লন্ডন: উচ্চ শিক্ষা নিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী ছুটছে ইংল্যান্ডে। তৃতীয় বিশ্বের মেধাবী শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণের দেশ এটি।
লন্ডনের শিক্ষাসঙ্কট নিয়ে এমনই একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানকার সান্ধ্য দৈনিক ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড। মঙ্গলবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনে প্রাথমিক স্কুলগুলোতে প্রতি চার শিশুর মধ্যে এক জনই ঝরে যায়। এমনকি এরা ঠিকমতো লিখতে পড়তেও শিখছে না। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃথিবীর অন্যতম এ শহরটিতে এখন প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ রয়েছেন যারা পড়তেই জানেন না।
‘এ সিটি অব চিলড্রেন হু কেননট রিড’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনে প্রাথমিক পর্যায়ে যে হারে শিশুরা ঝরে যাচ্ছে তাতে ব্রিটিশ সোসাইটিতে এমন একটি প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে যারা মৌলিক প্রয়োজন মিটানোর মতো শিক্ষাও অর্জন করতে পারছে না। সাধারণ বাক্য, সময়সূচি, এমনকি ডাক্তারের দেওয়া ব্যবস্থাপত্রে লেখা ওষুধের নামও এরা পড়তে পারে না। প্রাথমিক শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় বাজেট থাকা সত্বেও কেনো সরকার এতে ব্যর্থ হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার থেকেই কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড।
ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বইয়ের দোকান, লাইব্রেরি, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং কবি, সাাহিত্যিক ও লেখকদের পদচারণায় মুখর মুক্তবুদ্ধি চর্চার জন্য পৃথিবী বিখ্যাত লন্ডন শহরের প্রতি ৩টির মধ্যে একটি শিশুই বড় হয় নিজস্ব প্রিয় কোনো বইয়ের সংস্পর্শ ছাড়া। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, একটি শিশুর নিজের প্রিয় খেলনার মতো কোনো বই যদি না থাকে বা বাড়িতে বইয়ের সংস্পর্শে আসার সুযোগ না পায় তাহলে সারাজীবনেও সে লেখাপড়া শিখতে পারে না। এ সমস্যার কারণে ব্রিটিশ সমাজে শিক্ষাহীন যে প্রজন্মটি গড়ে উঠছে তার পরিধি দিন দিন বাড়ছে।
প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১১ বছর বয়সী প্রতি চার জনের একজন কিশোর-কিশোরী যথাযত শিক্ষাগ্রহণ ছাড়াই প্রাথমিক বিদ্যালয় ত্যাগ করছে। প্রতি ৫ জনে ১ জন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়ে অর্জিত শিক্ষা নিয়ে আত্মবিশ্বাস ছাড়াই।
পরিসংখ্যানে আরো জানা যায়, লন্ডনে কর্মরত পরিণত বয়সের প্রায় ১০ লাখ মানুষ নিজের আত্মবিশ্বাস অনুযায়ী পড়তে জানে না। মোট জনসংখ্যার হিসাবে তা হলো প্রতি ৬ জনে ১ জন।
ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জাতীয়ভাবে ইংল্যান্ডের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষের শিক্ষাগত দক্ষতা ৭ বছর বা তারও কম বয়সী শিশুর মতো। ২৬ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মোট ১৬ শতাংশ মানুষের শিক্ষাগত দক্ষতা ১১ বছর বয়সীদের মতো।
এছাড়া, মাধ্যমিক বিদ্যালয় শুরু করার মুহূর্তে লন্ডনের ১১ বছর বয়সী প্রায় ৪০ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে ৬ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের মতো। লেখাপড়ায় লন্ডনের ভেতরে প্রতি ৫ জনের ১ জনের জন্য আলাদা যত্মের (স্পেশাল নিড) প্রয়োজন হয় যা অনেকটা ডিজলেক্সিয়া (অক্ষর এলোমেলো দেখা) রোগের মতো।
অপরদিকে, লন্ডনের ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের মতে তাদের কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা এতোই খারাপ যে এতে তাদের ব্যবসাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তবে, শিক্ষাক্ষেত্রে লন্ডনের ছেলে-মেয়েদের এমন হতাশাজনক অবস্থা হলেও শেতাঙ্গদের তুলনায় অভিবাসী কমিউনিটি ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন লন্ডনের হ্যাকনি মসবার্ন কমিউনিটি একাডেমির প্রধান মাইকেল উইশো।
তিনি বলেন, ইংল্যান্ডের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এমন করুণ দশার কারণ হিসেবে অভিবাসী সমস্যাকে অনেকে দায়ী করলেও শিক্ষাক্ষেত্রে অভিবাসী কমিউনিটির ছেলে-মেয়েদের অবস্থা ভালো। সন্তানদের শিক্ষালাভের প্রতি অভিবাসী কমিউনিটির অভিভাবকদের আলাদা মনযোগ রয়েছে বলেই তা এগিয়ে থাকছে।
মাইকেল উইশোর মন্তব্য সমর্থন করে বয়স্কদের জন্যে কোর্স পরিচালনা করেন এমন একজন শিক্ষক মিস টাউনসন বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা শিক্ষিত হলে মা-বাবাকে সাহায্য করতে পারে- এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা অশিক্ষিতি অভিভাবকদের জন্যে ‘কিপিং আপ উইথ দ্য চিলড্রেন’ নামে একটি কোর্স পরিচালনা করছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১১