ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

এখানে দিন কাটে স্বপ্নহীন

কল্লোল কর্মকার,আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৩ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১১
এখানে দিন কাটে স্বপ্নহীন

ঢাকা: ‘বিদ্যুৎহীন ক্যাম্পে আমাদের স্বপ্নহীন দিন কাটে। এখানে শিশুরাও জন্মায় শরণার্থী নাম নিয়ে।

জীবন ধারণের ন্যূনতম অধিকারটুকু আমাদের নেই। আমরা স্কুলে যেতে পারি না, নেই কোনো স্বাস্থ্য সুবিধা। আমরা জানি না, কবে দেশে ফিরতে পারব। ’ এই মর্মস্পর্শী কথাগুলো শরণার্থী হিসেবে লেবাননে আশ্রয় নেওয়া ১৩ বছর বয়সী ইউসুফ আল লোবানির। কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতার জেরে এমন অনেক ইউসুফ আল লোবানি পাশ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
 
২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবসকে সামনে রেখে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচআর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ীম, গত ১৫ বছরে যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ৪ কোটি ৩৭ লাখেরও বেশি মানুষ শরণার্থী হয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। ২০১০ সালের শেষের দিকে বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা ছিলো ৪ কোটি ৩৩ লাখ।

সংস্থাটির মতে, বিশ্বের মোট শরণার্থীর ৮০ শতাংশই রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এর মধ্যে পাঁচ ভাগের চার ভাগই রয়েছে সবচেয়ে গরীব দেশগুলোতে। এসব দেশের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি শরণার্থী রয়েছে পাকিস্তান, ইরান এবং সিরিয়ায়। তবে বিশ্বের মোট শরনার্থীদের মধ্যে আফগানিস্তানের শরণার্থীই সবচেয়ে বেশি। এরপরেই রয়েছে ইরাক, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সুদানের নাগরিক।

এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর মধ্যে এক কোটি ৫৪ লাখ মানুষ যুদ্ধের কারণে নিজ দেশে ছেড়ে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে নিজ দেশেই শরণার্থী হয়েছে ২ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ।

সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়াতে সহিংস বিক্ষোভ শুরুর পর হাজার হাজার মানুষ মিশর, তুরস্কসহ পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে শুধু সিরিয়াতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ এবং সামরিক বাহিনীর অভিযানে কয়েক হাজার মানুষ পাশ্ববর্তী দেশ তুরস্কে শরাণার্থী হয়েছে। তুরস্ক সরকারের হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা ১০ হাজারের কম নয়।

নূর নামের একজন সিরীয় অন্ত:সত্ত্ব¡া নারী একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশ ছেড়ে পালিয়ে তুরস্কে আসতে না পারলে আমি যেকোনো মুহূর্তে আমি মারা পড়তাম। জীবন বাঁচাতে অনেক কষ্টে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছি। ’

ইউএনএইচআর‘র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সারাবিশ্বে জাতিসংঘের সরাসরি তত্ত্বাবধানে রয়েছে এক কোটি পাঁচ লাখ শরণার্থী। অপরদিকে জাতিসংঘের ত্রাণ এবং কর্মসংস্থান সংস্থার তালিকাভুক্ত রয়েছে ফিলিস্তিনের ৪৮ লাখ ২ হাজার শরণার্থী।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক রাষ্ট্রদূত আন্তনিও গুতিয়েরেসের একটি লিখিত বিবরণ থেকে জানা যায়, শরণার্থীরা তাদের দেশে বিদ্যমান সহিংসতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জীবনের অনিশ্চয়তার কারণে দেশে ফিরতে পারছে না। উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেদের সমস্যা নিয়েই হিমশিম খাচ্ছে। উপরন্তু শরণার্থীরা তাদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে আছে।

তিনি বলেন, ‘শিল্পোন্নত দেশগুলোর উচিত এই ভারসম্যহীন অবস্থা নিরসনে এগিয়ে আসা। ’

বাংলাদেশ  সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।