ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হেরে যাওয়াই ইরাদা ডনাল্ড ট্রাম্পের!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
হেরে যাওয়াই ইরাদা ডনাল্ড ট্রাম্পের!

শুনতে অস্বাভাবিক মনে হলেও এই প্রশ্ন এখন রিপাবলিকান উর্ধ্বতনদের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে- ডনাল্ড ট্রাম্প কী আদৌ জিততে চান এই নির্বাচনে। নাকি হেরে যাওয়ার ইরাদা নিয়েই তিনি মাঠে ময়দানে প্রতিক্রিয়াশীল বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।

শুধু ঘুরপাকই খাচ্ছে না, এই ভাবনা ক্রমশঃ পাকাপোক্ত হয়ে উঠছে তাদের মনে।

ট্রাম্প যখন নির্বাচনী ক্যাম্পেইন আর জরিপগুলোতে একের পর এক হোঁচট খাচ্ছেন, আর তাতেও যখন তার টনক নড়ছে না, যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তাতেও ভরসা করা যাচ্ছে না, তখন এমনটা না ভেবে আর উপায়ই কি?

ট্রাম্প সমালোচকদের মধ্যে এখন তার পরিচয়টি আত্ম-বিনাশি বলেই চিহ্নিত করা হয়েছে। নিজের বারোটা ট্রাম্প নিজেই বাজাবেন। আর তা স্বেচ্ছায়, এমনটাই ধারনা তাদের।

জিওপি’র দীর্ঘদিনের নেতা রিক উইলসনের কথাই ধরুন। তিনি বলছেন, আমার ধারনা তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন আর এখন সচেতন, অসচেতন উভয়ভাবেই তিনি পালানোর পথ খুঁজছেন।

ব্রায়ান ওয়ালশ নামের আরেক প্রবীন রিপাবলিকানতো আরেক কাঠি বাড়িয়ে বলেছেন, ‘হতে পারে ট্রাম্প আসলে হেরে যাওয়ার চেষ্টাই করছেন। ট্রাম্পের এই কড়া সমালোচক বলেন, ট্রাম্পের ক্যাম্পেইনগুলোতে দেখুন কোনও একটি বিষয়ও কিন্তু স্বাভাবিক মনে হবে না। তাতে প্রশ্ন আসতেই পারে, তিনি কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই হারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ সব কিছুতে তার গোঁয়ার্তুমি আর অযোগ্যতাই ফুটে ওঠে।

তিনি বলেন, আসলে ট্রাম্প ও তার ক্যাম্পেইন এমনসব কিছু করে যাচ্ছে, এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে যা আসছে পুরো প্রক্রিয়াটিকেই জটিল করে তুলছে।

খবর রয়েছে, জুলাইয়ে ট্রাম্প ৮০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল তুলেছেন। কিন্তু টেলিভিশন অ্যাড চালাতেই তার যত অনীহা, রেডিও অ্যাডের ক্ষেত্রেও একই দশা। যেসব এলাকায় তার জয়ের কোনও সম্ভাবনাই নেই সেখানে ক্যাম্পেইনে খরচের বহর বেশ বড়। আর যেসব রাজ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা সেখানে এখনও অফিসটি পর্যন্ত খোলেননি ট্রাম্প। প্রতিদিন ফ্লাই করে কোথাও যান একটা দুইটা জনসভায় উল্টাপাল্টা, বিতর্কিত বক্তৃতা করেন আর রাতে নিউইয়র্কে ফেরেন। নিজের বিছানায় না শুলে নাকি তার ঘুমই হয় না। আর সম্প্রতিতো সমর্থকদের কেউ ডোনেট করতে চাইলে তাদের নিরুৎসাহিতও করছেন নিজেই।

সবচেয়ে কাছের উপদেষ্টা তার পুত্র-কন্যারা। কিন্তু এমন জটিল সময়ে তারা বেড়িয়েছে ভ্রমণে। কন্যা ইভাঙ্কা এখন ভ্লাদিমির পুতিনের কথিত গার্ল ফ্রেন্ড ওয়েন্ডি ডেংয়ের সঙ্গে ছুটি কাটাচ্ছেন ক্রোয়েশিয়ায়। স্টাফদেরও মধ্যে একটা ছাড়া ছাড়া ভাব লক্ষ্যনীয়।

