ক্যানবেরা: ‘উট মারো, গ্রিনহাউস গ্যাস কমিয়ে টাকা কামাও’ অস্ট্রেলিয়াতে এমন ঘোষণা খুব শিগগিরই আসতে পারে। মিথেন গ্যাস উৎপাদনকারী ভিনদেশি এ প্রাণীটি এক শতকেরও বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়া দাপিয়ে বেড়িয়েছে।
ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সরকার উট নিধনের বিষয়টিকে দাপ্তরিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এতে করে বিশ্বউষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিনহাউজ গ্যাস উদগীরণ কমানো যাবে বলে তাদের মত।
অস্ট্রেলিয়াতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বুনো উট রয়েছে। এদের সংখ্যা আনুমানিক ১২ লাখ। এই বিপুল সংখ্যক উট পরিবেশের সমস্যা সৃষ্টি করছে বলে স্থানীয় পরিবেশবিদদের ধারণা।
সরকারের প্রস্তাবনা চলতি সপ্তাহে জনমত নেওয়ার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। এ প্রস্তাব গৃহিত হলে শিকারিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও হয়ত বন্দুক নিয়ে বনে-জঙ্গলে নেমে পড়বেন। কারণ, পরিবেশ দূষণ রোধে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি এ কাজে অর্থযোগও থাকতে পারে বলে প্রস্তাবনায় ইঙ্গিত রয়েছে।
তবে কার্বন বিকিরনের জন্য দায়ী শিল্প উদ্যোক্তারা এ উদ্যোগের ফলে নিজের গা বাঁচানোর একটা অজুহাত পেয়ে যেতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি মাত্র উট বছরে প্রায় ৪৫ কিলোগ্রাম মিথেন গ্যাস উদগীরণ (ঢেকুরের মাধ্যমে) করে। এই পরিমাণ মিথেন গ্যাস বিশ্বউষ্ণায়নের জন্য দায়ী এক মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের সমপরিমাণ। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার (এনভাইরনমেন্টাল প্রোটেকশন অ্যাজেন্সি) হিসাব মতে, এ পরিমাণ মিথেন গ্যাস একটি কার গাড়ি বছরে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ করে তার ৬ ভাগের এক ভাগ।
কার্বনমুক্ত এলাকার ব্যাপারে একটি বিল আগামী বুধবার অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের প্রতিনিধি কক্ষে উত্থাপন করা হবে। ভোটে পাস হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি আইনে পরিণত হয়ে যেতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংসদ সচিব মার্ক ড্রেফুস বলেন, এ প্রস্তাবনা দেশের বনাঞ্চলগুলো একেবারে উট মুক্ত করবে বলে তার বিশ্বাস।
১৮৪০ এর দশকে পরিব্রাজকদের মাধ্যমে উট প্রথম অস্ট্রেলিয়াতে আসে। পরে এ জন্তুটি এতোটাই বিস্তৃতি লাভ করেছে যে বর্তমানে তা রীতিমতো একটি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
খাদ্যের জন্য উটগুলো এখন ভেড়া এবং গরু-ছাগলের প্রতিযোগীতে পরিণত হয়েছে। প্রায়ই এরা আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ে। এমনকি পানি খেতে মানুষের গোসলখানায় পর্যন্ত চলে যায়।
কার্বনমুক্ত এলাকা গঠনে তিনটি প্রস্তাবের মধ্যে বুনো উট নিধন একটি। এছাড়া শিল্পকারখানার দুষণকারীদের প্রতি টন কার্বন নিঃসরনের জন্য আলাদা কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে এ আইন কার্যকর করা হবে।
২০২০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপাদনের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১১