লন্ডন: সম্প্রতি ই-কোলি ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তারের ফলে খাদ্যে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ার জন্য ইউরোপকেই দোষারোপ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
অবশ্য এই জীবাণু উৎস হিসেবে এ পর্যন্ত সনাক্ত করা হয়েছে, কাঁচা টমেটো, শসা এবং লেটুস পাতা।
ই-কোলির সংক্রমণে গত কয়েক দিনে কমপক্ষে ১০টি ইউরোপীয় দেশে কমপক্ষে ১৮ জান মারা গেছেন। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ১৬শ জনেরও বেশি মানুষ।
আরো ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো প্রায় ৫শ মানুষ এর সংক্রমণে কিডনির জটিল সমস্যায় ভুগছেন।
চীনা এবং জার্মান বিজ্ঞানীরা ওই ই-কোলি ব্যাক্টেরিয়ার ডিএনএ পরীক্ষা করেছেন। তারা বলছেন, এ ধরনের সংক্রমণ একেবারেই নতুন ধরনের। এটি এমন ধরনের ব্যাক্টেরিয়া যা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন বহন করে।
চীনের শেনজেন প্রদেশে বিজিআই পরীক্ষাগার থেকে এক বিবৃতিতে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে এ জীবাণুটি দু‘ধরনের ই-কোলির সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রজাতি বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিলড ক্রুজ বলেন, এই ধরনের জীবাণু এর আগে কখনো রোগীর শরীরে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্বলিত এ জীবাণু অনেক বেশি প্রাণঘাতী এবং বিষাক্ত পদার্থ উৎপাদনে সক্ষম। মানুষের অন্ত্রে সাধারণত যে ধরনের ই-কোলি থাকে এরা তার থেকে আলাদা।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের খাদ্যবাহিত রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর রবার্ট টাউক্স অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। এ জীবাণু আদতেই নতুন প্রজাতির কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ১৯৯০‘র দশকে কোরিয়াতে এরকম একটি মাত্র সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
তিনি বলেন জিনগত বৈশিষ্ট্য (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) নমুনা থেকে নমুনায় আলাদা হতে পারে। তবে একটি নতুন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য এ ভিন্নতা যথেষ্ট নয়।
তিনি আরো বলেন, যদিও এ জীবাণু খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে, তবে জনস্বাস্থ্যের জন্য আগের চেয়ে বড় ধরনের হুমকি বলে এখনো প্রমাণিত হয়নি।
এর মধ্যে স্পেন ও জার্মানি থেকে আমদানি করা কাঁচা সবজি ও ফলমূল ইউরোপের বাজারে বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সব দেশ থেকে কাঁচা শাকসবজি ও ফলমূল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া।
কোনো কোনো বিজ্ঞানীর ধারণা, শাকসবজি চাষের সময় যে জৈব সার প্রয়োগ করা হয় তার মাধ্যমে এই ঘাতক ই-কোলি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এ সংক্রমণকে বিশ্বের ইতিহাসে ই-কোলি জনিত স্বাস্থ্য সমস্যার তৃতীয় বৃহত্তম এবং সম্ভবত সবচেয়ে মারাত্মক মহামারি বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে ১৯৯৬ সালে জাপানে এ জীবাণুর সংক্রমণে ১২ জনের মৃত্যু এবং ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এর পর ২০০০ সালে কানাডাতে একই কারণে ৭ জনের মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১১