সাবেক সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা এরিক ক্যানটরের শীর্ষ সহযোগীদের একজন রোরি কুপার এসব নিয়েই তার উদ্বেগের কথা জানালেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প একজন বড় ব্যবসায়ী, সুতরাং বিপণন, যোগাযোগ, বিজ্ঞাপনের লোকদের তার জানারই কথা। তার রিসোর্ট, গল্ফ কোর্স, রিয়েল স্টেটসহ অন্যান্য ব্যবসায় তারা কাজে লাগছে। তাদেরওতো কাজে লাগানো হচ্ছে না।

বরং কেউ কোনও সহায়তার কথা বললে তাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এসব নিয়ে জিওপিতে সন্দেহই দানা বাঁধছে।

ভেতরের কিছু খবর এমনও বের হয়েছে, ট্রাম্প আসলে প্রাইমারিতেই জিততে চাননি। তিনি ভেবেছিলেন প্রাইমারিতে বিতর্কিত কথাবার্তা বলে চারিদিকে হৈচৈ ফেলে দেবেন। তাকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলতে থাকবে। প্রার্থীতার দৌড়ে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় হবেন, কিন্তু আখেরে তার ব্যবসায়ী ফায়দা হবে। ফুলে ফেপে উঠবে তার ব্যবসাগুলো। কিন্তু হিসাব উল্টে গেলো ট্রাম্প নিজেই পেয়ে বসলেন প্রার্থীতা। সে কারণেই এবার শেষ রক্ষা হিসেবে নির্বাচনে হেরে যাওয়াকেই সাব্যস্ত করেছেন।

ট্রাম্প সহযোগীরা অবশ্য এই বক্তব্য মানতে নারাজ। তারা বলছেন, না এমনটা হওয়ার নয়। প্রাইমারি জিতে প্রার্থী হওয়ার জন্য মরিয়াই ছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প।

তবে এখন ক্যাম্পেইনে জোর না দেওয়ার প্রসঙ্গে এই সহযোগীরা কোনও যুৎসই জবাব দিতে পারছেন না। তবে বিভিন্ন স্থানে বিতর্কিত কথা বলে হিলারির জনপ্রিয়তা কমানো যাবে না এটা তারা ভালোই বুঝতে পারছেন।

কেউ তাকে ছেড়েও যেতে শুরু করেছেন। সবাই বুঝতে পারছেন, ক্যাম্পেইনটা ভালো চলছে না। আর যারা টিকেও রয়েছেন, তাদের মধ্যেও এমনই এক মনোভাব যে ট্রাম্প জিতলেন কি হারলেন তাতে কিছুই যেয়ে আসে না।

তবে রিপাবলিকান সমালোচকরা ট্রাম্পকেই দুষছেন। ওয়াল স্ট্রিট ভিত্তিক একজন জিওপি তহবিল সংগ্রাহক ট্রাম্পকে অপরিপক্ক কিশোরের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, তিনি হয়তো জিততে চান কিন্তু বয়োঃসন্ধির বালকের মতোই তার এই প্রত্যাশা।

ট্রাম্পের এই আচরণকে অন্তর্ঘাতমূলকই মনে করছেন এই দীর্ঘ সময়ের তহবিল সংগ্রাহক।       

অন্যরা বলছেন, ট্রাম্প আসলে এই নির্বাচন জয়ের জন্য মানসিকভাবেই যোগ্য নন। মিট রমনির ২০১২ সালের প্রধান নীতিনির্ধারকদের একজন অভিক রয় এমন মত দিয়ে বললেন, প্রাইমারি জিতে যাওয়ার পর যখন সাধারণ নির্বাচনের সামনে পড়লেন, তখন বুঝা গেলো ট্রাম্প আসলে এমন কিছু একটার জন্য প্রস্তুতই ছিলেন না।

সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে যখন তার জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করলো তখন ট্রাম্প এমনভাবে প্রতিপক্ষকে আঘাত করতে শুরু করলেন যে, মনে হচ্ছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাই তার লক্ষ্য, নির্বাচনে জেতা নয়। হিলারির জয়ের সম্ভাবনা দেখে তিনি বললেন, এই নির্বাচনে কারচুপি হবে। তার কাভারেজ নিয়ে মিডিয়াকে যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছেন, রিপাবলিকান নেতাদেরও শুনিয়ে যাচ্ছেন যা মনে চায় তাই। সুতরাং স্পষ্টতই বলা চলে তিনি এখন পালাবার পথ খুঁজছেন। এক আলোচনায়তো নির্বাচনের পর একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে কি করবেন তারও একটা বর্ণনা দিয়েছেন। যা কোনও প্রার্থীর মুখে কখনোই শোনা যায় না।

বাংলাদেশ সময়২০৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
এমএমকে  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।