প্যারিস: দোমিনিক স্ত্রস কানের ঘটনার পর ফ্রান্সের রাজনীতিকরা নারীদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করায় খেপেছে দেশটির নারীবাদী সংগঠনগুলো। গতকাল রোববার প্যারিসে এ নিয়ে তারা বিক্ষোভও দেখিয়েছে।
নারী অধিকার আন্দোলনের তিনটি সংগঠন রাজধানী প্যারিসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় তারা ৬ হাজার লোকের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি নিন্দাপত্র প্রকাশ করে। কিছু রাজনীতিক বিশেষ করে বাম রাজনীতিকদের মধ্যে অনেকে স্ত্রস কানের পক্ষে যেভাবে অবস্থান নিয়েছেন এবং যে ধরনের মন্তব্য করছেন তা একেবারে ‘নির্লজ্জ যৌন বৈষম্য’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন তারা।
২০১২ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সোশালিস্ট পার্টির একজন প্রার্থী হিসেবে স্ত্রস কানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা রয়েছে।
নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, ‘১৪ মে শনিবার নিউইয়র্কে কী ঘটেছে তা আমরা জানি না। কিন্তু আমরা জানি গত সপ্তাহ থেকে ফ্রান্সে কী ঘটছে। জনপ্রিয় কিছু ব্যক্তির পক্ষ থেকে যে ধরনের নারী বিদ্বেষী মন্তব্য অব্যাহতভাবে আসছে তাতে আমরা বিব্রত। ’
নিন্দাপত্রে বলা হয়, স্ত্রস কানের বন্ধু এবং মিত্ররা তাকে একজন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। অথচ তারা ভুক্তভোগী ৩২ বছর বয়সী ওই হোটেল পরিচারিকার বিষয়টি উপেক্ষা করছেন। তাদের মন্তব্যগুলো ফ্রান্সে নির্বাধ যৌন বৈষম্যেরই প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন নারীবাদিরা।
নিন্দাপত্রটি পেশ করেছে অসেজ লে ফেমিনিজমি, লা বারবি এবং প্যারোলেস ডি ফেমেস নামে তিনটি সংগঠন। এতে স্বাক্ষর করেছেন অনেক নামিদামী টিভি ব্যাক্তিত্ব এবং অভিনেত্রীরা।
বাম দলের রাজনীতিকরা বিশেষ করে সোশালিস্ট পার্টির নেতা সাবেক সংস্কৃতি ও শিক্ষামন্ত্রী জ্যাক ল্যাং এর মন্তব্য সবচেয়ে বেশি অবমাননাকর। তিনি বলেছেন, ‘স্ত্রস কানকে তাৎক্ষণিকভাবে জামিন দেওয়া উচিত ছিল। কারণ কেউ তো মারা যায়নি।
স্ত্রস কানের ঘনিষ্ট বন্ধু রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং বাম জাতীয়তাবাদি জ্যাঁ ফ্র্যাঙ্কিস কান যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া চাকর-বাকরের সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সম্ভোগ বলে বর্ণনা করেন।
তবে পরে এরা উভয়ে পরে তাদের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
স্ত্রসের অপর এক বন্ধু গিলিস স্যাভারি এ ঘটনাকে ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিভেদ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে মন্তব্যের জন্য তিনি ভুল স্বীকার করেননি।
মন্তব্য প্রকাশে এ ধরনের ভাষার ব্যবহার যৌন স্বাধীনতা এবং নারীর প্রতি সহিংসতার পার্থক্য নিয়ে একধরনের সংশয় সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন নারী অধিকার কর্মীরা। তারা বলেন, এর মাধ্যমে ভুক্তভোগীর প্রতি এ বার্তা যাচ্ছে- কোনো অভিযোগ করো না।
নারীবাদি সংগঠনগুলো সোশালিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির ডানপন্থী দল ইউএমপি বেশ খুশিই হয়েছে। তারা মনে করছে আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেদের নারী অধিকারের পক্ষের দল হিসেবে জনগণকে বিশ্বাস করানো কঠিন হবে।
এদিকে পরিবেশ মন্ত্রী নাটালি কোসিউসকো মোরিজত বলেন, যৌন বৈষম্যের মতো সামাজিক সমস্যা শুধু সোশালিস্ট পার্টি না গোটা ফ্রান্সেই এটি রয়েছে। এ নারী মন্ত্রী বলেন, যৌন হয়রানির শিকার একজন নারীকে সব সময়ই বিষয়টি বিশ্বাস করাতে সংগ্রাম করতে হয়। সমাজের সর্বস্তরে পুরুষতান্ত্রিক একটি মনোভাব রয়ে গেছে। লোকেরা প্রায়ই এ ব্যাপারে উদাসীন থাকে।
অপর দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, স্ত্রস কান কারাদণ্ড পেলে তাকে ফ্রান্সের জেলে কারাভোগ করতে দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাবেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১১