ঢাকা: ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলে চালু হওয়ার চারমাসের মাথায় আবারও বন্ধ হচ্ছে নেপালের স্কুলগুলো। এবার কারণ জ্বালানি সঙ্কট।
দেশটিতে চলমান ভারত বিরোধী বিক্ষোভের প্রভাবে পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যের অভাব দেখা দিয়েছে। তাই স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা পঞ্জিকার চলতি বছরের একাডেমিক সেশনও।
নেপালের ‘দ্যা হিমালয়ান টাইমস’র খবরে এ তথ্য জানা গেছে।
বুধবার (০৭ অক্টোবর) পত্রিকাটি লিখেছে, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যের অভাবে ভক্তপুর জেলার বেশ কয়েকটি স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুলগুলোর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন বরাবর অনুরোধ জানানোর পরও পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্য পাচ্ছিল না। তাই শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার বাসগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ কারণে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে নেপালের ‘দ্যা প্রাইভেট অ্যান্ড বোর্ডিং স্কুলস অর্গানাইজেশন (পাবসন)’।
পাবসনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দীপিকা থাপার বরাত দিয়ে পত্রিকাটি লিখেছে, জ্বালানির অভাবে শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার বাস চলছে না বলেই এ সিদ্ধান্ত।
পাবসন ভক্তপুরের সভাপতি রাজ কুমার মহাজন জানান, মাসাধিককাল বন্ধ থাকার পর স্কুলগুলোতে পাঠদান চালু হয়েছিল। কিন্তু এবার পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্যের অভাবে পাঠদান বন্ধ হল।
এ বছরের একাডেমিক সেশন পঞ্জিকা অনুসারে চলবে না- এ আক্ষেপ তার।
সম্প্রতি ভারত থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ করা নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে নেপালে নতুন সংবিধান প্রণয়ন হলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। নতুন সংবিধানে দেশটিকে ফেডারেল কাঠামোর আওতায় আনার কারণে এর দক্ষিণাঞ্চলের সংখ্যালঘুরা বৈষম্যের আশঙ্কায় ভোগে।
এদিকে ভারতীয় সীমান্তের সংখ্যালঘুদের আপত্তির করলেও নেপাল নতুন সংবিধান প্রণয়নে তাড়াহুড়া করেছে বলে সমালোচনা করে ভারত। নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগে আগস্ট মাস থেকেই বিক্ষোভ চলছিল এবং এতে এ পর্যন্ত বেশ কিছু প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। বিক্ষোভের কারণে ভারতীয় তেলবাহী ট্রাকগুলো সীমান্ত পার হচ্ছে না। নেপাল কর্তৃপক্ষও তেল সাশ্রয়ের জন্য গাড়ির ব্যবহার সীমিত রাখার চেষ্টা করছে।
বিক্ষুব্ধ নেপালিদের অভিযোগ, ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও নতুন সংবিধান হওয়ায় প্রতিবেশী বড় রাষ্ট্রটি ‘বাণিজ্য অবরোধ’ চাপিয়েছে এবং নতুন সংবিধানের ব্যাপারে ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে।
সব মিলিয়ে কুপ্রভাব পড়ে গেল সেদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও। ভূমিকম্পের পর মে মাস পর্যন্ত কাঠমান্ডুর ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা ও এর আশপাশের সবগুলো স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছিল নেপাল সরকার। ভয়াবহতা কিছুটা কাটিয়ে ৩১ মে স্কুলগুলো চালু হয়েছিল।
শুরুর দিকে কিছুদিন শিশুদের ধ্বংসলীলা-পরবর্তী মানসিক ট্রমা থেকে বেরোনোর উপায় শেখানো হয়। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য মতে, ২৫ এপ্রিলের শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায় ২৪ হাজার স্কুল এবং একের পর এক আফটার শকে আরও অনেক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩১ মে দেশটির কয়েক হাজার স্কুল একযোগে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ভবনগুলো আংশিক ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ায় অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করা হয়। কিছু কিছু স্কুলের প্রাঙ্গণে বাঁশ দিয়ে শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয়।
গত ২৫ এপ্রিল ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে নেপাল। এর ১৭ দিনের মাথায় ১২ মে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্পে আবারও কেঁপে ওঠে দেশটি।
বিক্ষোভ ও স্কুল বন্ধের ঘটনায় সেদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি মোহাম্মদ বারিকুল ইসলাম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘…আবারও স্কুল বন্ধ হওয়া শুরু হয়েছে... পেট্রোল-ডিজেলের অভাবে। কতদিন এ অবস্থা চলবে তা কেউই জানে না। গত তিন সপ্তাহ ধরে ভারত নেপাল সীমান্তে যে অচলাবস্থা চলছে তাতে নেপালিরা ধৈর্য্যের চরম পরীক্ষা দিচ্ছে । তারা কেউই জানে না শেষ কোথায় আর তাদের কী করা উচিৎ!’
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৫
এসকেএস/এমজেড