ঢাকা: বরাবরের মতোই দুই যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবর তৎক্ষণাৎ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে বিশ্বমিডিয়া।
শনিবার (২১ নভেম্বর) দিনগত রাতে দণ্ড কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবর প্রচার করে যুক্তরাজ্যের বিবিসি, রয়টার্স, যুক্তরাষ্ট্রের এপি, ইয়াহু নিউজ, ফ্রান্সের এএফপি, ফ্রান্সটোয়েন্টিফোর, কাতারের আল জাজিরা, ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইট টাইমসের মতো সংবাদমাধ্যমগুলো।
তবে, এ খবর প্রচারের ক্ষেত্রেও শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের ন্যক্কারজনক অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও বিবিসি, এপি, এএফপি ও আল জাজিরার মতো সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের অপরাধ কৌশলে কম প্রচার করে রাজনৈতিক পরিচয়ই বেশি সামনে নিয়ে এসেছে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরপরই এ খবর ব্রেকিং হিসেবে প্রচার করে বিবিসি। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমটি কিছুক্ষণ পরই তাদের অনলাইন পোর্টালের শীর্ষ খবর হিসেবে প্রচার করতে থাকে সাকা-মুজাহিদের ফাঁসিতে ঝোলানোর খবরটি। তবে, তারা এ সংবাদের শিরোনাম করে ‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হলো প্রধান নেতাদের’।
বিবিসির এ খবরে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাধীনতার সংগ্রাম চলাকালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশে বিরোধী দলের দুই নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। ’
প্রতিবেদনে সাকা-মুজাহিদের অপরাধের উল্লেখযোগ্য কোনো বর্ণনা না থাকলেও তাদের রাজনৈতিক পরিচয়টা বড় করে প্রকাশ করে বিবিসি। সেখানে বলা হয়, সাকা ছয় বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং মুজাহিদ সবচেয়ে বড় ইসলামি দলের সেক্রেটারি জেনারেল। এছাড়া, সাকার বাবার ‘কীর্তি-কলাপ’ ও মুজাহিদের আত্মগোপন থেকে মন্ত্রী হওয়ার খবরও প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।
এক্ষেত্রে ‘প্রত্যাশিত’ভাবেই নগ্ন অবস্থান দেখালো আল জাজিরা। প্রথমে ব্রেকিং হিসেবে প্রচারের পর কাতারের সংবাদমাধ্যমটি তাদের অনলাইন পোর্টালে দ্বিতীয় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করেছে দণ্ড কার্যকরের খবরটি। শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘বাংলাদেশে দুই বিরোধীদলীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর’।
আল জাজিরার প্রতিবেদনের প্রথম দুই প্যারায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ক্ষমা না পাওয়ায় দুই শীর্ষ বিরোধীদলীয় নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করার কয়েকঘণ্টা পর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। ’
যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাকা-মুজাহিদদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও আল জাজিরার প্রতিবেদনের প্রথম দুই প্যারা নিশ্চিতভাবেই বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশে রচিত বলে এর পাঠকদের মন্তব্যেই প্রকাশ পায়।
এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর বাংলাদেশে সহিংসতা নতুন করে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও ‘ভৌতিক’ শঙ্কা প্রকাশ করে আল জাজিরা।
টুইটারে ব্রেকিং হিসেবে দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবর প্রকাশের পর এএফপি তাদের ওয়েবসাইটেও বড় করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন করে। তবে প্রভাবশালী এ সংবাদমাধ্যমটির শিরোনামও ছিল দৃষ্টিকটূ। ‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হলো বিরোধী নেতাদের’ শিরোনাম দিয়ে এএফপি জানায়, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাধীনতাযুদ্ধে সংঘঠিত যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশে বিরোধী দলের দুই জ্যেষ্ঠ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার কিছু সময় পরই এ দণ্ড কার্যকর হয়। ’
যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে মুক্তিযোদ্ধারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও এএফপির প্রতিবেদনে বিষয়টিকে দলীয় তকমা দেওয়ার জন্য বিস্ময়করভাবে দাবি করা হয়, ‘মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকালে কারাগারের বাইরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা উল্লাস প্রকাশ করেন। ’
বিবিসি, আল জাজিরা, এএফপির মতোই দৃষ্টিকটূ সংবাদ পরিবেশন দেখায় রয়টার্সও। সংবাদমাধ্যমটি এ খবরের শিরোনাম দিয়েছে, ‘১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশে দুই বিরোধীদলীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর’।
সাকা-মুজাহিদদের যুদ্ধাপরাধী না বলে বিরোধীদলের নেতা বলে প্রকাশ করা রয়টার্সের প্রতিবেদনে দণ্ড কার্যকরের ফলে সমর্থকদের (যুদ্ধাপরাধীদের) ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার ভৌতিক আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া, অন্য বেশ কিছু সংস্থা বিবিসি, আল জাজিরা, এএফপি, রয়টার্সের মতো কথিত মূলধারার সংবাদ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবেদন ধার নেওয়ায় এ ধরনের নগ্ন অবস্থানই প্রকাশ পেয়েছে তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৫
এইচএ/