রিয়াদ: সরকার পরিবর্তনের দাবিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে একের পর এক গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সৌদি সরকার। সরকারবিরোধী আন্দোলন নিরুৎসাহিত করতে সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রণোদনা, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিসহ নানা উদ্যোগে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন বাদশাহ।
সৌদি রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পকর্কে সব সময়ই গুরুত্ব দিয়ে থাকে সরকার। আর তাতে কাজও হয়েছে বেশ। যেমন ইসলামে রাজপথে প্রতিবাদ সমাবেশ নিষিদ্ধ বলে ফতোয়া জারি করলেন সৌদি আরবের প্রধান মুফতি। এমনকি শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজের দিন এ বিষয় নিয়ে খুতবাও পাঠ করলেন তিনি।
একজন প্রভাবশালী জনপ্রিয় তরুণ ধর্মীয় নেতা মোহাম্মেদ আল-আরিফি সম্প্রতি শুক্রবারের এক খুতবায় বলেন, ‘যারা এসব পরিবর্তন চায় তারা সামাজিক নিরাপত্তার ধার ধারে না। এরা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশায় বিশ্বাস করে। এরা চায় মেয়েরা গাড়ি চালাক। এরা সি বিচে সুইমিং স্যুট পরা অর্ধনগ্ন মেয়েদের দেখতে যায়। ’
সৌদি সরকার সরকারি কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধি, গৃহায়ন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে মোট ব্যয় করেছে ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর শুধু তেল খাত থেকে রাজস্ব এসেছে ২১৪ বিলিয়ন ডলার। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের খরচ করার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম রক্ষণশীল রাজতান্ত্রিক এ দেশটি পরিবর্তনের দাবিতে গণবিক্ষোভের হাত থেকে এক প্রকার বেঁচেই গেলো।
বাদশাহ আবদুল্লাহ সরকারি কর্মচারীদের অতিরিক্ত দুই মাসের বেতন দিয়েছেন যাতে তারা বিক্ষোভে অংশ না নেয়। নিম্ম আয়ের মানুষদের জন্য ৫ লাখ বাড়ি তৈরি করতে ব্যয় করেছেন ৭০ বিলিয়ন ডলার। ধর্মীয় পুলিশসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন ২০০ মিলিয়ন ডলার।
তবে এর মধ্যেও সৌদি আরবে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটা হয়েছিল এ বছরের ১১ মার্চে শিয়া অধ্যুষিত পুর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে। এই বিক্ষোভের আয়োজকরা তাদের নাম প্রকাশ করেনি। যদিও পুলিশ কিছু বিক্ষোভকারীকে প্রেপ্তার করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট মিত্র এই দেশটিতে ‘জেসমিন বিপ্লবের’ কোনো ছোঁয়া লাগুক তা চায় না যুক্তরাষ্ট্র। যদিও আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ইন্ধন দিয়ে আসছে তারা।
তবে খোদ রাজপরিবারেরও কিন্তু ভিন্ন মত রয়েছে। যেমন সৌদি বাদশাহর ভাই তালাল বিন আবদুল আজিজ বলেন, অনেক নেতাই পরিস্থিতি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষাও নিতে চাচ্ছেন না। ১৪ সন্তানের জনক এই রাজপুত্র বলেন, তারা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়। তারা বিপ্লবকে ভয় পায়। ’
অবশ্য ৮৭ বছর বয়সী বাদশা আবদুল্লাহ সৌদিতে বেশ জনপ্রিয়। তিনি শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় স্কুল নির্মাণসহ বিজ্ঞান ভিত্তিক ও ইংরেজি শিক্ষা চালু করেছেন।
২০০৯ সালে স্থগিত করা দুই শতাধিক স্থানীয় সিটিকর্পোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা আবার স্থগিত করা হয়। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর এই নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, নারীরা এবারের এই স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ না পেলেও আগামী নির্বাচনে সেই সুযোগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন বাদশা। বাদশাহর এই মনোভাবকে অনেকে এক ধরণের পরিবর্তনের ইঙ্গিতবহ বলেই বিবেচনা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১১