বেনগাজি: যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনে অন্তর্বর্তীকালিন জাতীয় পরিষদের কার্যালয় খুলতে লিবিয়ার বিদ্রোহীদের প্রতি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মঙ্গলবার বেনগাজিতে পরিষদের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এদিকে যখন তিনি এ কথা বলছিলেন ঠিক তখনই ত্রিপোলিতে গাদ্দাফির শক্ত ঘাঁটিতে জোরালো হামলা চালিয়েছে ন্যাটো।
প্রায় আধা ঘণ্টার হামলায় ন্যাটোর বিমান বাহিনী ২০টিরও বেশি বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় ত্রিপোলির কেন্দ্রে গাদ্দাফির নিরাপদ ঘাঁটি বাব আল আজিজিয়ার আশপাশের এলাকা থেকে ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।
সরকারের মুখপাত্র মুসা ইবরাহিম জানিয়েছেন, লিবীয় সেনাদের স্বেচ্ছাসেবী ইউনিটের ব্যবহৃত ভবন লক্ষ্য করে ন্যাটো হামলা চালিয়েছে। এতে নিহত হয়েছে তিনজন এবং আহত হয়েছে ১২ জনেরও বেশি।
ন্যাটো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাব আল আজিজিয়ার নিকটে একটি সামরিক যানবাহন রাখার স্থানে হামলা চালানো হয়েছে। এখান থেকে বেসামরিক মানুষদের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে প্রয়োজনী যানবাহন সরবরাহ করা হতো।
তবে এটা পরিস্কার নয় একাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে কি না। বাব আল আজিজিয়াতে এরকম অনেক সামরিক স্থাপনা রয়েছে। ন্যাটো এর আগে অবশ্য এখানে অনেকবার হামলা চালিয়েছে।
এদিকে লিবিয়ায় গাদ্দাফি বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করতে ফ্রান্স ও ব্রিটেন আরো শক্তিশালী জঙ্গি হেলিকপ্টার সমরবরাহ করছে বলে সোমবার ফরাসি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেরার্ড লংগেট জানিয়েছেন।
বিদ্রোহীদের গঠিত অন্তবর্তীকালিন জাতীয় পরিষদকে ফ্রান্স এবং ইতালিসহ একাধিক পশ্চিমা দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যরা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন বেনগাজি শহরে তাদের কূটনীতিকদের যাতায়াত বাড়িয়ে দিয়েছে।
নিকটপ্রাচ্য বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেফরি ফেলটম্যান মঙ্গলবার বেনগাজিতে লিবিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা গাদ্দাফি এবং তার লোকদের সঙ্গে কথা বলছিনা। তারাও আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করছে না। তারা তাদের বৈধতা হারিয়েছে। আমরা কথা বলছি তাদের সঙ্গে যাদের আমরা বৈধ ও বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করি। ’
বেনগাজি সফরে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
ফেলট আরো বলেন, তিনি আশা করছেন যুক্তরাষ্ট্রে গাদ্দাফি সরকারের কর্মকর্তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে কংগ্রেস খুব শিগগির ভোট করবে। এ অর্থ লিবিয়াতে মানবিক সহায়তায় ব্যবহার করা হবে। এসময় জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী মানবাধিকার রক্ষার জন্য বিদ্রোহীদের প্রশংসা করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র মারণাস্ত্র ছাড়া অন্যান্য রসদ কিনতে বিদ্রোহীদের ৫৩ কোটি ৫ লাখ ডলার দেবে বলে জানান তিনি।
অবশ্য বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রের এ কূটনৈতকি যোগাযোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তাদের মতে গাদ্দাফিকে পরাজিত করতে আরো কার্যকর অস্ত্রের প্রয়োজন।
বিদ্রোহীদের মুখপাত্র আব্দেল হাফিজ গোগা বলেন, ‘স্বীকৃতি এবং স্বাধীন এলাকা সফর করাই যথেষ্ট নয়। আমরা তাদের বুঝাতে চেয়েছি, আমাদের অস্ত্র দরকার। আমাদের যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এবং যতোটা সম্ভব কম মানবিক ক্ষতির মধ্যদিয়ে একটি সফল সমাপ্তির জন্য তহবিল দরকার। ’
উল্লেখ্য, গাদ্দাফির বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের বিমান হামলা এবং কূটনৈতিক চাপ দেশটিতে কোনো ইতবিাচক পরিবর্তন আনতে পারেনি বরং একপ্রকার অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে দেশটির পূর্বাংশ দখলে রয়েছে বিদ্রোহিদের এবং পশ্চিমাংশ দখলে রয়েছে গাদ্দাফির।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১১