হারারে: জিম্বাবুয়ের স্বৈরশাসক রবার্ট মুগাবের বিলাস বহুল বিদেশ সফর বাবদ প্রতিমাসে খরচ হয় ২০ লাখ পাউন্ড। অর্থনৈতিক সংকটে জর্জড়িত আফ্রিকার এ দরিদ্র দেশটির বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।
জিম্বাবুয়ের একটি জাতীয় পত্রিকা সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে।
পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে ঘন ঘন প্রমোদ বিহারে প্রেসিডেন্ট মুগাবে দুই হাতে টাকা উড়িয়েছেন। এসব ভ্রমণে তার সফরসঙ্গী থাকে ৭০ জনেরও বেশি।
জিম্বাবুয়ের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পত্রিকাগুলোর মধ্যে একটি দ্য ডেইলি নিউজ এক প্রদিবেদনে জানায়, প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিপত্রে তারা দেখেছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এই বিতর্কিত নেতা বিদেশ সফরে খরচ করেছেন এক কোটি ২০ লাখ পাউন্ড।
যেখানে জিম্বাবুয়ের লাখ লাখ মানুষ তিন বেলা পেট পুরে খেতে পারেন না সেখানে মুগাবে বাজেটে তার ভ্রমণবাবদ বরাদ্দ করা অর্থের বেশি পরিমাণ ইতোমধ্যে খরচ করে ফেলেছেন।
জিম্বাবুয়ের বেশিরভাগ মানুষের মাসিক আয় মাত্র ৬০ পাউন্ড। দেশটিতে বেকার সমস্যাও ভয়াবহ।
ডেইলি নিউজ আরও জানায়, ৮৭ বছর বয়সী মুগাবে চলতি বছরে দূর প্রাচ্যের দেশগুলোতে কমপক্ষে পাঁচবার ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই সিঙ্গাপুরের একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
সরকারি অর্থ খরচের দিক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মরগান সাভাংগিরাইও অবশ্য প্রেসিডেন্টের চেয়ে কম যান না।
চলতি বছরের মেতে প্রয়াত পোপ জ্যাঁ পল দ্বিতীয়ের আশীর্বাদ নিতে রোমে এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে অনেকবার সফর করেছেন।
এর আগে স্থানীয় গণমাধ্যমে একাধিকবার খবর বেরোয়, জাতীয় বেসামরিক বিমান সংস্থা এয়ার জিম্বাবুয়ের বিমান দিতে প্রেসিডেন্ট প্রায়ই চাপ দিয়েছেন। সংস্থাটির রয়েছে মাত্র ৭টি বিমান।
এছাড়াও চলতি বছরে অনেক বন্ধু-বান্ধব, সহচর এবং নিরাপত্তা রক্ষী সহযোগে বহুবার বিদেশ ভ্রমণে সরকারি মালিকানাধীন চার্টার বিমানও ব্যবহার করেছেন মুগাবে।
পত্রিকাটির দাবি, বিদেশ ভ্রমণ বাবদ যে এক কোটি ২০ লাখ পাউন্ড খরচ করেছেন তা ৬ লাখ এইডস রোগীর ছয় মাসের চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠন করা যেতো।
সাভাংগিরাই ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঐক্যের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। এর পর ছয় মাসের মধ্যেই তিনি বাৎসরিক ভ্রমণবাবদ বরাদ্দকৃত ৩০ লাখ পাউন্ডের মধ্যে ইতোমধ্যে ২২ লাখই খরচ করে ফেলেছেন।
সরকারের দুই শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির এই খরচের হাত দেখে রীতিমত আতঙ্কিত দেশটির অর্থমন্ত্রী তেনদাই বিতি। ভ্রমণে এতো টাকা খরচের কারণে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার আরও দীর্ঘায়িত হবে বলে পার্লামেন্টে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
চলতি সপ্তাহে বাজেট পেশের সময় তিনি জানান, জিম্বাবুয়ে ৪০ কোটি হাজার ৩০ লাখ পাউন্ড বাজেট খাটতিতে রয়েছে।
দেশটির সচেতন নাগরিকরা নেতাদের বিলাস ভ্রমণের খরচ কমিয়ে জনগণের জীবন মান বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১১