ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সেলফি উইথ প্লেন হাইজ্যাকার!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
সেলফি উইথ প্লেন হাইজ্যাকার!

ঢাকা: হলিউড চলচ্চিত্র ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’-এর কথা মনে আছে? মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী প্লেনটির আরোহীরা যখন জানতে পারলেন, তারা ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন, তাদের প্রত্যেকের চেহারাতেই আতঙ্ক স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। জীবনে যিনি দু’ফুট উঁচু দেয়ালের ওপর থেকে লাফ দেননি, সেই তিনিও ফাঁক পেয়ে মেঘের ওপর ভাসমান প্লেনটি থেকে প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পড়তে বাধ্য হলেন।



শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই প্লেন ছিনতাইকে উপজীব্য করে বহু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। যার একটিতেও ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে কারোর মুখে হাসি ফোটার দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে যুগটা চলছে সেলফির। কাজেই আতঙ্কে মোড়া এমন পরিস্থিতিতেও হাসি ফুটতে পারে কারো কারো মুখে। হাজার হোক গোমড়া বা ভয়ার্ত মুখে তো সেলফি আর তোলা যায় না!

ওপরের কথাগুলো পড়ে যে কারোরই হয়তো ভ্রু-কুঁচকে উঠতে পারে। কোথায়, কে এমনটা ঘটালো ভেবে মস্তিষ্কে বয়ে যেতে পারে চিন্তার ঝড়।

গত মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) মিশরে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে কায়রো উড়ে যাওয়ার সময় ইজিপ্টএয়ারের যাত্রীবাহী প্লেন ছিনতাইয়ের ঘটনা এখন প্রায় সবার জানা। সাইপ্রাসে বসবাসরত সাবেক স্ত্রীকে এক নজর দেখার মানসে সাইফ আল দিন মুস্তফা নামের ছিনতাইকারী কথা না শুনলে তার সঙ্গে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটাবেন হুমকি দিয়ে পাইলটকে বাধ্য করেন ঠিক উল্টো রুটে উড়ে যেতে।

এমন পরিস্থিতিতে সবারই শিরদাঁড়া বেয়ে হিম প্রবাহ বয়ে যাওয়ার কথা। মুক্তির আশায় নিজের ভেতরই ছটফট করার কথা। মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নাম জপ করার কথা। কিন্তু এসবের কিছুই করলেন না ২৬ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক বেন ইনস।

সাইপ্রাসের বন্দরনগরী লারনাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেনটি অবতরণের পর চার বিদেশি নাগরিক ও ক্রুদের আটকে রেখে বাকি যাত্রীদের নেমে যেতে দেন ছিনতাইকারী সাইফ আল দিন মুস্তফা। এই বিদেশি বন্দিদেরই একজন বেন ইনস। আরেদিনে বসবাসরত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক এই অডিটরের কর্মস্থল লিডস-এ। তিনি সেদিন দাফতরিক সফর শেষে ইজিপ্টএয়ারের ছিনতাই হওয়া প্লেনটিতে চেপে ঘরে ফিরছিলেন।

তবে তাই বলে চট করেই এই ব্রিটিশ নাগরিককে উন্মাদ বলা যাবে না। এভাবে সেলফি তোলার ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ছিনতাইকারী সাইফ আল দিন মুস্তফা যখন তাকে বন্দি করেন, তখন তিনি এ সেলফিটি তুলেছেন।

কেন তিনি সেলফিটি তুলেছিলেন, তার ব্যাখ্যা বেনের বরাতেই জেনে নেওয়া যাক। তিনি বলেন, বন্দি করার পর আমার মনে হলো, তার সঙ্গে থাকা বোমাটা যদি নকল না হয়ে থাকে, তবুও এক্ষেত্রে আপাতত আমার হারানোর কিছু নেই। কাজেই কাছ থেকে যদি একটা ছবি তোলা যায়, তাহলে অন্তত বোমার প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যাবে।

তিনি বলেন, লারনাকায় অবতরনের পর প্রায় সবাইকে মুক্তি দেওয়া হলো। আমাদের সময় কাটছিল অপেক্ষায়। হঠাৎ মাথায় আসলো ছিনতাইকারী যদি বোমার বিস্ফোরণ ঘটান, তাহলেও আমাদের কারোর কিছু করার নেই। সঙ্গে সঙ্গে একজন এয়ারহোস্টেসের মারফত তাকে আমি বললাম, একটা সেলফি তুলতে চাই। মুস্তাফা শুধু মাথা ঝেঁকে সায় জানালো। আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে একটা হাসি দিলাম আর একজন স্টুয়ার্ড ছবিটা সেলফি ভঙ্গিতে তুলে দিলেন।

বেন আরো বলেন, ছবিটা তোলার পর কাছ থেকে মুস্তাফার শরীরে আঁটা বোমাটা দেখার সুযোগ হলো আমার। খুটিয়ে দেখে মনে হলো, বোমাটা নকল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার আসনে ফিরে গেলাম এবং করণীয় ভাবতে শুরু করলাম।

বোমার প্রকৃতি না জেনেই সেলফি তোলাটা নিঃসন্দেহে দুঃসাহসিক, বলছেন অনেকে। তবে এমন ভয়ার্ত পরিস্থিতিতে বেনের মুখে হাসি ফুটলো কি করে, তা অবশ্য কারোর মাথাতেই ঢুকছে না। এর স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা তিনি নিজেও দেননি।

সে যাই হোক, যে বোমার জন্য বেন এতকিছু করলেন, সেটা পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়। স্রেফ ভয় দেখিয়ে কায়রোগামী প্লেনটিকে সাইপ্রাস নিয়ে চলে গিয়েছিলেন সাইফ আল দিন মুস্তফা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার। প্লেন থেকে পালানোর সময় তাকে পাকড়াও করে সাইপ্রাস পুলিশ। সাবেক স্ত্রী দর্শন না হলেও আপাতত শ্রীঘর দর্শনে রয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।