমি মস্তিষ্ককে কম্পিউটার হিসেবে বিবেচনা করি। এর উপাদানগুলো ব্যর্থ হলে এটা কাজ করা থামিয়ে দেবে। এই কম্পিউটার ভেঙে গেলে আর স্বর্গ বা পরকাল বলে কিছুই থাকে না। অন্ধকারের ভয়ে ভীত মানুষের জন্য এটা রূপকথার গল্প। ’
হকিংয়ের এই মতামতগুলো তিনি তার ২০১০ সালে প্রকাশিত বই দ্য গ্রান্ড ডিজাইনে উল্লেখ করেছেন। তিনি এতে বলেন, বিশ্বের অস্তিত্ব ব্যাপারে সৃষ্টিকর্তার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। বইটি প্রকাশের বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় নেতাদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন হকিং। এর আগে তার এ ব্রিফ হিস্টরি অভ টাইম বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়।
৬৯ বছর বয়সী পদার্থবিদ ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বক্তৃতার পর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি ক্যামব্রিজে তার গবেষণা পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে কাজে ফিরে যান।
সাক্ষাৎকারে হকিং পরকাল তত্ত্বকে নাকচ করে পৃথিবীর জীবনকে সর্বোত্তম ব্যবহার করে এবং এর সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। আমাদের কিভাবে জীবনযাপন করা উচিৎ এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মের মহোত্তম তাৎপর্য খোঁজা উচিৎ। ’
একই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় মহাবিশ্বের কোয়ান্টামের অত্যল্প আলোড়নে গ্যালাক্সি, তারকা ও মানবজাতির উৎপত্তি হয়েছে। বিজ্ঞানের অনুমানে বিভিন্ন ধরনের মহাবিশ্ব স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি হয়ে থাকবে, কোনো কারণ ছাড়াই। আর এই সম্ভাবনার মধ্যে আমরা আছি। ’
হকিং বলেন, আধুনিক মহাকাশসংক্রান্ত্র বিভিন্ন যন্ত্রে (যেমন ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার প্লাংক মিশন) মহাবিশ্বের প্রাথমিক মুহূর্তগুলোর প্রাচীন আলো সনাক্ত করা সম্ভব এবং মহাশূন্যে আমাদের জায়গা কিভাবে এলো তাও বের করা যাবে।
মঙ্গলবার লন্ডনে ‘হোয়াই উই আর হেয়ার?’ শীর্ষক প্রশ্নের জবাব দেবেন হকিং। এই আলোচনা সভায় আরও থাকবেন ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্ন ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ প্রমুখ।
‘হোয়াই উই আর হেয়ার?’ অর্থাৎ আমরা এখানে কেন আছি এটা জানতে পারার তাৎপর্য কী? এর উত্তরে হকিং বলেন, ‘মহাবিশ্বকে চালাচ্ছে বিজ্ঞান। তবে বিজ্ঞান আমাদের বলে, বিমূর্তভাবে সরাসরি আমরা বহু সমীকরণের সমাধান করতে পারব না। ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনসংক্রান্ত টিকে থাকার লড়াইয়ের তত্ত্ব কার্যকরভাবে ব্যবহার করা জরুরি।
‘আপনার বিজ্ঞানের সবচেয়ে সুন্দর জিনিস কোনগুলো?’ এমন প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, বিজ্ঞান কোনো ঘটনার সহজ ব্যাখ্যা দেয় তখন সবচেয়ে সুন্দর লাগে। হকিং বলেন, পদার্থবিদ্যার মৌলিক সূত্রগুলো ও জীববিদ্যার ডাবল হেলিক্স তার ভাল লাগে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১১