ঢাকা: মকবুল ফিদা হুসেনের জন্ম ১৯১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পান্ধারপুর শহরে। এযাবৎকালে ভারতের অন্য সব চিত্রশিল্পীর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনি।
তিনি শুধু একজন চিত্রকরই নন, একাধারে তিনি ছিলেন আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। এসব কারণে একসময় বিখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীতে মকবুল ফিদা হুসেনকে ‘ভারতের পিকাসো’ বলে অভিহিত করা হয়।
মকবুল ফিদা মাত্র দেড় বছর বয়সেই তার মাকে হারান। এর কিছুদিন পরেই তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে সপরিবারে ইন্দোরে চলে যান। সেখানেই মূলত তার স্কুলশিক্ষা সমাপ্ত হয়। ইন্দোর থেকে ১৯৩৫ সালে ফিদা মুম্বাইয়ের স্যার জে জে চিত্রকলা স্কুলে ভর্তি হন। ফিদা তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপন চিত্র আঁকার মধ্য দিয়ে। ১৯৪০ সালেই তার আঁকা চিত্রকর্ম বেশ সুনাম অর্জন করে।
১৯৪৭ সালে তিনি ফ্রান্সিস নিউটন সুজা প্রতিষ্ঠিত প্রগ্রেসিভ আর্টিস্ট গ্রুপে যোগ দেন। তখনই তিনি বোম্বে আর্ট সোসাইটির বার্ষিক চিত্রকর্ম প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতে নেন। এরপর তিনি দিল্লি যান। সেখানে তিনি প্রাচীন মথুরা এবং ভারতীয় মিনিয়েচারের ওপর কাজ শুরু করেন। বলা হয়, চিত্রশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া ক্ষেত্রে এটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এসময়ই তিনি পাশ্চাত্যের চিত্রকলার সঙ্গে ভারতের চিত্রকলার সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করেন।
ধীরে হলেও ক্রমাগতভাবে তিনি সাফল্যের শীর্ষে উঠতে লাগলেন। এক পর্যায়ে তিনি সারা ভারতের সবচেয়ে দামি শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যান। ফিদা শুধু চিত্রকর্মের মধ্যেই তার কাজ সীমাবদ্ধ রাখলেন না।
কয়েকটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন তিনি। এর মধ্যে ‘গজগামিনী’, ‘মীনাক্ষী: আ টেল অব থ্রি সিটিজ’ অন্যতম। তার নির্দেশিত আরেক চলচ্চিত্র ‘থ্রু দ্য আইজ অব আ পেইন্টার’ বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং তা গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কার জিতে নেয়।
১৯৫২ সালে জার্মানির জুরিখে ফিদার প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। তার প্রদর্শিত ছবিগুলো যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ জুড়ে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।
১৯৯০ সালে হুসেনের আঁকা হিন্দু দেবদেবীর কিছু বিবসন চিত্রকর্ম বিতর্কের ঝড় তোলে। যদিও ওই ছবিগুলো আঁকা হয়েছিলো ১৯৭০ সালে। দীর্ঘ এই সময়ে কেউই এই ছবিগুলো নিয়ে কোনো প্রকার সমালোচনা করেনি। কিন্তু ভারতের ‘বিচার মীমাংসা’ নামের একটি মাসিক সাময়িকীতে প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিয়ে বিস্তৃত আকারে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
১৯৯৮ সালে শিব সেনা নামের একটি উগ্র হিন্দু সংগঠন তার বাড়িতে হামলা চালায় এবং অনেকগুলো চিত্রকর্ম ধ্বংস করে দেয়। হিন্দু দেবদেবীর বিবসন ছবি এঁকে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা হয়েছে বলে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়। পরবর্তী সময়ে তাকে বিভিন্ন উগ্রবাদী হিন্দুগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়। এরপর তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসনে লন্ডনে চলে যান। মাঝে মাঝে দুবাইয়েও থাকতেন। আরব দেশগুলোর মধ্যে কাতার তাকে সেদেশের নাগরিকত্ব দেয়।
মকবুল ফিদা হুসেন যেসব সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন:
২০০৭: কেরালা সরকারের পক্ষ হতে রাজা রবি বর্মা পুরস্কার।
বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট উপাধি দেয়
জামিয়া মিল্লিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট উপাধি দেয়
২০০৪: দিল্লি ললিত কলা একাডেমি ‘ললিত কলারত্ন’ উপাধি দেয়
১৯৯৭: আদিত্য বিক্রম বিরলা তাকে কলাশেখর পুরস্কার দেয়
১৯৮৯: ভারত সরকার তাকে পদ্মবিভূষণ পদক
১৯৭৩: ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ পুরস্কার দেয়
১৯৬৮: ‘থ্রু দ্য আইজ অব আ পেইন্টার’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার
১৯৬৭: একই চলচ্চিত্রের বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কার লাভ
১৯৫৯: টোকিওতে আন্তর্জাতিক বিয়েনেল পুরস্কার
১৯৫৫: ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পদক দেয়
১৯৫৫: জাতীয় চিত্রপ্রদর্শনী প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ
১৯৪৭: মুম্বাই আর্ট সোসাইটির পুরস্কার।
সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ০৯ জুন, ২০১১