ঢাকা: শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে তাকে যে খেতাব দেওয়া হয়, এ নিয়ে কখনোই বিতর্ক হয়নি, হয়তো হবেও না। বিশ্বের অবিসংবাদিত সেরা ক্রীড়াবিদ সেই মুহাম্মদ আলী শনিবার চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
মুহাম্মদ আলী একমাত্র মুষ্টিযোদ্ধা যিনি তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নের শিরোপা জয় করেন। তিনি মোট ৬১টি মুষ্টিযুদ্ধতে অংশ নিয়ে জিতে নেন ৫৬টিতেই।
এমন সেরা ক্রীড়াবিদ হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে মুহাম্মদ আলীর অভিমানী, জেদি, ক্ষ্যাপাটে ও উদার ব্যক্তিত্বের পরিচয়ধারী ছোট ছোট গল্প। সেই গল্পগুলোই তুলে ধরছে বাংলানিউজ।
জন্মেছিলেন ক্যাসিয়াস ক্লে হয়ে। ১৯৬৪ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তিনি নিজের নাম রাখেন মুহাম্মদ আলী। শৈশবে বক্সার সুগার রয় রবিনসনকে আইডল হিসেবে মানতেন ক্যাসিয়াস। সেসময় তিনি একটি আয়োজনে রবিনসনকে কাছে পেয়ে একটি অটোগ্রাফ আবদার করেন। কিন্তু অনেকটা রাগান্বিত স্বরে রবিনসন বলেছিলেন, ‘অটোগ্রাফ দেওয়ার মতো সময় আমার নেই’। এই কথাটি খুদে ক্যাসিয়াসের মনে অনেক দাগ কেটেছিলো। তারপর থেকে তিনি বেঁচে থাকা অবধি অটোগ্রাফ দেওয়ার ব্যপারে কাউকে নিরাশ করেননি। আইডলের অটোগ্রাফ না পাওয়ার কষ্টের কথা তার চেয়ে বেশি আর কে বুঝতো? মুহাম্মদ আলী তার ভক্তদের জন্য চিঠির মাধ্যমে অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য আলাদা পোস্ট অফিসের ঠিকানাও দিয়েছিলেন।
তখন তার বয়স ১২ বছর। ক্যাসিয়াস লাল-সাদা রংয়ের একটি সাইকেল উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তার ওই সাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। এজন্য তিনি শরণাপন্ন হন স্থানীয় পুলিশের কাছে। সেখানকার পুলিশ কর্মকর্তার নাম ছিলো জো মার্টিন। ওই মার্টিন আলাপে আলাপে আলীকে বক্সিং জগত সম্পর্কে জানিয়ে দেন। ধীরে ধীরে বক্সিংয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে ক্যাসিয়াসের। সাইকেল ফেরত না পেলেও সেই ক্যাসিয়াস হয়ে গেছেন শতাব্দীর ‘দ্য গ্রেটেস্ট’।
একবার বিংশ শতাব্দীর ‘রক অ্যান্ড রোল’ মিউজিকের রাজা খ্যাত এলভিস প্রেসলি উপহার হিসেবে মুহাম্মদ আলীকে একটি পোশাক দেন। ওই পোশাকটির পেছনে লেখা ছিলো ‘দ্য পিপলস চ্যাম্পিয়ন’। আলীও ওই পোশাকটি গায়ে জড়িয়ে পরবর্তী একটি মুষ্টিযুদ্ধে অংশ নেন। কিন্তু সেখানে হেরে বসেন তিনি। তারপর আর ভুল করেও সেই পোশাক গায়ে জড়াননি আলী। তিনি মনে করতেন, পোশাকটি তার জন্য দুর্ভাগ্যের প্রতীক।
ঘটনাটি ১৯৬০ সালের। তখন রোমে অলিম্পিক চলছে। সেখানে তিনি ‘লাইট হেভিওয়েট’ প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জেতেন। এরপর দেশে ফেরেন আলী। এরমধ্যে কোনো কারণে তাকে একটি নৈশভোজের অনুষ্ঠান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানস্থল থেকেই আলী চলে যান অহিও নদীর কাছে। রাগে-দুঃখে তিনি তার অতি প্রিয় পদকটি ছুড়ে ফেলে দেন নদীতে। তিনি সেসময় বলতে থাকেন, যে দেশের মানুষরা তাকে পছন্দ করেন না, সে দেশে পদক পরে কী লাভ? পদকটি আলীর অনেক প্রিয় ছিলো। ছুড়ে ফেলার আগ পর্যন্ত পদকটি সবসময় গলায় পরে থাকতেন আলী।
১৯৬৩ সালে তখন তার বয়স ২১। তিনি নিজ কণ্ঠে বেন ই’র ‘স্ট্যান্ড বাই মি’ নামে গানটি গান। সে গান অ্যালবাম আকারে প্রকাশ হয় ১৯৬৪ সালে। গানটি জনপ্রিয়তার দিক থেকে চার্টের ১০২ নম্বরে চলে আসে। একই বছর তিনি ‘আই অ্যাম দ্য গ্রেটেস্ট’ শিরোনামে গানের অ্যালবাম বের করেন। ওই গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে সেসময়।
পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার কারণে ১৯৬৪ সালে আলী সৈনিক জীবনে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। তবে দুই বছর পর ১৯৬৬ সালে ঠিকই তিনি যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে। কিন্তু এর পরের বছর ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনামের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে সেখানে যেতে অস্বীকৃতি জানান আলী। যুদ্ধের বিরোধিতায় তার এ সিদ্ধান্তে আলীর বক্সিংয়ের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। সঙ্গে হয় পাঁচ বছরের জেল এবং সেসময়কার ১০ হাজার ডলার জরিমানাও। তিন বছর পর মুক্ত হন তিনি। আবার ফিরে পান তার বক্সিংয়ের লাইসেন্স।
১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এসেছিলেন বিশ্বখ্যাত এই মানুষটি। সে সময় তাকে স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো প্রায় ১০ হাজার মানুষের। সংক্ষিপ্ত ওই সফরে এসেই আলী নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা। বলে গিয়েছিলেন, ‘বাংলাদেশ, আই লাভ ইউ’।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৬
আরএইচএস/এইচএ/
আরও পড়ুন
**বিশ্ববাসীর জন্য যা বলেছিলেন মুহাম্মদ আলী
**সাইকেল চুরির ‘সুবাদেই’ মুহাম্মদ আলীকে পেলো বিশ্ব!
**মুহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া
** মুহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে শেখ হাসিনার শোক
**বিশ্বখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলী আর নেই
** মুহাম্মদ আলী ‘লাইফ সার্পোটে’